ছোটোগল্প

ঈশানকোণ একটি সাহিত্যের ওয়েবজিন বইমেলা সংখ্যা ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ইং 

[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]

বৃষ্টির আগে
ত নি মা হা জ রা

যতক্ষণ দেখা যায় তাকিয়েছিল ঋতজা। এবার ফিরতে হবে। ইচ্ছে করলে গ্লাস ডোরের বাইরে থেকে উঁকিঝুঁকি মারতে পারতো। কিন্তু তাহলে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারতো না সে। ভীষণ কান্না পাচ্ছিল যে। অভীক আজ ফিরে যাচ্ছে। এই কটা দিন কি যে ঘোরের মধ্যে কেটে গেল। সামনের ট্যাক্সিটায় উঠে পড়ে তাড়াতাড়ি।

কতদিন বাদে দেখা তাদের। সেই ত্রিশ বছর আগে কলেজ জীবনের পর এতদিন বাদে। অভীক কলকাতায় আসছে কাজে। তাই দেখা করার কথা বলেছিল। শ্যামবাজার মেট্রোর গেটের সামনে।

একটু দেরীই হয়ে গেছিল ঋতজার। হন্তদন্ত হয়ে মেট্রো থেকে নেমে হেঁটে এসে ফুটপাতের এককোণে অপেক্ষারত অভীককে এতদিন বাদে দেখে বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠেছিল তার। আবেগে এগিয়ে এসে হাতটা ধরেছিল। এই সেই হাত যা সে ধরে চলতে চেয়েছিল সারাজীবন।

রোদ্দুরে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে লাল লাগছে মুখখানা। আরো মায়া লাগছিল তার জন্য।
হাত ধরে হিড় হিড় করে টানতে টানতে ঋতজা বললো, চল তো একটু ছায়ায় কোথাও দাঁড়াই। ভীষণ ঘেমে গেছিস।
নিজেকে একেবারে ঋতজার হাতে সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়েছে আজ অভীক। বলল, চল কোথায় নিয়ে যাবি।
-- ক্ষিদে পেয়েছে তোর ? বলেছিলি মিষ্টিদই আর পান্তুয়া খাবি। আয় দেখি কোথায় ভালো পাই।
-- কি যে ভালো লাগছে তোর হাত ধরে যেতে। আগে মাটির ভাঁড়ে চা খাব তারপরে মিষ্টি।
লজ্জা পেয়ে হাতটা ছেড়ে দেয় ঋতজা। সত্যি খেয়ালই ছিল না এতক্ষণ হাতটা ধরে আছে সে।

চা খেয়ে সিগারেট ধরালো অভীক।

-- তারপর কুট্টুস কি খবর বল?
-- কি আর দেখতেই তো পাচ্ছিস।
-- কি সুন্দর আছিস রে এখনো। তোর ফুলকো লুচির মতো গাল টা একবার টিপতে ইচ্ছে করছে গুরু।
-- চুপ কর বেশি ফাজলামি করিস না।
-- কেনো বস, আমি কি তোর কেউ নই?

ভারি অবুঝ প্রশ্ন। ঋতজা তাকায় অভীকের দিকে। আইনের হিসেবি চোখ কি হৃদয়ের সম্পর্ককে কোনোদিন পাত্তা দিয়েছে নাকি? তবু সহনশীল হৃদয় মুচকি হেসেছে বার বার। কারণ সে জানে তার জিৎ ভারি অমোঘ আর অনন্ত। সেখানে আইনের দেমাক চলে না।
কে বুঝবে এই দুই আপাত প্রৌঢ় দুই নারীপুরুষের মাঝে লুকিয়ে থাকা কিশোরকিশোরীকে? কি ভীষণ আবেগে যে তার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে আজ অভীককে। এর মধ্যে যে কোথাও কোনো যৌনতা নেই, কলঙ্ক নেই, শুধু আছে আবেগের বহি:প্রকাশ। সেটা কেন বুঝবে না এই সমাজ।
দেখা হলে মা যদি জড়িয়ে ধরতে পারে তার সন্তানকে, ভাইবোনকে, আজ অভীক তার কোনো মহিলাবন্ধু হলে তো কোনো কুণ্ঠা বা বিধিনিষেধ থাকতো না। তবে কেন? সবসময় নারীপুরুষের সম্পর্কটাকে এমন টিপিক্যাল ষ্ট্যাম্প মেরে দেওয়া হয় কেন?

মিষ্টি খাওয়া হয়ে গেলে ব্যাগ থেকে জলের বোতল বার করে দেয় ঋতজা। খেতে গিয়ে ঠোঁটের কোণে এক টুকরো মিষ্টি লেগে আছে অভীকের। রুমাল দিয়ে আচমকা মুছে দেয় সে।
চোখটা কি গভীর হয়ে আসে অভীকের?

-- চল টানারিক্সা চড়বি? বাগবাজার ঘাটে যাবি?

.ট্যাক্সি পার্ক সার্কাস ফ্লাইওভার ক্রশ করলো। মোবাইলটা বেজে উঠলো।

-- চেক ইন করে গেছি রে মোটু। ভালো থাকিস। আবার আসবো। এবার এসে দুজনে আরো বেশিক্ষণ কাটাবো। দূরে কোথাও বেড়াতে যাব। আউট্রাম ঘাটে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ব আর ভিক্টোরিয়ার সামনে ফুচকা খাব।

এবার আর চোখের জল বাঁধ মানলো না। কতদিন ধরে তো থামিয়ে রেখেছে। আজ না হয় একটু বয়েই যাক না, ক্ষতি কি?
                                                                                                                                     HOME

SHARE THIS PAGE!