মুক্তগদ্য

ঈশানকোণ একটি সাহিত্যের ওয়েবজিন বইমেলা সংখ্যা ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ইং 

[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]

ফেবু
নির্মাল্য কুমার মুখোপাধ্যায়

জনমেজয় কহিলেন, হে মহর্ষে! আপনি কহিলেন যে, কলিযুগে ফেবু নামে মনুষ্য মাঝে এক প্রকার আলাদা প্রজাতি পৃথিবীতে আবির্ভূত হইবেন। তাঁহারা কি প্রকার মনুষ্য হইবেন এবং পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিয়া কি কার্য্য করিবেন, তাহা শুনিতে বড় কৌতূহল জন্মিতেছে। আপনি অনুগ্রহ করিয়া সবিস্তারে বর্ণন করুন।
হে মহারাজ, যাহারা কর্ণে দুটি রজ্জু প্রবেশ করাইয়া একটি মোবাইলে প্রান্ত গুঁজিয়া আহার-নিদ্রা পারিলে মৈথুনকার্য সম্পন্ন করিবার সময়ও উক্ত মোবাইলের উপর ভাগ খুঁটিতে অথবা বৃদ্ধাঙ্গুলি ডলিতে থাকিবে এবং ডাকিলে সহজে শুনিতে পাইবে না তাহারা ফেবু।
হে রাজন, যাহারা পরীক্ষার সময় পড়িতে বসিয়া ঢুলিবে অথচ অন্য সময় কম্পিউটারের সম্মুখে বিস্ফারিত নয়নে জাগিয়া রাত্রি পার করিবে তাহারাই ফেবু।
মহারাজ, যাহারা আপন আপন ছবি আপনার নামের পার্শ্বে না টাঙাইয়া অন্যের ও জগতের যত উদ্ভট বস্তুর চিত্র নিজ নামের সঙ্গে লাগাইবে তাহারাই ফেবু।
যাহারা বিনা দ্বিধায় নারীগণ পুরুষ নাম ও পুরুষগণ নারীর নাম ধারণ করিয়া অন্যের সহিত উদ্ভট সম্পর্ক স্থাপন করিতে উদ্যোগী হইবে তাহারাই ফেবু।
যাহারা ইংরাজি হরফে আপন মাতৃভাষা গড়গড় করিয়া লিখিবে অথচ নিজ ভাষায় লিখিতে অজস্র বানান ভুল করিবে, যাহারা অতি সংক্ষিপ্ততম শব্দে মনোভাব প্রকাশ করিতে গিয়া বাক্যের শব্দের বানানের অর্থের খিচুড়ি পাকাইবে, যাহারা কিছু শব্দকে ভিন্নার্থে প্রকাশ্যে ব্যবহার করিবে, যেমন- কাহারও মৃত্যু সংবাদ পাইলেও 'লাইক' করিবে, যাহারা কে কাকে কতবার সেই অর্থহীন 'লাইক' করিল বা করিল না, তাহার হিসাব রাখিবে এবং সেই কারণে বন্ধুত্ব [সবাই বন্ধু এখানে, শত্রু বলিয়া কিছু নাই] প্রলম্বিত করিবে তাহারাই ফেবু।
জনমেজয় কহিলেন, হে মুনিপুঙ্গব! ফেবুদিগের জয় হউক।
অগ্রে আরও বিবরণ দাও, আমি এই ফেবু বিষয়ে বিশদ জানিতে বড় ব্যাকুলতা বোধ করিতেছি।
মহর্ষে, ইহা সম্পূর্ণ এক নতুন শাস্ত্র যাহার সহিত পূর্বাপর সকল শাস্ত্রের কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য, উভয়ই আছে। ফেবুগণ এই শাস্ত্র বেদ বেদান্ত কোরান বাইবেল ত্রিপিটক গীতার ন্যায় মান্য করে। এই শাস্ত্রের রচয়িতার নাম – মার্ক জাকারবারগ। তর্কে- জুকারবারগ। তিনি ফেবুদের আরাধ্য। ঋষিতুল্য। অবিলম্বে মহর্ষি খেতাব পাইবেন। দেবে ফেবুগণ।
শাস্ত্রটির বিশিষ্টতা হল, শব্দ যে ব্রহ্ম সেকথা সাহেব ভালই অনুধাবন করিয়াছেন। তার সঙ্গে তিনি চিত্রকেও ব্রহ্ম বানাইয়াছেন। একবার একটি জায়গায় ঠিক মত নিক্ষেপ করিলে বাজিমাত। সারা ব্রহ্মাণ্ডে উহা মুহূর্তে তেজস্ক্রিয় বস্তুর ন্যায় ছড়াইয়া পড়িবে। হিরোশিমা হইতে ফুকুসিমা কাহাকেও ছাড়িবে না ।
                                                                                                                                     HOME

SHARE THIS PAGE!