দিদার শাড়ি কিংবা ভারতবর্ষ
তৃষ্ণা বসাক
দিদা মারা যাবার পর তার সব শাড়ি মেয়ে, বৌ, নাতনি, নাতবৌয়ের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিল মেজমাসি। মেজমাসি বিয়ে করেনি, দিদার শেষমুহূর্ত পর্যন্ত কাছে কাছে থেকেছে। আমার ভাগে পড়েছিল একটা সাদা শাড়ি। পুরো থান নয়, হালকা বেগুনি রঙের কলকা তোলা সরু একটু পাড়, জমিটা পুরো সাদা, দিদা পুরো সাদা পরে থাকলে মামা-মাসিদের সহ্য হত না।
সেই শাড়িটা এখন আর আস্ত নেই। সেটা থেকে মাঝেমাঝেই একফালি দুফালি করে ছেঁড়া হয়েছে। ধবধবে সাদা কাপড় কত কাজে যে লাগে। কেটে গেলে ব্যাণ্ডেজ, জল ছাঁকা, পুঁটলি করে ফুটন্ত ভাতের মধ্যে মুসুরডাল সেদ্ধ দেওয়া। দামি ক্রকারি মুছে রাখতেও এমন নরম সাদা কাপড় দারুণ উপযোগী।
তাড়াহুড়োর মাথায় নানান হাতে, নানান দরকারে কাটার জন্যে শাড়িটা শুধু ছোটই হয়নি, অদ্ভুত একটা শেপ নিয়েছে। একদিন খুব মুসুরডালসেদ্ধ খাবার ইচ্ছে হল। জিভের মধ্যে লঙ্কা পেঁয়াজ নুন তেল দিয়ে মাখা মুসুরডালসেদ্ধর স্বাদ অনুভব করতে করতে সেদ্ধ বাঁধার জন্যে রাখা সাদা কাপড়ের টুকরোটা খুঁজছিলাম। কিচেন ক্যাবিনেটেই তো রাখা ছিল। পেলাম না। বাধ্য হয়ে আলমারি খুললাম। আবার একটা টুকরো কেটে নিতে হবে। এই তো দিদার শাড়িটা। হাতে নিয়ে চমকে উঠি, এ তো অবিকল ভারতবর্ষের ম্যাপ!
HOME
SHARE THIS PAGE!