ছোটগল্প

ঈশানকোণ একটি সাহিত্যের ওয়েবজিন এপ্রিল-মে-জুন ২০১৮ ইং

[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]

মহাসাগরা
নীহার চক্রবর্তী  

ক্লাস সিক্সের ছেলে বাপ্পা ওর স্কুল থেকে একটা শব্দ শিখে এসেছে। চুচুক। সে নিয়ে ওর বন্ধুরা বেশ হাসাহাসিও করছিলো খুব। কিন্তু বন্ধুদের কাছে কিছু জানতে না চেয়ে বাপ্পা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ওর মাকে জিজ্ঞেস করলো সরাসরি।

“আজ একটা নতুন কথা শুনলাম, মা। চুচুক। বন্ধুরা বেশ হাসছিল বলে-বলে। এর মানে কী গো?”
খুব আগ্রহের সঙ্গে বাপ্পা ওর মার কাছে জানতে চাইলো। মা শুনে তো বেশ অবাক।
কিছুসময় ওর দিকে তাকিয়ে শেষে বিরক্তির সঙ্গে বলে উঠলো, “বেশ পেকেছিস না? এসব কথা মুখে আসে কী করে তোর? দাঁড়া তোর বাবাকে সব বলছি।”
তখন বাপ্পা ভয়ে-ভয়ে আমতা আমতা স্বরে মাকে বলল, “আমি পেকেছি কোথাও? আমি তো মানেই জানি না। বেশ বাবাকে বল তুমি।”
বলে বাপ্পা মাথা নিচু করে নিজের পড়ার ঘরে চলে গেলো।

রাতে অফিস থেকে বাপ্পার বাবা বাড়ি ফিরল। বিশ্রামের পর বাপ্পার মা চুচুক-প্রসঙ্গ তুলল তার কাছে। সে শুনে হাসতে থাকে।
বলে, “বেশ শব্দভাণ্ডার বাড়াচ্ছে ছেলেরা। আমার ছেলের এখন মানেটা জানা দরকার।”
তার কথা শুনে বেজায় রেগে গেলো বাপ্পার মা।
সে বলে উঠলো, “তুমি নিজের হাতে ছেলেটাকে নষ্ট করতে চাও বুঝি? এ কেমন কথা?”
বাপ্পার বাবা একচোট হেসে উত্তর দিলো, “আসলে অনেক ছেলেই জানে না স্তনবৃন্ত ব্যাপারটা। এর জন্য কী কী শব্দ বরাদ্দ আছে সেও জানে না। নিপল শেখে অনেক পরে। তদ্দিনে নীল ছবিও কেউ-কেউ দেখে ফেলে। আসলে সব কাম-সর্বস্ব হয়ে ওঠে তখন। মা আর মা থাকে না। তাই মা থাকতে হলে এখন থেকেই জানা দরকার চুচুক মানে কী।”
বলেই সে পাশের ঘর থেকে বাপ্পাকে তার কাছে তারস্বরে ডেকে আনল শব্দটার মানে বোঝানোর জন্য। বেশ ভয় তখন বাপ্পার মনে।
ওর মা রেগে-মেগে উঠে যাচ্ছিলো সেখানে। বাপ্পার বাবা তাকে হাত ধরে বসাল।

বাপ্পাকে পাশে বসিয়ে অনাবিল-হেসে বাবা ওকে বলল, “বেশ শিখে এসেছিস শব্দটা। আমি তো ভুলেই গেছিলাম। আজ আবার তুই মনে করিয়ে দিলি। চুচুক হল...”
সঙ্গে-সঙ্গে বাপ্পার মা তার ঠোঁটে আঙুল রেখে চুপ করতে বলল। কিন্তু বাপ্পার বাবা শোনার পাত্র নয় তখন।
সে হেসে-হেসে বাপ্পার পিঠে হাত রেখে বলতে থাকলো, “তোর বোকা বন্ধুরা এর মানে খারাপ ভেবেছে। তাই তারা হেসেছে। তোর মাও দেখছি জেনেও খারাপ কিছু ভেবে ভয় পেয়ে গেছে। আসলে মায়ের বুকে যে দুধ খেয়ে বড় হয়েছিস এতদিনে সে তার বৃন্ত। মানে বোঁটা। স্বর্গের মন্দাকিনীর ধারা এখান থেকেই আসে। সে শুধু ধারা তো নয়। মহা-অমৃত। এই আর কি।”
বাবার কথা শুনে সাথে-সাথে বাপ্পার সারা মুখে খুশির জোয়ার খেলে গেলো। যারপরনাই অবাক আর বিরক্ত বাপ্পার মা একটু-একটু ক'রে অনেকটাই হেসে ফেললো।

বাপ্পার বাবা একবার বাপ্পার দিকে পরম তৃপ্তির হাসি হেসে একপলক তাকাল। তারপর তাকাল বাপ্পার মার দিকে। কিন্তু তখন তার চাউনিতে ছিল বেশ অবজ্ঞা। তারপরেই সে বাপ্পার হাত ধরে পাশের ঘরে চলে গেলো।
যেতে যেতে সে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো বেশ রাগো-রাগো মুখে, “মা-ই হয়েছ তুমি। আজো নিজের মাহাত্ম্য তুলে ধরতে শেখোনি সন্তানের কাছে।”
বাপ্পা কান পেতে শুনতে চাইলে সে শিশু-সাদা হাসি হেসে ফেলে বলল, “সময় যে কত বদলেছে, সে আমরা কতজন জানি বা বুঝি।”
বাপ্পার মাথায় হাত রেখে সে হাসিমুখে ঘরে ঢুকল।
                                                                                                                                     HOME

এই লেখাটা শেয়ার করুন