ভৈরবী
সদানন্দ সিংহ
“এই যে, এই প্রথম মাদুলি হচ্ছে রূপোর তৈরি। এটা খাবার জলের গ্লাসে ডুবিয়ে জলটা দিনে দুবার সকাল-বিকাল বা রাত্রে খাইয়ে যাবেন যতদিন না উপকার পাচ্ছেন। দ্বিতীয় মাদুলিটা তামার তৈরি। এটাও আগের মত করে খাওয়াবেন, তবে শুধু সাতদিন, দিনে মাত্র একবার যে-কোনো সময়ে। সাতদিন পর মাদুলিটা কোনো ঠাকুর-দেবতার আসনে তুলে রাখবেন। আর তৃতীয় মাদুলিটা লোহার তৈরি। যে তোষকে আপনার স্বামী শোয় সেই তোষকের নিচে নাভির অবস্থানে রেখে দেবেন। ইচ্ছে করলে তোষকের ভেতরেও ঢুকিয়ে রাখতে পারেন। ঠিকঠাক করে যেতে পারলে উপকার নিশ্চিত। আর হ্যাঁ, আপনি চারদিন আগে পাঁচশ টাকা দিয়েছিলেন। এখন দেবেন আড়াই হাজার টাকা।”
কথাগুলি বলে ভৈরবী থামে। ভদ্রমহিলা মাদুলি তিনটিকে নিয়ে কপালে ঠেকায়। তারপর টাকা বের করে ভৈরবীকে দেয়।
ভদ্রমহিলা একসময় আস্তে আস্তে চলে যেতে থাকেন। ভদ্রমহিলার সমস্যা গুরুতর। তার স্বামী নাকি এক বিবাহিতা মহিলার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। এই ধরনের লোকেরাই ভৈরবীর কাছে বেশি আসে। এইসব মাদুলি থেকে তার আয়ও খারাপ না। তার স্বামীর আয় থেকেও বেশি। স্বামী এক ট্রাক মেরামতির দোকানে কাজ করে। দিকে দিকে এখন অনেক গাড়ি মেরামতির দোকান, তাই সব দিন কাজ পাওয়াও যায় না। তাদের দু ছেলেও স্কুলে পড়ে।
আগে ভৈরবী এমন ছিল না। আজ প্রায় পাঁচ বছর হল মাথায় এক জটা এবং কপালে এক বিরাট সিঁদুর নিয়ে বর্তমান ভৈরবীতে পরিণত হয়েছে। বাঁশ-টিনের তৈরি ঘরের বারান্দার এক কোণে তার মন্দির তৈরি হয়েছে। মাদুলির ভেতরে কিছুই থাকেনা। থাকে শুধু পুজোর ফুল, তারপর তরল মোম ভর্তি করে মাদুলিটাকে বন্ধ করে দেয়। এটা বিক্রি করেই এখন সংসারটার হাল ফিরেছে।
এখন এই দুপুরবেলা বাড়িতে কেউ নেই। ঘরে ঢুকে ভৈরবী আয়নায় নিজের মুখটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। লাল শাড়ি, কপাল ব্যাপী সিঁদুর আর জট বাঁধা চুলের মাঝে নিজেকে দেখতে তার বেশ খারাপই লাগে। লোক ঠকানোর মাদুলির ব্যবসাটা আসলে তার ভালো লাগেনা। স্বর্ণের হার একটা তার পরার খুব শখ। সঙ্গে ঝুমকা। আর একটা বেনারসি শাড়ি। ইস এই ইহজীবনে সেটা কী করে সম্ভব? একটা উপায়ের জন্যে ভৈরবীর মন আনচান করতে থাকে।
HOME
এই লেখাটা শেয়ার করুন