বিজয়োৎসব
লক্ষ্মণ বণিক
তোমাকে জিতিয়ে দেয়া ছাড়া অন্য কোন ফলের এষণা নেই আমার
তুমি যতো গড়ো কিংবা ভেঙে পড়ো, যেমন গড়ে ভাঙে শরতের
আকাশে পেঁজা তুলোর মতো স্তূপীকৃত মেঘ, বর্শাফলকের মতো
সূর্য বিচ্ছুরিত রং, দেখ্-দেখ্ করে এ-প্রান্ত, ও-প্রান্ত হুড়মুড়
ভাঙতে থাকে, কখনো পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান উদ্যাপনে
সমাপ্তিতে মানুষ ও রঙের খেলায়, যেন সবকিছু ছুঁয়ে থাকে
শিশুর সারল্য; এরপর এমন কোন শস্ত্র আমার হাতে
মজুদ থাকে না যার প্রয়োগে তুমি ধরাশায়ী অনেক দূরের,
বিব্রতও হবে।
জয়ীর হাত ছুঁয়ে থাকে ধবধবে নীল, পা অতি সুমসৃণ
মাটির বুক, হৃদয়ে প্রবহমান তাবৎ সহস্রাব্দের হাওয়া;
সেখান থেকে তুমি দৃষ্টি ফেলো আমার ওপর, আমি আর
যাই হোক সখ্যতার উষ্ণতাটুকু অটুট রাখার কলাকৌশল
কষ্টেসৃষ্টে রপ্ত করেছি, সেই বোধ প্রয়োগ করি শস্ত্রের বদলে
খুব বেশি আপ্লুত না হয়ে রোজ দুবেলা চা-বিস্কুট সহযোগে
প্রাতরাশ সারার মতো সেরে ফেলি তোমার অনাড়ম্বর আপ্যায়ন।
পদক অপ্রাপ্তিও বিস্বাদ ঠেকে না, যখন তোমার মুখে
খুশির ঝিলিক খেলা করে দেখি, দৃপ্ত চলাচল ছড়িয়ে পড়ে
প্রতি পদচারণায়, চোখের তারায় শিউলির হাসি, সেইখানে
আমি পুষ্পস্তবক রাখি, উদ্যাপিত হয় আমার অভ্যন্তরেও
বিজয়োৎসব।
এমন শিল্প
লক্ষ্মণ বণিক
দেখাশোনা যথেষ্ঠ হলো, এখন কেবল ঝোলায় তুলে নেয়া
অসংখ্য উপকরণ, নেবো বলেই না এতো চেষ্টাচরিত্র
চলন্ত রেলগাড়ির মতো ঝমঝম এসে পেরিয়ে যায়
খুঁটির মতো আমি দাঁড়িয়ে থাকি আর পছন্দমাফিক
পোষাকে জড়িয়ে দিই প্রতি মুহূর্তের অবয়ব
জড়িয়ে দেবার আগে খুলে নিতে হয়, এই বোধ
ভেতরে ডালপালা ছড়িয়ে গেলে সাবালকত্ব প্রাপ্তি
সেখানে আমি যথেষ্ট সতর্ক হই, সাবালকেরা
কার্যবিশেষে একটু স্বার্থপর হলে
বয়সের গুণ ছাড়া অন্য কিছু ভাবা বৃথা
সময় পালিয়ে যাবার আগে আমি ঝোলায় পুরি
পুব থেকে পশ্চিমে সূর্যের ঘোরাফেরা মনে দাগ কাটলেও
বছর পেরিয়ে এলে নতুন করে চমকে ওঠা স্বভাব,
চমকে উঠি, আর আশ্চর্যের হলো, বছর ঝোলায় তোলা থেকে
যতো বিরত হই ততো উঠে বসে মাথার দুই বিনুনী
চুলে লাল ফিতের ফুল কিশোরী মেয়ের মতো।
সময় নিতেই হয়, আমি দু’হাত ভরে ঝোলায় পুরি
মানসিকতা, মনকে শক্ত করে ধরে ঢুকিয়ে রাখি ঝোলার ভেতর
যেন জিওল মাছ লাফিয়ে না পালায়
ভালোবাসার জন্ম রয়েছে, ভালোবাসার মৃত্যুও সময়ের অপেক্ষা
দেখাশোনা ভালোবাসাকে স্থায়িত্ব দান করে, খুব কাছে থেকে
না দেখে কোনও কিছুর ভেতর প্রাণ আবিষ্কার বড়ো কঠিন।
প্রাণ ঝোলায় পোরার এষণা মনে রেখে মানুষ ধরি, মানুষ ছাড়ি
কেনোনা, নিঃস্বার্থ প্রাণদানের কৃৎকৌশল সবাই ভুলে গেছে,
এমন শিল্প এখন অচল
এই লেখাটা শেয়ার করুন