নীরবতা – খুব সকালের গানের মতো
এই বিকেল মাধুকরী বিনয়ের মতো, অনুমতিহীন
শহরের গলির রাস্তায় বিরামহীন আগাছার মতো, স্নান
অনুনয় জড়িয়ে যে হাত জেগে থাকে
সেরকম সারল্যমাখা দোপাটির মতো – দোল খায়।
মানুষ জানে না কখন কোথায় কাকে ফেলে আসে
এইরকম বিকেলে – জলের বুদবুদে ভাসে আকাঙ্ক্ষার মুখসকল
দুঃখ গাঢ় কুয়াশার মতো দক্ষিণ পাহাড় ছুঁয়ে থাকে
হায় দক্ষিণ পাহাড়, তোমার দেহে ছড়িয়ে যাবার
কতো স্বপ্ন ছিলো, ছিলো আকিঞ্চণ মনোভিষা।
অদৃপ্ত হয়ে গেলে শরীর মায়াময় সজলতা জাগে।
এইরকম অদৃশ্য পাহাড়ে, কোন ‘দিক’ মনে থাকে না
কোন ‘দিশা’ বেঁধে রাখেনা তারে
দিশাহীন অকূলপাথার নীরবতার কাছে – সব নিয়ে যায়,
নীরবতা খুব সকালের গানের মতো – একা।
কিছু আর না পাওয়ার নেই
কিছু আর না দেয়ারও নেই
নীরবতা সব নিয়ে গেলে তুমি আর আমি শুধু
একা একা খুব সকালে ধীরে হেঁটে যাই।
স্বপ্নাবিষ্ট সাইকেল
নেমে গেলে তৃষ্ণার জল – শূন্য শরীর জেগে থাকে
অপাপবিদ্ধ ক্ষণ পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে দেখে তারে।
আমরা কি এমন হয়ে যাই! সুতোয় টান পড়লে টুং টুং শব্দে
নিরীহ ভেড়ার পাল পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে যায়।
নিবেদিতা – তোমার ভস্মমাখা দিনগুলি তখন
অজস্র ধন্যবাদের মতো দূর নদীর খুব সরু নৌকোয় তোলে বর্ণময় পাল
বহুদূর পর্যন্ত আলিঙ্গনে বাঁধে রৌদ্র, ধানকাটা মাঠ, পুরনো শ্মশান
যত্নহীন গ্রাম জেগে ওঠে লাউমাচায় আগরের গন্ধে।
ইদানীং সিপাহীজলায় নিস্পন্দ আত্মপ্রতারক সময়
আমাদের বনে ঘুরে বেড়ায়না কোন যুবকের আনন্দময় সাইকেল।
তোমার কথা মনে হলেই – যেমন সব মানুষেরই হয়
আমি নিশ্চুপ বেকুবের মতো পুরোনো মাছের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যাই,
কিনে আনি কাঁচালঙ্কা, ধনে শাক, সবুজ পটল, নির্ভুল সৌজন্যে বৌয়ের জন্যে মিষ্টি পান
এবং –
নিরাপদ সকলের শেষে চারমিনার ধরাই
নতুন কবিতা শোনাতে যেমন তোমাকে ধরিয়েছি কতো কতোবার।
নেমে গেলে তৃষ্ণার জল – শূন্য সময় জেগে থাকে
অপাপবিদ্ধ ক্ষণ পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে দেখে তারে।
তাই বুঝি।
এমন হয়ে গেলে সবাই জেনে যায়।
তবুও বায়োস্কোপের মতো ভেসে আসে অগুন্তি যুবকের স্বপ্নাবিষ্ট সাইকেল
ঈষৎ হেলানো, ঈষৎ দোলানো স্বপ্নাতুর নভে।
সময় অবুঝ হয়ো না
সোনার কলসে নীলপদ্ম লয়ে বুদ্ধমূর্তি হওয়া
ঠিক জানি তোমার জন্যে নয়।
ক্যানটিনের মেয়েটি
ক্যানটিনের মেয়েটি চায়ের গ্লাস নামিয়ে দিয়ে গেলে
বাইরে জানালা দিয়ে কার্তিকের আলো উঁকি দেয়।
এ বছর দুর্গা মেয়েটি বেশ কিছুদিন বাদে
বাপের বাড়িতে সকাল-দুপুর-বিকেল কাটিয়ে চলে গেলেও
শীতের কুয়াশা অতিদূর স্বপ্নের মতোই আশেপাশে
ম্লানমুখে ঘোরাফেরা করে।
আমার হেমন্তের বয়েস খরগোশের মতো কান খাড়া করে
কে আসে কে যায় গুনে গুনে রাখে।
ক্যানটিনের মেয়েটিকেও আজকাল আত্মজা বলে মনে হয়
বাপের বাড়ির আদুরে শুয়ে থাকা, কতকাল তার নেই।
খুপরি ঘর থেকে চায়ের গ্লাশ হাতে, একা একা
হেঁটে গেলে, বাবুরা নিরাপরাধ চোখে, ‘দিয়ে যাও’ বলে
অথবা ‘রেখে যাও’ বলে হেলায় ভাসিয়ে দেয় সময়ের ঢেউ।
মেয়েটির হিমালয় নেই –
নবমীর নিশি নেই –
বম্ভোলা ক্ষমতাবান স্বামী নেই
এমনকি লক্ষ্মীর মতো মেয়েও নেই
সরস্বতীর গন্ধমাখা কাঁচাবয়েস হয়তো ছিলো কিছুটা,
অফুরাণ ক্ষুধায় উলটপুরাণের গান ভেসে বেড়ায়
একা – অন্ধকারে।
মেয়েটি, আরেকবার কী দারুণ স্পষ্টস্বরে বলে ওঠে
বাবু – চা।
রিং মাস্টার
ভয় নেই – চারিদিকে দেখছেন না, বেড়া দেয়া আছে
বেড়া দেয়া খেলার জায়গায়
একটু বাদেই দেখতে পাবেন
চমৎকার মুখোশ পরা রিং মাস্টার।
দেখুন রিং মাস্টারদের পোশাক
চকমকে শহরে যেন দেহাতির চোখ।
দেখুন রিং মাস্টারের হাতের চাবুক
দশবার – দশ দশ করে গুনেই যাবে।
এই দেখো দশ আঙুল
এই দেখো দশ হাত
এই দেখো দশ পদ্মফুল
হাততালি দিন – দেখি রে বাঘ, দাঁত দেখা
হাততালি দিন – এই ব্যাটা সিংহ হাঁ কর
আমার চারিদিকে সুনিপুণ ভোটের বাক্সরা খিলখিল করে
খিলখিল করতে করতে শেষ মাটির উঠোনে
ডিগবাজি খায়। চোখ টিপে ছুঁড়ে দেয় – সুগন্ধ রুমাল
সব্বাই জানে, মদন গুপ্তের পঞ্জিকায় লেখা আছে
এই আশ্চর্য রুমাল দেখাইবা মাত্র
পরস্ত্রী আপনার বশ
প্রণয়ে সাফল্য রস
মোকদ্দমায় জয়লাভ – নিশ্চিত যশ।
সাধারণ ডাকযোগে পাঁচ, স্পেশাল সাত
এক্সট্রা স্পেশাল – মাত্র দশ – দশ।
গৌরাঙ্গ ভৌমিক
সাদা সিঁথির মতো জ্যোৎস্নায়
বালিয়াড়ি ভেঙে উঠে যায় গৌরাঙ্গ ভৌমিক।
গৌর অঙ্গ যার – সে।
আনত নদীর কাছে – প্যান্টের বোতাম তুলে রাখে।
ভর দুপুরে শক্তির সাথ-সঙ্গম হয়ে গেলে
কার কাছে গঙ্গাজল নিয়ে যাবো?
জননী, এই দেখো আমার হাঁটু – নিবদ্ধ করতল
দোপাট্টা দিয়ে হৃদয় জড়িয়ে
তোমার মধ্যেই ফিরে যাবো।
গর্ভের মানুষ কতো ভালো!
সাদা সিঁথির মতো জ্যোৎস্নায়
বালিয়াড়ি ভেঙে উড়ে যায় গৌরাঙ্গ ভৌমিক।
গৌর অঙ্গ যার – সে।
এই লেখাটা শেয়ার করুন