বিধিসম্মত সতর্কীকরণ
দিলীপ দাস
শব্দের সতীত্ব যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে
সেজন্য সর্বদা সতর্ক থাকবেন।
বিশিষ্ট পাঠকবৃন্দ এবং সমালোচক-অধ্যাপক-
কুসীদজীবী-কম্প্রাডর বুর্জোয়া-ঘাসকাটুরে-বৃহৎ
সাহিত্য প্রতিষ্ঠান-জাঙ্গিয়া ও ব্রার কারু-
শিল্পের কারিগর-মেলা কমিটির ঝানু
সেক্রেটারি-এফবিআই-এর এজেন্ট পত্রিকার রিভিয়ু লিখিয়ে-
এই মহাশয়েরা যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়েন, সেদিকে
সতর্ক থেকে গোল গোল, নিম্নাভিমুখী,
জঙ্ঘা-মুখর শব্দ নির্বাচন করে সাহিত্য
ইত্যাদি রচনা করবেন।
আপনার রাজনৈতিক মতামত সবসময় গেঞ্জির
ভিতরে গুহ্য রাখবেন – যতই তা ঘামে
ভিজে কটু গন্ধ ছড়াক, পরোয়া করবেন না।
শব্দ হবে জলের মতো নিরক্ষর ও
নিরপেক্ষ, বিশুদ্ধ কূর্ম অবতার—
শব্দ হবে কালিদাস বর্ণিত পার্বতীর
কুচযুগের মতো—সুগঠিত, সুডৌল এবং পেলব।
শব্দকে দিয়ে যা-তা বলাবেন না।
শব্দ হচ্ছে সাক্ষাৎ ব্রহ্ম। পাটের ফেঁশোর মতো
সাদা, নির্বিকার, নিরুত্তেজ তার দাড়ি, গায়ের
রং অগ্নিবর্ণ এবং তিনি আমৃত্যু পরমপিতা,
নিঝ্ঝুম শালগ্রাম শিলা।
রাজরাজড়াদের তোষণ করে আত্মতুষ্ট থাকেন,
ল্যাংটি পরাদের শব্দ কখনো পোষণ করে না।
হে মহান কবি, আপনি সেই শব্দের
পরিপোষক হোন, যে শব্দের ওষ্ঠে ও চিবুকে
সাপ এবং ব্যাঙের সশব্দ চুমোর দাগ
রক্তিম হয়ে জিগারের আঠার মতো লেপ্টে থাকে—
শব্দের গতি হবে এমন তীর্যক, যেন পাঠক
কিছুতেই বুঝতে না পারে আপনার
শব্দ-মহিমা। আপনি যখন হ্যাঁ, পাঠক
বুঝবেন— না। যখন না, পাঠক মনে
করবেন হ্যাঁ। যখন ডান, পাঠকের
মনে হবে আপনি নিঘ্ঘাত বামাবতার।
পাঠকের সঙ্গে এই চাতুরীটুকু
কবির জন্মলব্ধ কৃতিত্ব। এই চাতুরী থেকেই
পাঠক বুঝে নেবেন আপনি কোন
পাঠশালার ছাত্র। মনে রাখতে হবে,
আজকের পাঠক এবং পাঠিকা,
কবির কাছে চাতুর্য ও ছলাকলা
প্রত্যাশা করে। এটা কালিদাসের
যুগ নয়, কনজিওমারিজমের যুগ।
স্বভাবতই কবিও পাঠকের কাছে এবং
পাঠিকার কাছেও আশা করেন,
সেই নির্বীর্য ও নির্বস্তুক স্তুতি,
যে স্তুতির কাছে বিদূষকও হার মানবে।
এই লেখাটা শেয়ার করুন