মুখোমুখি

ঈশানকোণ একটি বাংলা সাহিত্যের ওয়েবব্জিন জুলাই-আগস্ট সেপ্টেম্বর ২০১৮ সংখ্যা

লোকটা
সদানন্দ সিংহ

কী নাম দেবো তাকে? রাজীবলোচন ? পদ্মলোচন ? ভীমারাও ? নাকি অজিতাভ ? তার নাকি অজস্র নাম। এ নামগুলি নাকি ভালোবেসে তাকে লোকেরাই দিয়েছে। তা হোক, কিন্তু সে আমার ড্রয়িংরুমে সরাসরি ঢুকে পড়লো কারুর অনুমতি না নিয়েই। আর আমার মতো যাচ্ছেতাই লোকের ওপর সে ভর করার চেষ্টা চালালো। বয়স তার পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ। গায়ে পাজামা-পাঞ্জাবি। চোখে এক কালো চশমা। কাঁধের ঝোলা থেকে এক ঢাউস বিভিন্ন পত্রিকার কাটিং এবং ফটো আর সার্টিফিকেটের বাঁধানো খাতা নাকি বই, কী বলব ভেবে পাইনা।। বহুদিন ধরে এগুলি জমিয়েছে বোঝা গেল। নিজেকে এক পরিত্রাতা বলে জাহির করার চেষ্টা চালালো। বহু লোকের সঙ্গে তার ফটো। বহু লোক তাকে টাইপ করে বা হাতে লিখে সীল-সই দিয়ে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। লোকগুলি ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গার লোক। কেউ সরকারি বড় অফিসার, কেউ ব্যবসায়ী, কেই স্কুল টিচার, কেউ রাজপরিবারের, মানে সাধারণ লোক থেকে কেউকেটা বিভিন্ন ধরনের লোক তাকে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। লোকটা সরাসরি আমার কাছ থেকেও একটা সার্টিফিকেট চাইল। আমি বললাম, আমি এক সাধারণ লোক, আমার সার্টিফিকেট দিয়ে তোমার কোনো লাভ হবে না। আমার কথা শুনে সে বলল, আমি তো লাভের জন্যে সার্টিফিকেট চাইছি না। আপনার সার্টিফিকেট আমি আমার এই বান্ডিলের সংগ্রহের মধ্যে রেখে দেবো।
লোকটি এবার জল খেতে চাইল। আমি ওকে এক গ্লাস জল দিলাম। ঢক ঢক করে খেয়ে নিল। খালি গ্লাসটা টেবিলে রেখে সে এবার আমাকে বললো, আপনাকে আমি একটা পান্নার পাথর দিচ্ছি। এই পাথরটা আংটির মধ্যে ধারণ করে পরবেন। আপনার গ্রহদোষ কেটে যাবে।
আমি হেসে বললাম, আমার কোনো গ্রহদোষ নেই ভাই। কিছুই দিতে হবেনা।
লোকটা এবার নাছোড়বান্দা, কোনো মূল্যই নাকি এখন নেবে না। আমাকে সে দেবেই।
আমি এবার সত্যি কথাই বললাম, ভাই আমার এসবে বিশ্বাস নেই। আমি এসব নিতে পারবো না।
লোকটা আমাকে একটা কাগজে এঁকে গ্রহগুলি কখন কী করে মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে এসব আমাকে বোঝাবার চেষ্টা করল।
বুঝলাম, ওর সঙ্গে আমি যত ‘না না’ করব, তত সে আমাকে বিভিন্ন ভাবে বোঝাবার চেষ্টা করে যাবে। তাই বললাম, আমি এবার বাইরে যাব।
লোকটা এবার আমার কাছ থেকে আবার সার্টিফিকেট চাইল। এবার বলল, ঠিক সার্টিফিকেট না, আপনি শুধু লিখে দিন আপনার সঙ্গে আমার আজ দেখা হয়েছিল আপনার রুমে।
লোকটাকে বিদেয় করার জন্যে আমি তাই লিখে দিলাম। লোকটি চলে গেলে আমি একটু চিন্তায় পড়লাম, ওই কাগজের ওপরে লোকটা যদি আরো কীসব লিখে ফেলে তাহলে তো অনেকের কাছে আমি এক অন্য আমি হয়ে যাবো না? তাড়াতাড়ি আমি লোকটাকে খুঁজতে বাইরে বেরুলাম। দেখলাম লোকটা হাওয়া হয়ে গেছে।   
                                                HOME

এই লেখাটা শেয়ার করুন