অণুগল্প

ঈশানকোণ একটি সাহিত্যের ওয়েবজিন বইমেলা সংখ্যা ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ইং 

[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]

মৈতে পাগলা
সদানন্দ সিংহ

মনমোহন মোটর মেকানিক। সারাদিন খাটুনির মাঝে দুপুরে সে বাড়ি গিয়ে খায়। বাড়ি তার দোকান থেকে খুব একটা দূরে নয়। বাই-সাইকেলে চলে যায়। আজও সে দুপুরে গিয়ে সাইকেলটা দাঁড় করিয়ে ঘরে ঢুকে সাবান দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে রান্নাঘরের দিকে যখন যাচ্ছে তখন মৈতে পাগলা তাকে একপ্রকার ধাক্কা মেরে রান্নাঘরে ঢুকে যায়। আর ঢুকেই মৈতে পাগলা টেবিলের ওপর রাখা খাবারের থালাটাকে টেনে খেতে শুরু করে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে মনমোহনের বৌ বাসন্তী একটা বাটি হাতে ফ্রীজ হয়ে চোখ বড় বড় করে মৈতে পাগলাকে দেখছে। মনমোহনের মেজাজটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। সাধ করে অনেকদিন পর সে সকালে ইলিশ কিনে এনেছিল। সে একটা বেত খুঁজে এনে তা দিয়ে পাগলটার পিঠে ঠাস করে একটা ঘা বসিয়ে দেয় জোরে। বেতের বাড়ি খেয়ে মৈতে পাগলা কঁকিয়ে বলে ওঠে, ওঃ মাগো। আমাকে খেতে দাও না। আলো-জ্যোৎস্না।
মনমোহন বেত নামিয়ে ফুঁসতে থাকে। এই পাগলটা অনেকদিন ধরে এদিকসেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। নোংরা প্যান্ট-শার্ট-দাড়ি-চুল। সবাই ওকে মৈতে পাগলা বলে ডাকে। ও নাকি বাংলাদেশের বর্ডার পেরিয়ে ঢুকেছে। মুখে তার সবসময় দুটো শব্দ শোনা যায়, সেটা হচ্ছে আলো-জ্যোৎস্না। পাগলদের পুলিশ ধরেনা। তাই ও নিশ্চিন্তে এদিকসেদিক ঘুরে বেড়ায়। ক্ষিদে পেলে যখন তখন লোকজনের বাড়িতে ঢুকে যায়।
মনমোহন অপেক্ষা করে পাগলটার খাওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত। গোগ্রাসে খাচ্ছে বলে পাগলটার খাওয়া তাড়াতাড়িই শেষ হয়। তখন মনমোহন আবার বেত দিয়ে পাগলটার পিঠে জোরে আঘাত করে। পাগলটা ব্যথায় ওঃ বলে আওয়াজ করে আর মুখে শুধু বলে, আলো-জ্যোৎস্না।
এইসময় বাসন্তী বলে ওঠে, মেরো না ওকে। ছেড়ে দাও।

কেউ জানেনা, আলো এবং জ্যোৎস্না কে এবং পাগলটার সঙ্গে তাদের সম্পর্কই বা কী ? 
                                                                                                                                     HOME

SHARE THIS PAGE!