ছোটগল্প

ঈশানকোণ একটি বাংলা সাহিত্যের ওয়েবব্জিন জুলাই-আগস্ট সেপ্টেম্বর ২০১৮ সংখ্যা

এই রেলগাড়িটা আটকে দেবো
কিশোর রঞ্জন দে

১৯৬০
দাঙ্গার রাতগুলি একই রকম। ব্রহ্মপুত্রের রাতের কথা, ভয়ের রাতের কথা মনে পড়ে তোমার, মাগো! চারিদিকে ওরা জ্বালিয়ে দিচ্ছে বসতবাটী, জ্যোৎস্না ও আবীর। চা-জমি থেকে উঁচুতে আমাদের বাসভূমি থেকে – জ্বলতে থাকা আগুন দেখা যায়। সে আগুনের অর্থ আমি ও ভাইবোনেরা তখনো বুঝিনা। তোমার ও বাবার চোখে মার্চ মাসের রোদ্দুর নিভে যায়। প্রতিদিন সকালের দু-একটা পরিবার নিহত হবার খবর আসে মৃদু হরিধ্বনির মতো। হল্লা করতে করতে কিছু মানুষ আমাদের দিকে ছুটে আসলে আমাকে তৎক্ষণাৎ কোথায় লুকোতে হবে – জঙ্গলে কোনও গাছের আড়ালে নতজানু হয়ে, টুঁ শব্দটিও করা চলবে না, এসব আমাকে বোঝাতে গিয়ে ব্যর্থ হতে তুমি। শুধু লুকোতে যাবার আগে ক্রীড়াসুখে উত্তেজিত হতাম, ঘুমিয়েও পড়তাম নিশ্চিন্তে।
তোমরা জেগে থেকে হয়তো অসমান রক্তপাতের সাক্ষী হতে, ঘুমন্ত শিশুদের চমকে জড়িয়ে ধরতে – নড়তে না – চাওয়া হাত দিয়ে। আর নীচে চা-বাগানের পেছনে মিথুন রাশির চাঁদকে দূরের বস্তিতে জ্বলতে থাকা আগুনে গোপনে মিশে যেতে দেখতে। আমাদের সমস্ত আসবাব যার উপরে বাবার নাম লেখা, উন্মুক্ত পড়েছিল অনেকদিন কামপুর স্টেশন প্ল্যাটফর্মে। বাঙালি স্টেশন মাস্টার নিহত বা পলাতক বলে রেলে বুক করা যায়নি। আবীরের বয়েমগুলো ক্লান্তিহীন ভেঙে যাচ্ছিল দিনের পর দিন।
রহস্যময় বেশি সময় লাগল দাঙ্গা থামাতে।
সে দাঙ্গা কি কোনও দিন থামলো?
ভয়ের রাত থেকে বাবার হাত ধরে, আমরা গারো পাহাড়ের নীল বীজ-খামারের দিকে চলে গেলাম একদিন। মনে পড়ে মাগো?

রেলগাড়ির কু ঝিক ঝিক
ফারকাটিং স্টেশানে যখন দ্বিতীয় শ্রেণির কামরায় উঠে বসলাম – তুমি ফিসফিস করে বাবাকে কানে কানে বললে – “এরা ন এর আকার গ এ আকার। না গো?”
আমি তখন বাংলা বানান শিখতে শুরু করেছি তোমার কাছে। বানানটা আমি বুঝতে পারি। মুখে কিছু বলিনা। ভয়ে ভয়ে দুই সহযাত্রীকে দেখলাম। এরা তাহলে নাগা।
চা-বাগান থেকে অনেক ঘুরপথে আমরা ট্রাকে এসে বসেছি ফারকাটিং স্টেশানে। তখন রেলে তিনটে শ্রেণি। নিরাপত্তার জন্য বাবা দ্বিতীয় শ্রেণির টিকিট কেটেছেন। না হলে আমরা তৃতীয় শ্রেণির কামরাতেই উঠতাম। থার্ড ক্লাশ।
পই পই করে আমার ছোটো দুই ভাইবোনকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে – “সাবধান। রাস্তায় কথা বলবি না।”
অর্থাৎ বাংলায় বলবি না।
কিন্তু আমাদের বাঙালি পরিচয় কী করে লুকাবে মা?
তোমার শরীর তো আগাপাশতলা বাঙালি। মাথায় আধো ঘোমটা, সিঁদুর সিঁথিতে। হাতে শাখা। তোমাকে কে বাঙালি বলে চিনতে পারবে না?
আর আমাদের সহযাত্রী দুই যুবক নাগা পুরুষদের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ভেবেছিলে মা?
যাহোক তোমাদের দুজনের সারাপথের উৎকণ্ঠা বোঝার বয়স আমাদের হয়নি তখন। আমরা গৌহাটি স্টেশানে নামলাম। কদিন আগেও এখানে দিনরাতের কার্ফু ছিল। রেল কলোনিতে আমরা পরিচিত যে পরিবারের কোয়ার্টারে উঠলাম, তারা বিব্রত অনাহুত অতিথিদের নিয়ে।
সেই রাতে ছোটোভাইকে বড়ো বাথরুম করাতে হবে। কাউকে বিরক্ত করবে না বলে তুমি তাকে নিয়ে কোয়ার্টারের সদর দরজা খুলে নিভু নিভু হারিকেন হাতে বেরিয়েছ।
শব্দ পেয়ে হৈ হৈ করে উঠলেন গৃহকর্তা।
--- “আরে করছেন কী? নিজে মরবেন আমাদেরও মারবেন। দিনের কার্ফু উঠে গেলেও রাতে তো জারি আছে। তাও আবার আলো হাতে বেরিয়েছেন। এখুনি গুলি ছুঁড়তো মিলিটারি।”
ভাই কাঁদছে, আর তখন তোমার কোথায় পালাই অবস্থা।
কী করে যে তোমরা আমাদের নিয়ে গারো পাহাড়ের নিরাপদ গ্রামে পৌঁছলে – তোমরাই জানো। আগেই জানতাম ঐ গ্রামে বাংলা বলতে পারবো আমরা। এমন কি একটা বাংলা স্কুল আছে এখানে – যে স্কুলে আমি ভর্তি হবো।

নভেম্বর
যখন যেমন তখন তেমন। যেখানে যেমন সেখানে তেমন। এরকমভাবে বেঁচে থাকার স্বপক্ষে আমরা নানা রকমের যুক্তি দিয়ে থাকি। নিজেদের কাপুরুষতা দুর্বলতা ঢাকতে কখনও গীতা থেকে কখনও কথামৃত থেকে ভুল উদ্ধৃতি টেনে আনি। উদ্ধৃতি হয়তো ভুল নয় – প্রয়োগ ভুল। আগাপাশতলা কাপুরুষ আমরা। এই বুঝি আমাকে মারলো, এই বুঝি অমুক অসন্তুষ্ট হলো। শুধু সমঝোতা করে বাঁচি।
আমরা যেমন একেকজন ভুল মানুষ, তেমনি একটা ভুল ভারতবর্ষে আমরা বাঁচি। প্রায়ই অসুরেরা দখল করে রাজ্যপাট। রাজা পালিয়ে বেড়ান।
তখন ১৯৮০ শেষ হয় হয়। টেলিপ্রিন্টার যন্ত্রগুলোর মেরামতির কাজে ব্যস্ত থাকছি। হাতে কলমের কাজ। প্রণালীটা শুধু জানা থাকলেই হয়না, নিজের হাতে করতেও হয়। এমন সময় নতুন যুবকটি যোগ দিলো। পুরানো রাজধানী থেকে বদলি হয়ে এসেছে।
তখন কালবেলা। অনিশ্চয়তায় ছেয়ে বসে আছে ভারতবর্ষের ঈশানকোণ। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ত্রিপুরায় দাঙ্গা হলো মাস চারেক আগে। মণিপুর, নাগাপাহাড়, মিজোরামে ভারতবিদ্বেষের কালো থাবা। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় আমরা অনভিপ্রেত। মুখ খুলে উচিত কথা বলার সাহসও নেই। শুধু চোখ বুঁজে দিনানিপাত। জীবিকার প্রয়োজনে টেলিপ্রিন্টার যন্ত্রের সঙ্গে প্রাত্যহিক বোঝাপড়া। মানুষের মনের তল পাওয়া যায়না। কিন্তু যন্ত্র অনেক কাছের যেন।
নতুন যে যুবকটি পুরানো রাজধানী থেকে এলো – হাতেকলমে অনেক কৌশলী সে। জটিল মেরামতির কাজ যখন গভীর মনোযোগের সঙ্গে করে আমরা টের পাই কীরকম ভালোবেসে কাজটা করছে সে। চারদিকের পৃথিবী ভুলে বসে আছে।
কাজপাগল কুশলী যুবকটি ভদ্র ও নম্র। তবে আমাদের যাবতীয় উদ্বেগ তাকে স্পর্শ করে বলে বোধ হয়না। মহানগরীর মাঠেঘাটে তখন উত্তেজনা। অন্য রকমের স্বাধীনতা পাগল তরুণেরা বুকের রক্তে নতুন কথা লিখছে। তাদের দমাতে প্রশাসনের কঠিন হাত সমর্থন করিনা। কিন্তু বাংলা মাতৃভাষা হওয়াতে ব্রাত্য শুধু নই – পথেঘাটে প্রয়োজনে পরিচয়টাও লুকিয়ে চলতে হয়। আমি একা থাকি। আমার মা চিঠি যাতে পোস্টকার্ডে না লিখেন জানিয়ে দিই। কিন্তু লেফাফায় অন্তর্দেশীয় পত্রে আমার নামের বাঙালি পরিচয়টা তো লুকানো যায় না। খবরের কাগজগুলো ভুল খবর, বানানো খবর ছাপিয়ে ছেলেদের আরো খেপিয়ে দেয়। আজ এখানে কাল ওখানে কিছু না কিছু ঘটছেই।
আনন্দবাজার বা কলকাতার কোনও বাংলা খবরের কাগজ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নাককাটা পুখুরীর স্টল থেকে ‘দেশ’ কিনে এমনভাবে বাসায় ফিরতে হয় যে কোনও নিষিদ্ধ দলিল। দেখা গেছে মোটামুটি দশবছর পরপর ব্রহ্মপুত্র ফুঁসে ওঠে। বিপন্ন হয় সত্ত্বা। পারপর আবার শান্ত হয়।
বাংলাভাষী সহকর্মীদের সঙ্গে একান্তে কথা হয়। ইঙ্গিতে ভাব বিনিময়, ভাব সম্বরণ হয়। কবে বদলাবে দিন। স্বাভাবিক হবে বাতাস আবার।
অবাক হয়ে দেখি কী নিপুণতায় ধ্যানী যুবকটি সরিয়ে রাখে নিজেকে সব উদ্বেগ থেকে। ২৯-১১-১৯৮০, আজ কিরিচ ঢুকিয়ে দেওয়া হলো আমাদের দপ্তরের দ্বিজেন চন্দের শরীরে। ধারালো কিরিচ আমূল বিদ্ধ করলো তার হৃৎপিণ্ডকে। দপ্তরের কাজেই আরেকটি দপ্তরে যাচ্ছিল এই নির্বিরোধী শান্ত কর্মীটি। লাশ হয়ে পড়ে থাকলো একটি নালার পাশে। পুলিশ প্রায় এলোই না। না কোনও প্রতিবাদ, না কোনও সহানুভূতি। কিরিচ নিয়ে যে ঘাতকেরা দৌড়ে এসেছিল কলেজের দিক থেকে তারা নেহাত কিশোর। খুনের অর্থ তারা বোঝেনা। তবু রাষ্ট্র তাদের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিতে পারে না। দ্বিজেন চন্দের অপরাধ ছিল মারাত্মক। নামের সঙ্গে সে একটি বাঙালি পদবি ব্যবহার করেছিল।
কাজকর্ম স্বাভাবিক হলেও আমরা স্বাভাবিক হইনা। তবে সব কিছু মেনে নিতে হয় কাপুরুষদের। শুধু মুখে মুখে অনেক কিছু।
সেই যুবক যে আত্মমগ্ন যাকে নিরুত্তাপ মনে হয়, তাকে একদিন কথা বলানো হলো। যা বেরিয়ে এলো তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমরা কেউই। কী উজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী ছিল এই যুবক। তার বুকের ভিতর কীরকম গভীর ক্ষত ছিল। বোঝা যায়নি আগে।

১৯৬১, মে মাস
আকাশের সূর্য দাপিয়ে শাসন করছিল তৎকালীন কাছাড় জিলা। আরো ছোটো অবয়বের শিলচর শহর তখন উদ্বেল। ভাষা আন্দোলনের অর্থ বোঝার বয়স হয়নি তখন। যুবকের বয়স তখন নয়। শুধু এটুকু জেনেছে একটা অস্তিত্বের জন্য লড়াই চলেছে। এ লড়াই হেরে গেলে চলে না। শিক্ষকমশাইরা সমর্থন করছেন। এ যেন অন্য রকমের খেলা। বাড়ির দিদি-দাদারা প্রতিদিন মিছিলে যান। পিকেটিং চলে, বালক-বালিকাদের কোনও ভূমিকা না থাকলেও তাদের আটকায় কে? আর তাকে তো আটকাবার কেউ নেই। পিতা চলে গেছেন জন্মের পরে পরেই। দিদি-দাদাদের স্নেহছায়ায় বড়ো হতে হতে পৃথিবীকে মনে হয় খেলার জায়গা। আর মে মাসের এই ঐতিহাসিক আন্দোলনের জন্যই জন্ম হয়েছে তার। দিদি যাচ্ছে, দাদা যাচ্ছে। পাড়ার সবাই যাচ্ছে। বালকও গেল ১৯৬১-এর পিকেটিং-এ। সবারই লক্ষ্য শিলচর রেলওয়ে স্টেশন। একটার পর একটা রেলগাড়ি আটকে দেয়া হচ্ছে।
বালক তারাপুর নেতাজী বিদ্যাপীঠের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। আন্দোলনের বিস্তারিত তার জানার কথা নয়। নেতৃত্বে কারা আছে জানেনা। তবু তার মধ্যে সংক্রামিত এক উন্মাদনা। ভারী ভারী কথা তার জানা নেই। সে শুধু জানে একটা পূজা হচ্ছে। যেকোনোও মূল্যে রেলগাড়িগুলিকে আটকাতে হবে। স্তব্ধ করে দিতে হবে যাবতীয় সরকারি কাজকর্ম। উঁচু শ্রেণির ছাত্ররা বলাবলি করেছে। বেশ ক’বার স্টেশান চত্বর থেকে পুলশ ধরলো। তার সঙ্গে তার খেলার সঙ্গীরা। তার সমবয়স্ক ভাগ্নেও। কিন্তু ধরলেও করবেটা কী? আটকানো যায় কি অসংখ্য দামালদের? কোনওদিন? একটু পরেই দৌড়ে এসে পড়ে স্টেশান চত্বরে। কোন্‌ সকালে বাড়ি থেকে কী খেয়ে বেরিয়েছিল মনে নেই। পেট চোঁ চোঁ করে ক্ষিধেয়। তবু আন্দোলনের অমোঘ আকর্ষণ টেনে নিয়ে যায় বারবার।
একসময় হৈ হট্টগোল। পুলিশ লাঠিচার্জ করে কাঁদানো গ্যাস ছাড়ে। পরপর গুলির আওয়াজ হয় দুপুর আড়াইটাতে। মুহূর্তে থেমে যায় সময়। লোকজনের চেঁচামেচি। দৌড়োদৌড়ি। হুড়োহুড়ি। বোঝা যায় না কিছুই। শিলচর শহর উথালপাথাল হয়। কেউ বলে সাতজন মারা গেছেন, কেউ বলে সাতাশ। কেউ বলে দু’জন ছাত্রী মারা গেছেন, কেউ বলে একজন।
সেই বালকও এলোমেলো হয়। মিছিল তারাপুর রেলওয়ে স্টেশান থেকে শহরের দীর্ঘ পথ পরিক্রমা করে আসে হাসপাতালে।
সেগুলি মিছিল ছিল? সেগুলি কি বাঁধভাঙা মানুষের ক্রোধের রূপান্তর? সেগুলি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের ভেতরের ভাষায় বাহিরের চেহারা। মানুষের অন্তর থেকেই তার জন্ম। হাজার হাজার মানুষের বাঁধভাঙা এ মিছিল। মিছিলের পর মিছিল, তারপরও আরও মিছিল। কই ছিটকে পড়েছে তার সঙ্গীসাথীরা। এখন আর বোঝা যায়না কোন্‌দিকে শিলচর শহর। কোন্‌দিকে তারাপুর রেলওয়ে স্টেশান। সবকিছু একাকার হয়ে গেছে অদৃশ্য একটা প্রচণ্ড ঝড়ে। গ্রীষ্মের আকাশ নেমে এসেছে পাকা ও কাঁচা রাস্তায়। একজন শহিদের শব নিয়ে চলেছে একটা মিছিল। নয় বছরের বালক নিজেকে আবিষ্কার করলো সেই মিছিলে। তার চোখ জ্বালা করছে। তেষ্টাও পেয়েছে খুব। হাত পা ছড়ে গেছে কখন – উত্তেজনায় টের পায়নি। মিছিলে অন্যদের দেখাদেখি তার মুষ্টিবদ্ধ হাত বারবার উপরে উঠেছে। সে জানেনা মিছিলের পুরোভাগে যে শহিদের শবদেহ বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটা কার? কী নাম তার? দরকারও নেই। সেও তো তার মতো এক পিকেটার। হয়তো সে নিজেই।
অনন্তকাল যাবত চলছিলো কি সেই মিছিল? একসময় কেউ হাতে ধরে তাকে মিছিল থেকে বের করে নেয়।
--- “এই এই তুই কই যাস?”
--- “মিছিলে যাই।”
--- “কোন্‌ মিছিল? কার মিছিল? কই যাবে?
--- “জানিনা। মিছিলে আছে শহিদের শব।”
--- “কী নাম?”

ভাষা শহিদের ভাই
সেই বালক আজ যুবক। ১৯৮০তে গৌহাটিতে আমাদের মিতভাষী সহকর্মী যুবক যিনি না জেনে শহিদের শবদেহ নিয়ে মিছিলে কয়েক কিলোমিটার হেঁটেছিলেন – অনেক পরে তার প্রতিবেশী কাকা তাকে মিছিল থেকে টেনে বের করে জানালেন – “ও তো শহিদ নয় রে হতভাগা। ও তো তোর দিদিরে। এবারে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিলো ঐ দিদিরে। যা বাড়ি যা। কাঁদতে কাঁদতে তোর মা অজ্ঞান – দেখ গে যা।”
সেদিনের বালক আজকের যুবক, পরিচয় না জেনে তার দিদির শবদেহের মিছিলে কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটেছিলেন।
সহকর্মী চোখ তুলে আমাদের বললেন – “আমার শহিদ কথাই জানেন আপনারা। আর আমার আধা শহিদ দিদি? জানেন তার কথা? এক সাথেই দুই দিদি স্টেশানে গেছিলেন পিকেটিং-এ। ছোটো দিদি গেলেন শহিদ দিদিকে ডেকে আনতে। পুলিশের লাঠি আর বেয়নেটের আঘাতে আপনাদের নাম না জানা এই দিদি তো চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে আছেন। শহিদ তো মরে গিয়ে বেঁচে গেছেন। আর ইনি যে বেঁচে থেকেও মরে আছেন।”
সহকর্মীকে জিজ্ঞেস করার মতো কোনও প্রশ্ন আমাদের মাথায় আসেনি। এতো বছর পর আজও – না।
এটুকুই শুধু মনে রেখেছি – যে একটি অজানা শহিদের মিছিলে হেঁটেছিল যে তার... ।
অনন্তকাল যাবত চলছিলো কি সেই মিছিল? একসময় কেউ হাতে ধরে তাকে মিছিল থেকে বের করে নেয়।
--- “এই এই তুই কই যাস?”
--- “মিছিলে যাই।”
--- “কোন্‌ মিছিল? কার মিছিল? কই যাবে?
--- “জানিনা। মিছিলে আছে শহিদের শব।”
--- “কী নাম?”  
                                                                                 HOME

এই লেখাটা শেয়ার করুন