কবিতা

ঈশানকোণ একটি সাহিত্যের ওয়েবজিন এপ্রিল-মে-জুন ২০১৮ ইং

[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের কবিতা

অন্তর্বাসের রিংটোন


১.

রাতকে কোকিলে পেয়েছে। বসন্ত

মেখেছে সারা গায়ে। অন্তর্বাস

খুলে রোদস্নানে ডালিয়া ও চন্দ্রমল্লিকা ভোর ভোর। রিংটোন বাজে চোখের অর্কেস্ট্রায়। অসুখের বাইরে ডুব মারি সুখনামা মোহ

মোহ দেহে


২.

পার্কের বেঞ্চিতে শুয়ে আছে হলুদ

পাতার মাঘমাস। তার শিরায় উপশিরায় উপোসীর বারমাস্যা।

বুকের গভীরে ক্ষত। নীলাভ

আলোয় পাণ্ডুর। আশ্চর্য তবুও

নড়ে। পাশ ফিরে শুলে চোখে

ভাঁটা লাগে আর ঠোঁটের ভাটিয়ালি

চুপ মেরে যায়


ভাঙা আয়নায় তুমি ছড়ানো। পাথর আকবর বাদশা গলে

যায় ভোরের আনারকলিতে।

জীবন্ত সমাধির থেকে উড়ে আসে

কান্নার ডানা। ছায়ার নাচের

পর তুমির শীতল হয়ে যাওয়া

বোঝে না ময়ুর সিংহাসন


৪.

যমুনার জলে তাজের শ্রমিকের

কাটা আঙুলের আর্তনাদ। ফ্যাকাশে

মার্বেলের মুখ জোছনার গা ছুঁয়ে।

নিঃসঙ্গ প্রেমের আত্মা মুক্তির

পিয়াসী কালো শ্যাওলায়। পাষাণেরর ক্ষুধা মেহের আলিকে জাগায়। তফাতে পাখির বাসায় ডিম ফোটে। নতুন অতিথির কিচিরমিচির যেন আরেক নতুন ইতিহাস


৫.

শামুকজীবনে চলে যায় দেয়ালে

দেয়ালে। লেখা দেখি। সে দেখে।

তাকে খুলে দিলে লজ্জা নেই। সে

জানে বিবাহিত মানে। পাঁজাকোলা

করে তাকে তুলি। তুলি রঙে ভরে

যায়। আলাদিনের দুপুর প্রদীপ জ্বালিয়ে সাধ মিটিয়ে নেয়। শুঁড়

বার করে পাতার সাথে আলাপ

মাঝে মাঝে। তারপর ভিতর ঘরে

আলাপন নিজের সাথে একা আবার

যুদ্ধও


৬.

কুড়াল নিয়ে ঘুমিয়ে আমার আমিষ

চোখ। বল্কলের নীচে তুমি রেখেছ

মাংস ও দুধ। ধারালো স্বপ্নে তাদের

ছিঁড়ে খাই। পাতা পাতা মরমিয়া

কথা ওড়ে। পাখির সংসার আছড়ে ব্যথা ওঠে শিকড়ের। মাটিকে বোঝাতে পারি না আমার ভয়ঙ্কর

খিদে আর মন সে তো লোহার

চাদরে মোড়া কঠিন নির্জীব


৭.

শোকার্ত ভোরটির মুখে চাইতে

পারি না। রোদ্দুরের অভাব পাই।

শীতের পোশাক হেঁটে যায় কিছুটা

ফিকে। ভাঙা স্বরে ভরে আছে বাতাস। বসন্তের দেবীটি গলে জল।

বাঁশবনে পড়ে থাকা তার ছেঁড়া

ওড়নায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে ভাঙা

ঘট। ঘটনা যাই হোক না কেন যেন

আজ পাড়ায় অরন্ধন


৮.

নিভে আসছে বিকেল পার্ক। কাঁটাঝোপে পড়ে আছে সন্ধ্যার

ডিম। মৃত শিশুটির মুখ কুয়াশায়

মাখা চারার উপর। নির্জনতার রঙ

ধূসর। বিলে নেমে আসা পরিযায়ী

উড়োজাহাজ সাজ পরে নেয়। আকাশের লণ্ঠনটি দুলে যাচ্ছে

মৃদু ছায়ার পাশে আর ফিরে আশা

শুকনো ডালের ওপর গাছের শীতল শ্বাস


৯.

এ দেশের ভূগোলে কেঁদে উঠেছে দিন। লাঙলের ফলায় কুরুক্ষেত্রের রক্ত। ধর্ষিতা মাটিকে বলতে পারছে না কংক্রিট হয়ে যাও। উপবাসের বাস ছড়িয়ে পড়ছে। বাসাগুলি লালন করছে পাথর আর মানিপ্লান। পরজীবী লতারবাড় শুষে নিচ্ছে রস। রসিকতা হারিয়ে পড়ে আছে নীরস নিরসনের কোনো উপায় নেই জেনে। মেগাসিরিয়ালের গল্প স্বপ্নের হাট খুলেকেড়ে নিচ্ছে একটা আস্ত তুমি আর ক্রমশ বিষাক্ত এক ছোবল নীল করে দ্যাখো দুর্বাদলশ্যাম

বিশ্বরূপের আসরে মেতেছে


১০.

খেয়ালে বেখেয়ালে চাঁদ বারান্দায়

ভালোবাসা। তরুণীর সে পসরায়

হাত রাখি। খিদে চাগিয়ে ওঠে। ঠেলে দি ক্রমশ নিন্মাঙ্গ। গমনের

এই পথ বর্ণাঢ্য। তুলসিপাতায় ভেজা মুখোশটি ছেড়ে রঙিন

মাছটি কাচের অন্তর্বাসটি অ্যাকুয়ারিয়ামের ছিঁড়ে ফেলে। সে

জোছনায় আঁশগন্ধ মাখি। সে কুঠুরি

একা ভোগ করি আর দেখি সমস্ত

ভুলের ঠোঁটে ভাসান নাভি পদ্মের


HOME

এই লেখাটা শেয়ার করুন