বেহুলার গল্প
সুদীপ্ত মন্ডল
বেহুলা ফিরিয়েই দিলো সেই ভদ্রলোক বাবুটিকে। বলা ভালো সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলো। সে গরিব হতে পারে। সংসারে অভাব আছে, বিছানায় পরে থাকা বাকশক্তিহীন স্বামীও আছে। তা বলে সে আত্মমর্যাদাহীন না একেবারে।
অতনু কাজ করতো মিলে। ভালোই চলে যেত তাদের। ছোট্ট একচিলতে সংসার, একটি বাচ্চা তাদের। যাকে বলে সোনার সংসার। কিন্তু একদিন সেই সুখের সংসারে বিপর্যয় নেমে এলো।
সেদিন কারখানায় নাইট সিফটে কাজ ছিল। অতুন সেরিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। তারপর থেকেই পঙ্গু একাবারে। মিল মালিক সামান্য কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল বটে। তা চিকিৎসাতেই খরচ হয়ে গেছিলো। বাবা: সে তো কদিন ধরে যমে মানুষে লড়াই। ডাক্তার কাকা তো বলেই দিয়েছিল অতনু এ যাত্রায় নাও ফিরতে পারে। ফিরলেও সে পঙ্গু হয়ে থাকবে।
অতনু ফিরলো বটে। কিন্তু মিলের কাজ রইল না। সবাই বলেছিল ইউনিয়নের মাতব্বরদের ধরলে বেহুলার একটা কাজ জূটলেও জুটতে পারে। চেষ্টাও করেছিল। হয়নি। সবার নজর ছিল বেহুলার পুরুষ্টু শরীরটার দিকে। মিলে গেলেই সবাই হা করে তাকিয়ে থাকতো। সাহায্য করার অছিলায় নানা ইঙ্গিত থাকতো। বেহুলা বুঝতো সব। কিন্তু সরাসরি কিছু বলেনি কোন দিন। একা মেয়ে হলে যা হয়।
শেষে ডাক্তারকাকুই একটা ছোট বেসরকারি দাতব্য হাসপাতালে আয়ার কাজ জুটিয়ে দেয়। পয়সা কম কিন্তু এখানে বেহুলার সন্মান আছে। তার ওপর ডাক্তারকাকার স্নেহময় শাসন আছে।
আজ নিয়ে দ্বিতীয়বার এল ওই ভদ্রলোক বাবু। বলে, বেহুলা ভেবে দেখতে পারিস। তাছাড়া তোরও একটা হিল্লে হয়ে যাবে। এক তো তোর ওই পঙ্গু স্বামী। আর তোর সাথে ডাক্তার কাকার ভালোই লটরপটর। দেখনা তাকে ফাঁসিয়ে ওই হাসপাতালের জমিটা। রাস্তার ধারে। তোকেও একটা ফ্ল্যাট দেব। বলে বেহুলার দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ বিচ্ছিরি একটা হাসি হাসেন ওই প্রমোটার।
বেহুলা বুঝতে পারে তার চোখের চাহনি। সে এবার কঠিন সুরেই বলে, যান বেরিয়ে যান। আর আসবেন না এ চুলোয়।
বেহুলার যেন নিজেকে সেই ইন্দ্রের রাজসভার বেহুলা মনে হয়। যে তার মৃত স্বামীর জীবন ফিরে পাবার জন্যে নেচেছিল। ইন্দ্র নাচের মুদ্রার আড়ালে সদ্য বিবাহিত মেয়ের যৌবন দেখেছিল নাচের মুদ্রার আড়ালে। বাধ্য হয়ে নেচেছিল। বাকি দেবতারাও দেখেছিল।
আজ এত যুগ পরে যেন বেহুলা প্রতিশোধ নিল ইন্দ্রিয়পরায়ণ ইন্দ্রের, যার ঊর্বশী-রম্ভার নৃত্য দেখেও শরীর দেখার সাধ মেটেনি।
এই লেখাটা শেয়ার করুন