টেলিফোনে একদিন
বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী
-- কথা দিয়েছিলে চিঠি লেখা চলবে, কথা রাখনি।
-- তার জন্যে কষ্ট পেয়েছি।
-- আমি কিন্তু হেসেছি খুব।
-- আমার কষ্টে তুমি হাসলে কেন ?
-- ঠিকানা দাওনি বলে।
-- ঠিকানা ছাড়া কি চিঠি লেখা যায় না?
-- যায়।
-- তবে, লিখলে না কেন ?
-- লিখে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছি সব।
-- ছিঁড়ে ফেললে কেন ? যা লেখা হয়েছিল, সে তো আমার।
-- জানি, কিন্তু সাহিত্য হয়নি যে!
-- ও, তোমার তো আবার সাহিত্য হতে হবে।
-- আচ্ছা, তোমাদের সেই পুরোনো ঘরটা আছে ?
-- কোনটা ?
-- ঐ লাল টিনের ঘরটা। যেখানে উদাসী হাওয়ায় জানালার পাশে বসে তুমি চাঁদ ধরতে। চিঠি লিখে শব্দগুলো ছড়িয়ে দিতে জোছনায়।
-- সবই অদলবদল হয়ে গেছে।
-- কার ?
-- আমাদের।
-- তাহলে এখন কি তুমি মাটির গান শোনো না। স্নান কর না জোছনায়। ডাকবাক্সের তালা খুলে উড়তে দেখ না পাখির পালক।
-- আমার তো সেই ফ্ল্যাটবাড়ি। পা বাড়ালেই লিফট। লিফট থেকে গাড়ি, গাড়ি থেকে সোজা অফিস, জানালা বন্ধ, এসি চলছে।
-- বাব্বা, বেশ বড়ো পদে আছ। কাজেকম্মে অহংকারে খুব ব্যস্ত থাক বুঝি ?
-- নিজের মধ্যেই থাকি, বেরুতে পারি না, তবুও মাঝে মাঝে কাজের ফাঁকে তোমাকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করে।
-- আমাকে! দেখতে ইচ্ছে করে তোমার? তখন কী কর তুমি?
-- মোবাইল খুলে নামটা একটু দেখে নেই। অদ্ভুত নাম তো! সব্বাই ভুল করে।
-- তোমারও ?
-- না, আমার ভুল হয় না।
-- হ্যালো, যাঃ, লাইনটাই কেটে গেল।
-- হ্যালো।
-- খুব বৃষ্টি হচ্ছে। নদীটা কেমন হাসছে দেখো।
-- হ্যালো হ্যালো...
-- একটা নৌকো ভাটির টানে সাগরের দিকে এগোচ্ছে।
-- হ্যালো, শুনতে পাচ্ছো...
-- দেখো, কচুরিপানার ফুল কি সুন্দর ময়ূরের পাখা লাগিয়ে উড়ছে। ‘কৃষ্ণকলি তোমায় বলি’ গানটা একটু শোনাবে ?
-- কৃষ্ণকলিকে মনে পড়ে তোমার?
-- পড়বে না মানে?
-- কালো বলে ভীষণ মনখারাপ লাগত। তাই আমি তারাশংকরের কবি পড়তে বলেছিলাম। ‘কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কান্দ কেনে’। মনে আছে ?
-- মনে থাকবেনা মানে ? ভালোবাসা কখনো কি হাতবদল হয় নাকি ?
-- এ-কথা তুমি বিশ্বাস করো ?
-- করি। প্রথম প্রেম, না থাক --
-- হ্যালো হ্যালো , যাঃ আবার লাইনটা কেটে গেল।
-- হ্যালো, এখন কিন্তু তোমার কথা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।
-- হ্যালো, তোমার কথা শুনতে ইচ্ছে করছে খুব।
-- হ্যালো...
-- ওফ্! নেটওয়ার্ক বিজি...
-- হ্যালো। হ্যালো।
SHARE THIS PAGE!