কবিতা

ঈশানকোণ একটি সাহিত্যের ওয়েবজিন এপ্রিল-মে-জুন ২০১৮ ইং

[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]

হিয়া মুখোপাধ্যায়ের কবিতা

প্রতীক্ষা ও প্রার্থনা বিষয়ক


নাবিকস্বভাবে ফিরে আসে

সার্বজনীন রোদ।

উজ্জ্বল বড় উজ্জ্বল হয়ে

ফিরে আসে

ব্লেডের ফলার মত মেঘ।

নির্মম হেমন্তে

এইসব রংবেরং

ও চিৎকারসমূহ পেরিয়ে

তোমার সংসারে

অতর্কিত এসে পড়তে

বড় লোভ হয়।

হাইড্রোথেরাপীর মত

বর্ণহীন বিকেলগুলোয়

আমি য্যানো একা একা

কার কথা ভাবি

আর অবিরত

কড়িবর্গার দিকে

চোখ রাখি।

অথচ তুমি

স্রেফ আন্দাজে

আঙুল সরিয়ে নিচ্ছো।

বিজ্ঞাপনের মত

নির্মল স্বভাবে

হাতে তুলে নিচ্ছো

উৎকট ও ভুতুড়ে বিন্যাস।

আমাকে

যথেচ্ছ অগোছালো করে

তুমি পেরিয়ে যাচ্ছো

গিরিখাতের পর

গিরিখাত।

ক্লাউড কলোনী থেকে

মৃত্যুসংবাদের মত

হাওয়া ভেসে এলে

সমস্ত যোগাযোগই

বড় ব্যর্থ বলে মনে হয়

ইদানীং।

তবু শোকে ও বিগতস্পৃহায়,

ঘুমে ও বিষাদে

বরাবরের মত

তুমি লেগে থাকছো

নাছোড়বান্দা

এস্রাজের মত।

আর তোমার ভিতরে ভিতরে

অসংখ্য বিস্ফোরণের মত

আমি ফুটে উঠতে চাইছি।

আর তোমার ভিতরে ভিতরে

হুইসেলধ্বনির মত আমি

উপুড় করে দিতে চাইছি

থোকা থোকা

রক্তপলাশ গুচ্ছ।

প্রাচীন উপমার মত

ঝলমলিয়ে উঠছে

পারাবতসভ্যতা।

কুক্কুরীসুলভ লোভ নিয়ে

আমি নিভন্ত আলোর দিকে

সরে আসছি।

এবং

যেভাবে দীক্ষায় ও উপশমে

দীর্ঘতর হয়ে ওঠে ছায়া

সেইভাবে

এপিটাফের মত বিমূর্ত ভঙ্গিতে

লিখে ফেলছি

আরো একটি

অকিঞ্চিৎকর কবিতা।


এই যে গত ঊনত্রিশ বছর ধরে

তীব্রভাবে ছাই হতে হতে

আমি অবশেষে সেরে উঠেছি,

পর্ণকুটির আর তুলসীমঞ্চ বিষয়ক

কবিতার কাছে নতজানু হয়ে বসে

শিখে নিচ্ছি বাস্তুবিদ্যা,

শিখে নিচ্ছি নিস্পৃহা

সেইসব শুধু তোমারই জন্য।

বড় ক্লিশে এইসব দিবাবসান।

গত ঊনত্রিশ বছর ধরে

আমি কাজল পড়িনি।

গত ঊনত্রিশ বছর ধরে

সমস্ত পূর্বতন দাগ মুছে ফেলে

আমিও চাঁদের ফলার মত

সপাট হয়ে উঠেছি,

তুমি দেখে যাও।

শান্ত আরো শান্ত হতে হতে

স্থিতধী আরো স্থিতধী হতে হতে

আজকাল আমার আর

কোনো আয়নার কথাই মনে পড়ে না।

বারান্দায় করুণ গালিচার মত

ইজি চেয়ার কেঁপে ওঠে।

কেঁপে ওঠে চায়ের কাপ,

ধারালো চুম্বক ও

রাত্রিকালীন আকুলতা।

অসবর্ণ বিবাহের মত

জ্বলে ওঠে কিউবা সিগার।

যেকোনো গন্তব্যে পৌছতে গেলেই

বাধ্যতামূলক ভাবে

গলি পার হওয়াটা প্রয়োজনীয়।

আমার যাবতীয়

স্বতঃপ্রতিভাত যন্ত্রণা,

লিরিক কবিতা

ও মুষ্টিবদ্ধ হাত পর্যন্ত

পৌছতে গেলেই

অনুপুঙ্খভাবে

গলি পার হওয়াটা প্রয়োজনীয়।

তোমার জন্য

এইসব পরিপাটি আয়োজন

নিয়ে অপেক্ষা করছি আর

খামারবাড়ির মত শীতকাল

ছটফট করে উঠছে।

জানলার শিকে শিকে

ছটফট করছে কৈশোরসুলভ আলো।

এসো দেখে যাও কিভাবে

গত ঊনত্রিশ বছর ধরে

আরোগ্যের মত তুমি

উজ্জ্বল হয়ে উঠছো

আমার ভিতরে ভিতরে।

গত ঊনত্রিশ বছর ধরে

আমার অপেক্ষার মধ্যে

ডালপালা মেলছে

অতলান্তিক আকাশী মিনার,

আরোহীহীন নৌকার মত

আমি দুলে দুলে উঠছি

মৃদু আঘাতেই

সে তো,

যেকোনো অলৌকিক দুপুরের

ঐশী সিঁড়ি বেয়ে

অন্তত একবার,

অন্তত মিথ্যে মিথ্যে,

তুমি নেমে আসবে বলেই।


HOME

এই লেখাটা শেয়ার করুন