গজাননবাবুর সাক্ষাৎকার
[গজানন চৌধুরী দেশের একজন আমআদমি। একসময় বিদেশী কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার থেকে প্রমোশন পেয়ে ম্যানেজার হয়েছিলেন। ভালোই মাইনে পেতেন। চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর এখন কিছুই করেন না। শুধু ফেসবুক নিয়ে মত্ত থাকেন আর উল্টোপাল্টা কমেন্ট মারেন। আর বড়ো বেশি কথা বলেন। ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স যা আছে তার সুদে তার ভালোই চলে যায়। তাঁর সঙ্গেই আজ মুখোমুখি। আমাদের এক-এক প্রশ্নের জবাবে উনি অনেক কথা বলেছেন।]
প্রশ্নঃ আপনার ছেলেমেয়ে ক’জন?
উত্তরঃ এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে দিল্লিতে থাকে, এক মাল্টিন্যাশেনাল প্রাইভেট কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার। মাইনে বছরে এখন এগার লাখ, বিয়ে করাতে এখনো পারিনি। মেয়ে থাকে মুম্বাই, বিয়ে দিয়েছি। জামাই সিঙ্গাপুরে এক কোম্পানিতে পোস্টিং। মেয়েও চাকরি করে ব্যাঙ্কে, এখন মুম্বাইতে একাই থাকে। সবাই দূর্গাপুজোয় এখানে আসবে।
প্রশ্নঃ আপনার স্ত্রীর সম্বন্ধে জানতে চাই।
উত্তরঃ আমার স্ত্রী খুব ভালো। রান্না-বান্না খুব ভালো করে। পরিবারটাকে ধরে রেখেছে। ও মাঝে মাঝে ছেলেমেয়ের কাছে চলে যায়, তখন আমি একা একটু মুশকিলে পড়ে যাই। কোনো কোনো সময় অবশ্য আমিও সঙ্গে যাই। এখানে আমি স্ত্রীকে নিয়ে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাই। শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের বাড়ি বেড়াতে গেলে স্ত্রী খুব খুশি হয়, তাই আমি বেশির ভাগ আমার নিজের আত্মীয়স্বজনদের ছেড়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের বাড়িতেই যাই। ত্রিশ বছর হল আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমরা চুপিচুপি দুজন প্রতিবছর বিবাহবার্ষিকী পালন করি। সেদিন স্ত্রীকে একটা উপহার দিতেই হয়।
প্রশ্নঃ আপনি এখন কী করেন?
উত্তরঃ একসময় কী না করেছি? একসময় সারাদিন শুধু প্রোজেক্ট আর প্রোজেক্ট। অধস্তনদের ধমকে ধমকে প্রোজেক্ট সফলভাবে শেষ করেছি। বস্দের ধমক খেয়ে আবার ব্লাডপ্রেসার বেড়েছে। সেসব অফিসিয়েল পুরনো ব্যাপার আর মনেও রাখতে চাইনা। এখন সকাল বিকেল রাস্তায় বিশ মিনিট হাঁটি। ফেসবুক করি। আর ফেসবুকের যা অবস্থা, আমি যদি কোনো কিছু পোস্ট করি, সেটা লোকে দেখেও না-দেখার ভান করে এড়িয়ে যায়। অথচ কোনো মহিলা যদি কোনো ফটো আপলোড করে বা যদি বলে এইমাত্র চা খেলাম, তাহলে নিমেষের মধ্যে মন্তব্য ও লাইকের হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। আমিও তাই এখন লোকের পোস্টিংগুলি পড়ে পড়ে সব নেগেটিভ দিকগুলি খুঁজি, আর ট্যারাবাঁকা মন্তব্য করি, তর্ক করি। এই ফেসবুক করতে করতে কোনোদিন অনেক রাত হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ এবার আপনাকে শেষ তিনটি প্রশ্ন একসঙ্গে করছি। বিস্তারিত কিছু বলার দরকার নেই, সংক্ষিপ্ত উত্তর দেবেন। আপনি কি সুখী? সুখ জিনিসটা কী? পৃথিবীর প্রচুর লোক অসুখী, আপনি তাদের পাঁচজনকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন?
[এই কথোপকথন হচ্ছিল পাড়ার এক চায়ের দোকানে বসে। আমাদের শেষ প্রশ্ন তিনটি শুনে গজাননবাবু তাড়াতাড়ি তাঁর চায়ের কাপটা এক চুমুকে শেষ করে আমাদের চায়ের কাপসুদ্ধ দাম মিটিয়ে চলে গেলেন। যাবার আগে শুধু বলে গেলেন, আমার একটা কাজ আছে; চলি।]
HOME
এই লেখাটা শেয়ার করুন