ছায়াচিত্র
বিজয়া দেব
সোমনাথকে চিনতাম। খুব সুন্দর গান গাইত। একেবারে সাদাসিধে খোলামেলা মানুষ ছিল। তারপর সে কোথায় যেন চলে যায়। শহরের উপকণ্ঠে একটা ভাড়াবাড়িতে থাকি। মধ্যবিত্ত ছাপোষা মনের মানুষ আমি। ছোটখাটো একটা চাকুরি করি। তবে গানবাজনা ভালবাসি। ভালবাসি আমার ভাড়াবাড়িতে উঠোনের একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মাদার গাছটি। অকারণে অনেক কিছু ভালবাসি। "সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে" পংক্তিটি বুকে জড়িয়ে ধরি মাঝেমাঝে। মাঝেমাঝে সোমনাথকে মনে পড়ে। মানুষ হিসেবে আমার তেমন কোন মূল্য নেই। ধ্রুবতারার মতো জীবন আমার। রোজ উঠি, রোজ ঘুমোতে যাই। দু'হাত বাড়িয়ে জীবনটাকে আঁকড়ে ধরতে চাই। জীবন ছেড়েছুঁড়ে যায়। রোদ্দুর হতে চাই। চড়ুই পাখির মত আমার এই ছোট্ট জীবনটাকে ঈপ্সিতা ভালবাসে। আমার এই ছোট্ট ভাড়াবাড়িতে ঈপ্সিতার আনাগোনা একমুঠো সোনালি রোদ্দুর যেন। যখন সে আসে শালিকেরা তাদের ডানায় নিয়ে আসে খুশির খবর। আমার উঠোনে তখন মেঘভাঙা রোদ ঝিলমিল করে। চড়ুই পাখি একটি একটি করে খড়কুটো জড়ো করে নিজেদের ঘর তৈরি করতে শুরু করে। ঈপ্সিতা খুব ভালো গান গায়। আর আমি ঈপ্সিতাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখি। পথঘাট জুড়ে মেঘলা দুপুর নেমেছে সেদিন। একটি লোককে ওদিক থেকে এগিয়ে আসতে দেখলাম। লোকটি কাছে আসতেই মনে হলো এ সোমনাথ। অনেকদিন পর দেখা। এবার আমি ঈপ্সিতাকে দেখতে পেলাম। সোমনাথের ঠিক পাশে। সেদিন রোদ্দুর ছিল না। ওরা দুজন ওপাশে আর আমি এপাশে। একা দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর সত্যিই যখন পিছন ফিরে তাকালাম দেখলাম আমার রোদ্দুরহীন ভিজে ছায়াটি অবহেলায় কাত হয়ে একপাশে পড়ে আছে।
HOME
এই লেখাটা শেয়ার করুন