অনুগল্প

ঈশানকোণ একটি বাংলা সাহিত্যের ওয়েবব্জিন জুলাই-আগস্ট সেপ্টেম্বর ২০১৮ সংখ্যা

ভ্রান্তি
রণজিৎ রায়

মুখে ফিসফিস না করলেও সবার চোখের ভাষায় সন্দেহ, কৌতূহল আর প্রশ্নবোধক চিহ্ন। কৈলাস মানস সরোবর যাত্রাকে অভিযান বলাই যুক্তিযুক্ত। মৃত্যু যেন শিকারি বাঘের মতো ওঁত পেতে আছে সর্বক্ষণ। যাকে নিয়ে সন্দেহ, তার মতো পরোপকারী মানুষ হয় না। সবার বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিশ্বানন্দ উচ্চশিক্ষিত। কানাডায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। দক্ষিণ ভারতীয় হলেও চমৎকার হিন্দি জ্ঞান। যাকে কেন্দ্র করে সে সন্দেহের ঘূর্ণিতে ঘুরপাক খাচ্ছে, সে পাঞ্জাব সুন্দরী। ফিগার, রঙ, হাসি প্রশ্নাতীত। সেজন্যেই সবার সন্দেহের ঘনত্ব এতটা তীব্র।

কৈলাস মানস সরোবরের অনির্বচনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করে যতই আপ্লুত ও তৃপ্ত হোক না কেন তীব্র মাথা ব্যথা ও খাবারে অরুচিতে সবাই নাজেহাল। প্রতি মুহূর্তে হাই অলটিটিউডের নীরব আক্রমণে তটস্থ সবার মন। এসব উটকো সমলোচনা করার ফুরসত কোথায়! তাছাড়া দক্ষিণভারতীয়রা বাঙালিদের চাইতে পিএনপিসিতে খানিকটা পিছিয়ে। বাঙালিরা নাকি ভারী বোঝা বইতে কষ্ট হলেও, সে বোঝা মাথায় নিয়ে দিব্যি পিএনপিসি চালিয়ে যেতে পারে। বিন্দুমাত্রও কষ্টবোধ করে না।
ফিরে এসে কাঠমান্ডুর রাজকীয় হোটেল ম্যানাঙ্গএ ডিনারে গেলাম। মুখোমুখি বিশ্বানন্দ। হাত ধরে আছে পাঞ্জাব সুন্দরী। এড়িয়ে গিয়েও সমস্যার গুরুত্ব বিবেচনা করে ওকে ইশারায় একান্তে ডেকে এনে বললাম, বিশ্বানন্দ! খুব বিপদে পড়লাম। ভোর হলেই এয়ারপোর্ট চলে যেতে হবে। গাইডকে বলেও চাইনিজ মুদ্রা ইয়ান চেঞ্জ করতে পারছি না। তুমি কি খোঁজ নিয়ে একটু দেখবে? সমস্যায় পড়ে সবাই তোমাকে বিরক্ত করে। এমনকি ডিনারে এসেও তোমাকে বলতে বাধ্য হলাম।
এবার সে দেবদূতের মতো জিজ্ঞাসা করে, আঙ্কেল! চাইনিজ ইয়ান কি সাথে আছে? থাকলে সব এখুনি দিন। খোঁজ নেবো কী? আমি চেঞ্জ করে দিচ্ছি। আমরা বিকেলের ফ্লাইটে যাবো। আপতত আপনি নিয়ে চলে যান। আমি একটা ব্যবস্থা করবো। হাতে কয়েকঘণ্টা সময় পাবো।
এ কথা বলেই আমার ইয়ান গুনে মোবাইল ক্যালকুলেটরে হিসেব করে পুরো ভারতীয় টাকা আমার হাতে তুলে দেয়। আমি ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম, খুব উপকার করলে বিশ্বানন্দ। এগিয়ে যাও, তোমার বান্ধবী অপেক্ষা করছে।
বিস্মিত বিশ্বানন্দর প্রশ্ন, বান্ধবী কাকে বলছেন আঙ্কেল? রচনা আমার ওয়াইফ। সে একজন নামি ডেন্টিষ্ট।
--- ওয়াইফ! তাহলে সে অন্য মেয়েদের রুমে থাকে কেন?
হেসে গড়িয়ে পড়ে বিশ্বানন্দ। হাসি থামিয়ে বলে, ওরা আমার বোন। ওদের সাথে একই রুমে থাকে। কার্তিক আমার বেস্টফ্রেন্ড। একা এসেছে। আমরা দু্ই বন্ধু একই রুমে থাকি।
রচনার কাছে বিশ্বানন্দ যেতেই নানা প্রশ্ন। কোনো উত্তর না দিয়ে ওরা টেবিলে গিয়ে বসে। যেখানে দুবোন আগেই বসে রয়েছে। এবার দূর থেকে খুঁটিয়ে দেখলাম, প্রতিভা আর অনুরাধার চেহারায় বিশ্বানন্দের চেহারার সাথে অনেক মিল। 
                                                                HOME

এই লেখাটা শেয়ার করুন