আলোচনা

ঈশানকোণ একটি সাহিত্যের ওয়েবজিন এপ্রিল-মে-জুন ২০১৮ ইং

[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]

বই/পত্রপত্রিকা/অন্যান্য বিষয়

বিভূতিভূষণের আরণ্যক
সদানন্দ সিংহ

ভারতের সাহিত্য আকাদেমি বিভূতিভূষিণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরণ্যক উপন্যাসকে বাংলাভাষায় রচিত দশটি শ্রেষ্ঠগ্রন্থের মধ্যে স্থান দিয়েছেন। সাহিত্য আকাদেমির দ্বারা আরণ্যক ভারতের বিভিন্ন ভাষা যেমন ওড়িয়া, তেলেগু, গুজরাটি, মারাঠি, মালয়ালাম, পাঞ্জাবি এবং হিন্দি ইত্যাদি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চতুর্থ উপন্যাস আরণ্যক গ্রন্থ প্রথম প্রকাশিত ১৯৩৯ সালে। মানে আমার জন্মের প্রায় দুই দশক আগে।
শৈশব পার হয়ে যখন কিশোর বয়সে প্রবেশ করেছিলাম, তখন থেকেই লুকিয়ে লুকিয়ে বিভিন্ন উপন্যাস পড়তে শুরু করেছিলাম। সেই সময়ই আমি আরণ্যক উপন্যাসটি পড়েছিলাম। পড়ে এত অবিভূত হয়েছিলাম যে পরবর্তীকালে আমি বিভূতিভূষণের প্রায় সব লেখাই পড়ে ফেলেছিলাম কিন্তু আরণ্যক-এর মতো অনূভূতি তৈরি করেনি।
পাঠক হিসেবে আমার তখন মনে হয়রছিল, লেখক নয় – আমিই যেন লেখকের চরিত্রে লিখে যাচ্ছি। আমিই যেন উপন্যাসের নায়ক। অরণ্যের সৌন্দর্য, নির্জনতা, ব্রাত্য জীবনের চরিত্রগুলি এমনভাবে আকৃষ্ট করেছিল যে পরবর্তীকালেও তার প্রভাব আমার জীবনে রয়ে গেছে।
উপন্যাসের পাঠক ও কবিতার পাঠক এক নয়। কবিতার পাঠকরা কবিতার শব্দশৈলী, আবেগ, প্রকাশভঙ্গিমা এবং অন্তর্নিহিত অর্থ কবিতায় খোঁজেন। কবিতার পাঠকের সংখ্যাও সীমিত, যেহেতু রস আস্বাদনে সবাই পারদর্শী নন। তাই কবিতা সর্বজনীন ছাপ ফেলতে পারেনা, এবং যাঁরা কবিতা নিয়ে চর্চা করেন তাঁদের মধ্যেই কবিতা সীমাবদ্ধ থাকে।
অন্যদিকে উপন্যাসের একটা সর্বজনীন ছাপ থাকে। উপন্যাস পড়ার জন্যে কোনো কিছুতে পারদর্শী হওয়ার দরকার নেই, শুধুমাত্র অক্ষরজ্ঞান এবং চোখের দৃষ্টি থাকলেই হল। উপন্যাস পড়তে পড়তে পাঠকেরা চরিত্রের সাথে একাত্ম হয়ে যেতে পারেন। তাই উপন্যাস কালজয়ীর ভূমিকা নেয়।
তাই আমার মনে হয়েছে, আরণ্যক উপন্যাস আমার কাছে গীতা। যে যাই বলুন, আমার কথা থেকে আমি একচুলও পিছাচ্ছি না।

                                                                           HOME

এই লেখাটা শেয়ার করুন