দখিন-দুয়ার খোলা
নীহার চক্রবর্তী
‘অনেকবার বলেছি তোকে, হারু। ওই বাড়ির দিকে একদম তাকাবি না। জানিস না ওই বাড়িতে একটা সোমত্থ মেয়ে আছে ? ওর বাবা-মা দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে একটা।’
হারুর মা খুব মেজাজের সঙ্গে বললেও হারু দিব্যি দাঁত বার করে হাসতে থাকলো।
মা ওর হাসি দেখে খুব রেগে উঠে বলল তখন, 'তাহলে দেখছি তোর বাবাকে বলতেই হচ্ছে আমাকে। এমন কেন তুই, শুনি ? আমাদের মান-সম্মান দেখছি আর রাখবি না তুই।’
হারু সাথে-সাথে ওই বাড়ির দিকে আঙুল দেখিয়ে ওর মাকে হেসে বলল, 'বাবাকে বলার আগে একবার ওইদিকে তাকিয়ে দেখো। কি যে অবস্থা।’
হারুর মা ওই বাড়ির দিকে তাকিয়ে খুব অবাক হল। সেই সোমত্থ মেয়েটা ওদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফিকফিক করে হাসছে দুজনের দিকে তাকিয়ে।
তখন হারু মাকে বলল সহাস্যে, 'এই তো অবস্থা। দেখো মেয়ের কায়দা। আমার আর কি দোষ, বল। চল এখান থেকে ঘরে। ওখানে গিয়ে কথা হবে।’
হারুর মা আর একবার এক পলক মেয়েটাকে দেখে একটু বিরক্তি মুখে ঘরে চলে গেলো হারুকে সাথে নিয়ে।
এবার ঘরে বসে হারুর মা হারুকে বোঝাতে শুরু করলো।
পইপই করে বলতে থাকলো, 'সময় ভালো নারে, হারু। এখন সবাই ছেলেদের দোষ দেখে। তাই তোর মেয়েটার দিকে আর না তাকানোই ভালো। আর আমরা তো ব্রাহ্মণ। ওদের সঙ্গে চলে আমাদের ?’
এবার হারু ঘরের খোলা জানলার দিকে তাকাতে তাকাতে আনমনে বলতে শুরু করলো ওর মাকে, 'কি যে অবস্থা গো। আবার সেই মেয়েটা। বারান্দা হল না। এবার ওদের একতলার ছাদ থেকে আমাদের ফলো করছে। মুখে আবার মিষ্টি-মিষ্টি হাসি। আমি হাসলেই বুঝি যত গণ্ডগোল। ধুর... ভাল্লাগে না ছাই। এবার রান্নাঘরে চল।’
হারুর মা সবিস্ময়ে মেয়েটাকে দেখে ভীষণ রকম বিরক্ত হল। অনেকক্ষণ ওদের ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তবে মেয়েটাও আর দেরী করলো না। হাসতে হাসতে নীচে নেমে গেলো সে।
তারপর ঘোর কাটতে হারুর মা হারুকে জিজ্ঞেস করলো, 'হ্যাঁরে হারু। এখন রান্নাঘরে যাওয়ার কী আছে ? একটু আগে খেলি না তুই ? আবার খিদে পেলো নাকি তোর ?’
মার কথা শুনে হারু হেসে ফেলল।
হাসতে হাসতে বলল মাকে, 'না গো। তা নয়। খিদে তেমন ছিল না। ওই মিষ্টি মেয়েটাই খিদে পাইয়ে দিলো। তবে আমিও কম মিষ্টি না। কী বল ?’
ওর মা শুনে খুব মজা পেলো।
মুখে হাসির ছটা নিয়ে জবাব দিলো, 'বেশ দারুণ ব্যাপার তো। এমন করেও বুঝি খিদে পায় ? কে জানে। আর যা বলেছিস। মিষ্টি মেয়েই বটে। দেখা হলে খুব সুন্দর কথা বলে আমার সঙ্গে। তোর বাবারও নাকি ভালো লাগে ওকে। তা বটে। তুই বা কম মিষ্টি কীসের ওর থেকে ? কিন্তু ওর বাবাটাকে নিয়ে খুব ভয়। বড় নেতা। বুঝে গেলে কি করতে কি করে ফেলে কে জানে।’
হারু হেসে উত্তর দেয়, 'কি আর হবে। কিছু একটা হবে। চাকরীর যা বাজার। আমার চাকরীও জুটে যেতে পারে। তাই না ?’
সঙ্গে-সঙ্গে দেখা গেলো হারুর মার সারামুখে খুশীর নিরবিচ্ছিন্ন তরঙ্গ। তখন বোঝাই গেলো তার অসবর্ণ প্রেম আর বিয়েতে কোন আপত্তি নেই। চাকরি বলে কথা। এখন শুধু হারুর বাবাকে একটু পইপই করে বোঝানো।
হারু আর হারুর মা ঘর থেকে বারান্দায় আসতেই দেখা গেলো সেই মেয়ে ওদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। বুঝি কান পেতে আছে কোকিলের কুহুতানের দিকে। খুব কাছের কোন গাছ থেকে সেই সুর ভেসে আসছে।
হারু সেদিকে তাকিয়ে এক-গাল হেসে বলে উঠলো ওর মাকে, 'কি যে অবস্থা।’
মা চোখ গোল গোল করে বলে উঠলো সাথে-সাথে, 'কি আবার অবস্থা। সবই তো ঠিক আছে।’
সাথে-সাথে অট্টহাসিতে ফেটে বলে উঠলো, 'তাহলে বাবা বাড়ি আসলেই ব্যবস্থা ?’
শুনে হারুর মার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। হারুর মুখে তখন আর হাসি ধরে না।
HOME
SHARE THIS PAGE!