২ সুখের কাছাকাছি কিছু লেখা
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
১.
মেঘের ইনবক্সে জমে উঠেছে চাঁদ
পোশাক পরছে আর ছাড়ছে
কে তাকে জলজন্ম দিল আখেরে
কার দৌলতে শুনে ফেলল রাণী ডাক
বউটি ক্রমশ রোগা হয়ে যাচ্ছে
২.
দরজা খুলে রাখি নুপূরের লোভে
মৃদু বাজনার ভিতর চৌকাঠের অঙ্গ ওঠে
সূর্যস্নানের পর তার ছড়ানো কেশে
ঢেকে যাচ্ছে জবাকুসুম পা
ভক্তি না আজকাল বড়ো যৌনকাতর
৩.
উঠোনে পড়ে আছে নরম ধানের দুধ ,
চরণ চিহ্ন আঁকা দুর্বাদল , পুরুষ্টু শাঁখ
আর অঙ্গরাগের চন্দন তবুও হলুদ
পাতা জড়ো হয়ে আছে এককোণে
পরমান্নের গন্ধ বিভোর পাখি ডাকছে
আমার প্রতিদিন ১২
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
সকালকে রোদের ভাবনা দিলে উপহার কিছু মেঘ নীলসাদা
সাদার ভিতরে কখনো পাহাড়
আবার গৌরাঙ্গ কৃষ্ণ হয়ে যায়
এইসবের ভিতরে কেউ দোকান খোলে
রাখি ও স্বাধীন পতাকা
দুলে দুলে বিক্রি হয়
সূর্যাস্তের আগে কেউ অসহিষ্ণু নয়
আমার প্রতিদিন ১৩
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
শীতকাল এলেই পুড়ে যায় আমার বাবা ও মা
পুড়তে পুড়তে শীতল ঘরের ভিতর
দেখি সব কবিতার বই পোড়া অক্ষর মেখে
পাতা ঝরে যায় একের পর এক
আর আমি চিৎকার করে বলি
ও হেনরি আর পড়ব না
শেষ পাতা অবিশ্রান্ত শীতের বৃষ্টিতে
হাসতে থাকে
রক্তে ক্ষয় রোগ
বলতে পারি না দীর্ঘ বাঁচার কথা
বাড়ির পাশে কারা ডালে ডালে
আগুন দিয়েছে
পোড়া গন্ধ আসছে
আমি পুড়ছি ....
আমার প্রতিদিন ১৪
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
সূর্যাস্ত আঁকি
পাখির ডানায়
সমস্ত গুটিয়ে রাখি
তুলি ও সরঞ্জাম
সন্ধ্যায় আগস্ট এলো
চুলে চিরুণী ও ফিতে
বড়ো চুপচাপ
অক্ষর বসে যায়
আকাশের শূন্য খাতায়
ভাষার ভিতরে বাংলা
খুঁজে লেখে রাত্রি
তারা অসংখ্য তারা
মাঝে বাস শ্রীচন্দ্রবিন্দুর
ঘুমঘোর ঘর
স্বপ্নের রঙ নীল
তারপর ভোর ।
আমার প্রতিদিন ১৫
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
বিসর্জনে চলে গেছে সবাই ।
ফাঁকা চাতালে একা বসে আছি ।
কোথাও মা শব্দ নেই
অন্ধকার নিয়ে আছে সামান্য সিঁদুরের দাগ
খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে
কিন্তু চোখের কোণ শুকনো
পুরনো বাড়িতে ঢুকতে পারি না আর
শূন্য পড়ে মায়ের খাট , ঠাকুর ঘর , তুলসীতলা
শুধু কিছু ইঁদুর সম্পর্কের সূতো কাটতে ব্যস্ত
নতুনে অভ্যস্ত রিফু করার কথা ভুলে
কখন যে একা বুঝতে পারি না
নতুন বাড়ির একা ঘরে বিসর্জনের গন্ধ নিয়ে কিছু অপরাজিতা লতা
নিঃসঙ্গকে গান শোনায় ...
এই লেখাটা শেয়ার করুন