বইপত্র
আলোচনা
অলক দাশগুপ্তের গল্পগ্রন্থ ‘সবুজ বাগানে অলৌকিক রাতে'
অলক দাশগুপ্ত অনেকদিন ধরে গল্প লিখছেন। অনেকদিন আগে থেকেই আমি ওর গল্প পড়ছি বিভিন্ন ম্যাগ বা পত্রপত্রিকায়, কিন্তু একক সংকলন হিসেবে প্রথম এই গল্পগ্রন্থটি আমার হাতে এল। সূচীপত্রানুযায়ী ন’টা গল্পের সংকলন হওয়ার কথা, কিন্তু ভেতরে আটটি গল্প বর্তমান এবং শেয়াল নামক গল্পটি ভেতরে নেই।
এই আটটি গল্পের মধ্যে পাঁচটি গল্পের সূত্রে আছে হত্যা, আত্মহত্যা, ভ্রূণহত্যা।
‘সবুজ বাগানে অলৌকিক রাতে’ গল্পে দেখি তন্ময় ও পরস্ত্রী সারিতার শারীরিক সম্পর্কের উদ্দামতা এবং তন্ময়ের আত্মহত্যার মধ্যেই গল্প শেষ হয় একটা অলৌকিক পরিস্থিতিতে যেখানে আছে এক গভীর রহস্য যা উন্মোচিত হতে কেউ পছন্দ করেনা। এই রহস্য এক প্রাকৃতিক, এই রহস্য এক শারীরিক; যার বেড়াজালে সবাই যেন বাঁধা পড়ে আছে।
‘সে আসে’ গল্পে দেখি বিয়ের আগের ভ্রূণহত্যার প্রভাব বিয়ের পরে (অন্য পুরুষের সঙ্গে) তার জীবনে কীভাবে তাকে এক মানসিক অশান্তির পরিবেশ তৈরি করেছিল এবং মনোবিদের সাহায্যে সে মুক্তি পেয়েছিল।
‘একুটি ফোন কল’ গল্পে দেখি রিটায়ার্ড অবিনাশ তার মেয়ের ফোনের জন্য অপেক্ষারত যে মেয়েকে হত্যা করা হয়েছিল।
‘অন্য সিদ্ধার্থ’ গল্পে দেখি পুত্রের জন্যে এক পিতার আত্মত্যাগ (আত্মহত্যার মাধ্যমে), যার ফলে পিতার চাকুরিটা পাবার জন্যে বি এ পাশ বেকার পুত্রের রঙিন দুনিয়ায় পদার্পণ।
‘একটি তারার কাছে’ গল্পেও দেখি এক আত্মহত্যা। ছোটো ভাইয়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বড়ভাই সন্দীপের অনুসন্ধান যা হাজার তারার ভিড়ে কোনো তারাকে খোঁজার সামিল।
‘অন্নপূর্ণা লাইন হোটেল’ গল্পটা তো একটা গোটা পরিবারের আত্মহত্যার সামিল হওয়ার গল্প যেখানে মা-বোন-ভাই সবাই একসময় যৌনকর্মী ও দালালে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া আছে সুবল নামক এক চালচুলোহীন আহাম্মকের স্কেচ যেখানে সুবল বিশ্বাস করে – পৃথিবী তুমি বড়ো সোন্দর গো (আহাম্মকের একটি দিন) এবং সুখরামের গল্প যা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে এক পদাঘাত (শরশয্যা)।
অলকের প্রায় প্রতিটি গল্পেই একটা গল্প থাকে। থাকে কিছু স্কেচ। চরিত্রগুলিও বেশ বুদ্ধিদীপ্ত। আছে ভাষার কারুকার্য। এই গ্রন্থের গল্পগুলি পড়ার পর গল্পগুলি পাঠকের কাছে তৎক্ষণাৎ শেষ হয়ে যায়না, রেশ হিসেবে পাঠককে ভাবিয়ে তোলে।। আর এখানেই গল্পকারের সার্থকতা। [ -- সদানন্দ সিংহ]
(প্রকাশকঃ অক্ষর পাবলিকেশান। দাম ১৫০.০০)
HOME
SHARE THIS PAGE!