আচার্যের আশ্বাস
দিশারী মুখোপাধ্যায়
আমার সব রকমের সংযোগ কেটে দেওয়া হচ্ছে
কারণ আমি সংযোগগুলোকে আর একটু সংবেদনশীল করতে চেয়েছিলাম
আমি চাইনি একটা রাস্তা একজন পথিককে অন্য রাস্তায় পৌঁছে দিয়েই ঘরে ফিরে আসুক
আমি চেয়েছিলাম আলো অন্ধকারকে ভক্ষণ না করে তার ফিলামেন্টগুলোর রিপেয়ার করুক
যে মানুষটা কষ্ট পেতে পেতে পচা কুমড়োর মত ফেলা যাচ্ছে তার বীজগুলো সংগ্রহ করা হোক
আমি চেয়েছিলাম
সমস্ত রস নিংড়ে নেওয়া খেজুর গাছগুলোর সাংবিধানিক মিউজিয়াম হোক
তাই কি আমার সব সংযোগ কেটে দেওয়া হচ্ছে
আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু
আমার নীরব আর্তনাদ শুনতে পেয়েছেন
তিনি আবার গবেষণায় মগ্ন হয়েছেন
সংযোগ বিহীনতার একটি সংযোগ তিনি আবিষ্কার করবেন
এবং তাতে অ্যান্টি-কর্পোরেট সিস্টেম অপশন রাখবেন অতি অবশ্যই
তিনি আমার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন
রাস্তা,আলো এবং সংবিধান -- এ সবই তাদের আপন আপন ওয়্যারকে আপডেট করবে আর মিতালি অক্ষুণ্ণ রাখবে জলের সঙ্গে
মনের বেয়াড়ি
দিশারী মুখোপাধ্যায়
তুমি তোমার সমস্ত শরীর-মন থেকে যন্ত্রণার তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিচ্ছুরণ করে
ঢুকে পড়ছো তোমার নির্দ্ধারিত চেয়ার বলয়ে
সেইসব তেজস্ক্রিয় রশ্মিরা বিচ্ছুরণকে আরো বহুমাত্রিক ও উদ্দেশ্যমুখী করে
ছুটে আসে আমার দিকে
দশদিককে সহস্রদিক করে আমাকে বিদ্ধ করে
আমার সমস্ত প্রেমকে নিংড়ে বার করে নেওয়া হয়
ফেলে দেওয়া হয় আঁস্তাকুড়ে
আমার মৃত চোখ দেখে তাকিয়ে তাকিয়ে
নষ্ট হচ্ছে আমার মুসাম্বির রস
তুমি তোমার পার্শোনাল ফাইল থেকে ঝেড়েমুছে ফেলে দিয়েছো
হলুদ কল্কে ফুলের সবটুকু মধু
মধু চুষে পান করার তোমার সেই ঠোঁট বেঁকিয়ে রেখেছো একটা অনিশ্চিত আমন্ত্রণের দিকে
হয়তো সেখানে গড়ে উঠবে খুব উঁচু একটা গিরিখাত
সব যন্ত্রণাকে মন্থন করে
মাখন তুলে তুলে সঞ্চয় করে রাখছি দেখে
খুব বিস্মিতভাবে আমার তাকিয়ে আছেন শরশয্যার ভীষ্ম
আমি ক্রমশ
দিশারী মুখোপাধ্যায়
রাত্রি গহন হতে হতে এইখানে এসে আরো রহস্যময়ী
এইখানে আমি একা সম্পূর্ণ আমিত্বটুকু নিয়ে খেলা করি
খেলার ভেতরে অনেক জল আর গোপনীয়তার প্রকাশ
অদৃশ্য বিন্দুর মত একটা জীবন অক্লান্ত দৌড়ে ব্যস্ত
বিন্দুটিকে অনন্ত ভেবে তার পরিধির এক প্রান্ত থেকে অন্যে
দিন যখন অনেকটা প্রকাশ্যে এসে অঙ্কের মত সরল জ্যামিতি
আমি তার জন্য দরোজা খোলা রাখি জাজিম সহ দরবারী
খোসা ছাড়ানোর কাজে বন্ধুদের সাহায্যের করি আমন্ত্রণ
কেয়ারি করা ভাবনার বিপুল ঐশ্বর্য ঘিরে উন্মাদনার লেখচিত্র
ধ্যানে বসে, খোসা বিহীন আমি তখন ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ওম-ম -ম
তবু নিজেকে বুঝে উঠতে পারছি না, সে তো অনেক কঠিন
তুমি এখনো অপঠিত এক পাতাও আর যতিচিহ্ন তো অলীক
বসন্ত-বাহার বেয়ে একটু একটু করে আমি ক্রমশ রাত্রি
পাতুরির ভাঁজ খুলে ঢুকে যাচ্ছি আনন্দের দিকে যেরকম নদী
আত্মশুদ্ধির শপথ
দিশারী মুখোপাধ্যায়
অনেকদিনের পুরোনো এক বন্ধুকে খুজে পেলাম
রাস্তায় অদ্ভুত রকমের একটা পাথর কুড়োতে গিয়ে
পাথরটি অনেক খেলিয়ে তবে আমাকে তার ডাঙায় তুললো
আর তার আপাত গোলাকার চেহারার মধ্যে অনেক রকম কৌণিক সম্ভাবনার তীর্যক ইঙ্গিত দিলো
আমি সেই পাথরের সঙ্গে তার ডেরায় গিয়ে উঠলাম
ডেরায় ঢুকতে প্রথমেই অবশ্য একবার মাথার চৌকাঠে ঠোকা খেলাম
বন্ধুবর পাথর আমাকে দেখিয়ে দিলেন
কিভাবে ফোল্ডিং পদ্ধতিতে বিনয়ের ব্যাকরণ রপ্ত করতে হয়
আমি সেই বন্ধুর সঙ্গে মাত্র চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে
আমার হাতের তালুতে থাকা সম্পূর্ণ জীবনকাল অনায়াসে খরচ করে আসি
পাথর-বন্ধুর সঙ্গী সাথী আরো অনেক ছোট-বড়, সাদা-কালো পাথরের সঙ্গে পরিচয় হয়
তাদের দেহ আর দেহের রসায়ন নিয়ে
একটা বড় রকমের পাথরপুরাণ লিখে ফেলার শপথ নিয়েছি
আশা করছি আমার বন্ধু আমাকেও রাস্তা থেকে তুলে এনে লাব-ডুবে আশ্রয় দেবে
আশ্রয় পেলেই আমি আমার সমস্ত পোশাক খুলে
রজকের বাড়ি ও তার ধোবিঘাট দর্শন করে আসবো নিশ্চিত
নির্মাণ
দিশারী মুখোপাধ্যায়
সঠিক আকারটা পেতে চেয়ে গড়তে গড়তে বেলা শেষ
গড়নটুকু শেষ হলো আপাতত
এরপর জায়গায় জায়গায় মাস বাড়বে কমবে
শাড়ির মত করে চলন
রঙ দেওয়া
চক্ষুদান
সব শেষ হলে ছুটি দাও সবেতন কী বিনাবেতন কুছপরোয়া
বানালাম যাকে সে আমাকে দেখেছে দুচোখে
তারপর রাস্তা চিৎপাত অথবা ঝপাং
তাতে পথিকের কাঁচকলা
লোটা কম্বল
পায়ে হাঁটা
আকার নিরাকার মহাপ্রস্থান মহাবিশ্ব কৃষ্ণগহ্বর
সংসার
দিশারী মুখোপাধ্যায়
আজ আমি পড়ে যাবো জানতাম না
একটু পড়ে মরে যাবো না কিনা কেউ জানে না
তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না - আমি বলি না
বাঁচা, না-বাঁচা আমার হাতে নেই
তুমি থাকলে আমার ক্যানভাস কথা বলে
এটা কোনো প্রথম শ্রেণীর দৈনিকের কাছে গুরুত্বের বিষয় নয়
বিবেকও খুব ঘৃণা করে এ জাতীয় আমিষ-খবরে
পৃথিবীর অন্যপ্রান্তটি কখন শিলিগুড়ি কখন জেনিভা
খবর আসে না
নিত্যপ্রয়োজনীয় পাঁচটি সামগ্রীর জন্য এ্যাজেন্ডা নিয়ে
কিছু মানুষ পোস্টারে ব্যানারে বহুযুগ
হৃদয়টা এ্যাকচুয়ালি বুকে না মাথায়
পরিষ্কার করে জানা গেল না
আমি যখন এখানে পড়ে যাচ্ছি
তোমার তখন বাংলাদেশের ইলিশ, বেগুন ও কালোজিরে
এই লেখাটা শেয়ার করুন