মেয়েটির জন্য
মাধব বণিক
শান্ত থাকো মেয়েটি।
শ্রাবণের অপ্রস্তুত বিকেলে ভিজে গেছে সারা শরীর
ভরা মাঠের শূন্যতায় থোকা থোকা দুরকি বন
নেচে নেচে গেয়ে যাচ্ছে অচেনা পবনগীত। আড়মোড়া ভেঙে
ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছে আলে। বিজন দিগন্তে তখনও
বসে ছিল কেউ। সমাহিত, নির্বাক। সে শুধু
স্বপ্নের রং ছোঁয়ায়। কল্পলোকের রাজা-রানি-উজির সবাই নাচে,
মাঠ জুড়ে পৃথিবীর আনন্দপ্রভুরা
গলে গলে ঢেউয়ের সাথে মিশে যাচ্ছে।
মেয়েটি আরো ভিজবে, অবাকও হবে।
চোখ ভিজিয়ে স্বপ্নের প্রজাপতিরা রং ছড়াবে
শরীরের আনাচে-কানাচে, হৃদয়ের গভীরতম অন্তরালে।
এই মেয়ে, তুই যাস না।
এই নির্বাক মাঠে ঝিঁঝিঁদের কলতান
শুরু হবে এখন। দূর থেকে ভেসে আসবে
গাভীর ডাক, শেয়ালের লুকোচুরি। মেঘের আড়ালে
ঝুঁকে থাকবে সামান্য শিথিল তারাদের চোখ।
এই মেয়ে, তুই ঝুঁকে পড় পৃথিবীর কাছে।
সব মলিনতা মুছে মুন্ডাদের ঢাকের শব্দ
ছড়িয়ে পড়বে বাতাসে বাতাসে। প্রিয়তোষ
সবাক হাসবে বুকে। যত ঋণ ছিল, যত অট্টহাসি
যত মুখচোরা কান্না – সব হারিয়ে যাবে।
নিঝুমের আবহগান শবের মুখেও
ছড়িয়ে দেবে দিগন্তের প্রশস্তি।
নিরবচ্ছিন্ন
মাধব বণিক
১
আকাশ-জল ছুঁয়ে কিছু ঘূর্ণাবর্ত
নিচের বারান্দায় জমে আছে কিছুদিন। পাখির
স্বপ্নে ডানার পরিক্রমার মতো ছেঁড়া কাঁথায়
ঘুমোয় বিষণ্ণ বিড়াল। অনুষঙ্গহীন দূরান্তের চিঠিতে
লেখা হল সেকথা। যেকথার ওপারে
আজো নদী নিদ্রাহীন,
ধূ-ধূ বালুচরে হেসেখেলে তরমুজলতা।
এত মানুষের ভিড়ে নিঃসঙ্গ পতাকারা দোলে।
চোখের পাতায় তাদের রং, টিয়ার কম্পাঙ্কে শব্দলত্গুলো
ঘুওপাক খায়। ঝিমুনি শেষে ভিড়ের পাশে
কিছুই লেখা হয় না। এক চুলা আগুন নিয়ে বসে থাকি
বালুচরে, নদীর একান্তে। গাঢ় ঘাস ছুঁয়ে থাকে পিঠ।
ব্যাকুল জোনাকিরা মশাল বুকে আলোকিত করে গাছের ছায়া।
রাতের আড়ালে অসহায় ছুটতে থাকে দিনের দিকে।
২
শেষের কথা কেউ বলিনি আজো।
শুরুর কথাও সব বলা হয় না। স্কুলমাঠ
কাঁঠালতলা, সুভাষ স্যার হয়ে কখন যেন
হারিয়ে যাই নামহীন নদীটির বুকে। অজস্র
ফুটবল একসঙ্গে ধেয়ে আসে গোলে।
স্বপ্নের গোলকিপাররা খুব সাহসী হয় না।
কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে দোতলার বারান্দায়।
এই লেখাটা শেয়ার করুন