ভাস্কর
কাকলি গঙ্গোপাধ্যায়
পারছিল না। বইতে পারছিল না সে
এতটা দুঃখের ভার, তাই হাত বাড়াল।
সে হাত বাড়াল, অমনি আকাশ ঢাকল মেঘে
সে হাত বাড়াল, অমনি বাতাসে উঠল ঝড়
সমুদ্র মাতল তুফানে।
কিন্তু দুঃখের বোঝাটা যে সত্যিই আর বওয়া যায় না।
কোথায় রাখে সে তবে এ মহাভার?
ঘর উজাড় হল
গাছের পাতা খসল
পাখিরা ভুলল গান।
নিরুপায় সে বুকের পাঁজর ভেঙেচুরে
দুঃখভার ঢেলে দিল মাটির বুকে।
এবার? মাটি, তুমি কি দ্বিধা হবে ? নাকি
ভুলবে জীবন-গান ?
তখন দিনও নয়, রাত্রিও নয়
তখন শব্দও নয়, নিস্তব্ধও নয়
সে অবাক হয়ে দেখল, মাটিতে-ব্যথায় মাখামাখি
আর তারই পুঞ্জীভূত ব্যথারা মাটি মেখে
সঙ্গীত হয়ে ইঠেছে, ছবি হয়ে উঠেছে, প্রেম হয়ে উঠছে।
সেই থেকে সে দুঃখী মানুষটাকে সবাই বলে ভাস্কর
ভালোবাসার ভাস্কর।
এবার মলিনবস্ত্র ছাড়তে হবে
কাকলি গঙ্গোপাধ্যায়
টেলিফোনে যেন ফেলে আসা কোনো স্বর
একটু চমকে ওঠে সময়, আর
মুহূর্তে বদলায় ছবি।
পেছনের ঢেউ ছাপিয়ে যায়, ঢাক্কা মারে সামনের ঢেউকে
মনের গহীনে কোন্ নাছোড় অতীত
মান্না দে-র দরদী গান ‘...ছুপাউঁ ক্যায়সে...’
আসলে লুকোনো তো থাকে না কিছুই
আমরা মনে রাখি বা না রাখি, যতই যতনে সাজিয়ে
কুসুম রতনে ঢাকি, দিনের শেষে ক্লান্ত হাত
ঘষে চলে, ঘষেই চলে—
না জলে ভাসে, না আগুনে পোড়ে
এত দাগ মোছে না কোনও মন্ত্রেই – সখা হে, তবে
‘এবার মলিনবস্ত্র ছাড়তে হবে...’
এই লেখাটা শেয়ার করুন