নিবন্ধ

ঈশানকোণ একটি বাংলা সাহিত্যের ওয়েবব্জিন জুলাই-আগস্ট সেপ্টেম্বর ২০১৮ সংখ্যা

[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]

যুদ্ধ ও মেয়েরা
তৃষ্ণা বসাক

‘হুঁ, যুদ্ধের বছরগুলি। ভাবলেই মনে হয় সবসময় যেন বৃষ্টি পড়তো। আসলে তা নিশ্চয়ই নয়, তখনও নিশ্চয়ই রোদ-টোদ উঠত। আমার কিন্তু খালি বৃষ্টি পড়ার কথাটাই সর্বাগ্রে মনে পড়ে। ওয়েলিংটন বুট পরে বেরুতাম। রান্নাঘরের দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকতাম। ঢুকেই ভিজে বুটজোড়া ছেড়ে ফেলতে হতো। তারপর পা গরম করতাম। কখনো কখনো আমার প্র্যামটাতে উঠে বসতাম, কম্বলে পা ভালো করে মুড়ে বসে থাকতাম। সেটা নিঃসন্দেহে আমার মাতৃজঠরে ফিরে যাবার ইচ্ছাটাকেই প্রকাশ করতো পরোক্ষে। বিছানাতেও মুখের ওপর কম্বল টেনে নিয়ে একটা নরম, গরম, অন্ধকার, নিরাপদ জায়গা সৃষ্টি করে নিতাম। এখনো তো আমি জ্যাকের সঙ্গে অন্ধকার কোনাকাঞ্চিতে কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে উত্তাপ পোহাতে আর আদর বিনিময় করতে ভালোবাসি--’
(নোটন নোটন পায়রাগুলি/কেতকী কুশারী ডাইসন)
হ্যাঁ, নরম গরম, অন্ধকার, নিরাপদ জায়গা, মাতৃজঠরের মতো। সেখানে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে একটা গণ-হিস্টোরিয়ায় পরিণত হয়েছিল যুদ্ধোত্তর দিনগুলিতে। তারই ফলশ্রুতি বেবি বুম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী শিশু জন্মের হারকে ছাপিয়ে গিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এর পেছনে কি আপাতত শান্তিকল্যাণ? অর্থনীতির বাড়বাড়ন্ত? ঐতিহাসিক Elaine Tyler May “Homeward bound: American families in the cold war era” বইতে কিন্তু অন্য কারণ দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন এর পেছনে আছে ধ্বংস, হতাশা এবং নিউক্লিয়ার ওয়্যারের ভয় থেকে পালানোর মনোবৃত্তি। আর পালিয়ে মানুষ ফিরতে চেয়েছে মাতৃজঠরের মতো উষ্ণ পারিবারিক আশ্রয়ে, প্রেয়সীর বাহুবন্ধনে।
“Americans turned to the family as a bastion of safety in an insecure world… cold war ideology and the domestic revival (war) two sides of the same coin”
আর এর অব্যবহিত ফল এসে পড়ল মেয়েদের জীবনে। যারা যুদ্ধের দৌলতে ক্ষণিকের জন্যে বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ পেয়েছিল, ভাবতে শুরু করেছিল তাদের স্বাধীনতার স্বর্ণযুগ সমাগত বুঝি, তাদের স্বপ্নভঙ্গ হল। তারা বুঝতে পারল আসলে যুদ্ধে চলে যাওয়া পুরুষের ফাঁকা জায়গাটা সাময়িক ভরাট করতে তাদের ডাকা হয়েছিল, যুদ্ধ থেকে ছেলেরা ফিরে আসতেই, শুধু পুর্নমূষিক ভবঃ হল না, গৃহলক্ষ্মীর ভূমিকাটা যেন আরো গৌরবমন্ডিত করা হল খুব সুচুতরভাবে। গৃহকর্ত্রী ছাড়া গৃহের সুরক্ষাবলয় কেই বা নির্মাণ করবে? বিভিন্ন বিজ্ঞাপন, টেলিভিশান শো, শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র, ‘ডিক অ্যান্ড জেন’ সিরিজের বই – সব জায়গায় গরিমা পেল রমণীয়, ঘরেলু মা ও সকাল থেকে রাত বাড়ির বাইরে থাকা পুরুষালি বাবারা। ‘more work for mothers’ গ্রন্থে Ruth Schwartz Cowar দেখিয়েছেন সেইসময়ে কেরিয়ার করতে চাওয়া মেয়েদের কীভাবে ব্যঙ্গ করা হত, তাদের ডাকা হত ‘unlovely woman’, ‘lost’, ‘suffering from penis envy’, ‘ridden with guilt complexes’, ‘man-hating’ এইসব বিশেষণে।
যুদ্ধোত্তর এই গৃহকেন্দ্রিকতার অবশ্য কারণ ছিল, গ্রাহ্য কারণ। যে অবর্ণনীয় ক্ষতি, মৃত্যু, বেদনা, অস্থিরতার মধ্য দিয়ে মানুষ গিয়েছিল তাতে গৃহমুখী হয়ে পড়াই স্বাভাবিক। যুদ্ধ তো, পরিবারের আশ্রয় যে ঘর তার স্বাভাবিক চেহেরাই বদলে দিয়েছিল।
‘প্রত্যেক রাতে...। জানলার ওপরে করাগেটেড ধাতুর পর্দা দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হতো। গেটের কাছে একটা গাছে কতকগুলো চাকতি ঝুলিয়ে রাখা হতো রাতে। যাতে বোমা পড়লে এয়ার রেইড ওয়ার্ডেনরা জানতে পারে ক’টা লাস খুঁজে বের করতে হবে। ভোরে দুধের বোতলের সঙ্গে সঙ্গে চাকতিগুলোকেও ঘরের ভেতর নিয়ে যাওয়া হতো। রাতে তো সর্বদাই ব্ল্যাক আউট থাকতো, রাস্তাগুলো নিষ্প্রদীপ, সব জানলা ভালো করে ঢাকা, গাড়ির আলোও ম্লান করে দেওয়া। তাছাড়া সেকালে তত গাড়িও ছিলোনা। বাসের জানলায় পুরু হলদে কাগজ সাঁটা থাকতো, যাতে কাঁচ ভেঙে যাত্রীদের সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে না পড়ে। রাতে সাইরেন শুনিলেই আমার গা দিয়ে ঠান্ডা ঘাম ছোটে। আমি একজন মহিলাকে চিনি, যুদ্ধ শুরু হবার সময়ে যাঁর বয়স ছিল বারো। তিনি বলেন যুদ্ধ তাঁর প্রজন্মকে একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে, তার কারণ যুদ্ধের সময়ে তাঁদের দিনগুলো কাটত অতিরিক্ত উত্তেজনার মধ্যে, যেন জীবনটা একটা রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার। একটা দিন থেকে আরেকটা দিনে পৌঁছতেই কত টেনশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হতো, আগামী কালের মুখটা আদৌ দেখা যাবে কিনা তারই স্থিরতা থাকতো না। এত কান্ডের পর বাকি জীবনে যা ঘটলো তা সবই বিস্বাদ, সবই আশাভঙ্গ, অ্যান্টি-ক্লাইম্যাক্স যেন”
যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পরও তো তার মাশুল গুনে চলতে হল সারা পৃথিবীকে। হারিয়ে গেল পুরনো ঠিকানা।
‘যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পর আমরা একটা বিরাট বাড়িতে উঠে গেলাম মনে পড়ছে। সেই বাড়িটার চারিদিকে অনেক বাড়িই বোমায় নষ্ট হয়ে গেছিল। শুধু ঐ বাড়িটাই রেহাই পেয়েছিলো, কিন্তু পুরোপুরি নয়, ক্ষতির চিহ্ন অনেক ছিলো, ছিলো অনেক ফাটল। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি বলে ভাড়া খুব কম ছিলো।’
কিংবা ‘আমরা যখন গাঁয়ে তখন বেলফাস্টে আমাদের দোকান আর বাড়িতে বোমা পড়ে। ভাগ্যিস আমরা পালিয়ে গেছিলাম, নয়তো সবাই স্বর্গে যেতাম, যুদ্ধের শেষে ফিরে এসে দেখি আমাদের সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
এই ছাইয়ের ওপর নতুন করে সংসার পাততে গিয়ে বাড়ির মেয়েদের অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হল। তাছাড়া বোমার ভয়ে গাঁয়ে পালানো পরিবারের মেয়েদের মানিয়ে নিতে হল গ্রামের পরিবেশে। সব কিছু আক্রা, তাই শুরু হল রেশনিং। ‘... খাবারের, পোষাকের, কয়লার, তাছাড়া বিদ্যুতের ঘাটতিও ছিলো, ফলে সর্বদা ঠান্ডায় জমে হিম হয়ে থাকতাম। ঠান্ডার স্মৃতিটা বড় প্রখর’ আর এই পোষাকের রেশনিং এক ধাক্কায় মেয়েদের স্কার্টের ঝুল কমিয়ে ফেলল অনেকখানি। ফ্যাশনের তাড়না নয়, নেহাত কাপড়ের অভাবের জন্যেই চালু হল মিনি স্কার্ট। যুদ্ধ শুরু না হলে তাকে হয়তো অপেক্ষা করতে হতো আরো দু এক দশক।
পৃথিবীর উল্টোপিঠে বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব পরোক্ষভাবে পড়েছিল। সেই সময়ের বাংলা সাহিত্যে জাপানী বোমার ভয়ে গ্রামে পালানোর ভূরিভূরি নিদর্শন মিলবে। যেমন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বেচারী’ গল্পটি। ‘কলিকাতায় বোমার হাঙ্গামা উপলক্ষে বহুদিনের কলিকাতা-বাসা ত্যাগ করিয়া সপরিবারে গিয়ে ভগ্নিপতির বাড়িতে আশ্রয় লইয়াছি। একেবারে অজ পাড়া গাঁ। রেলস্টেশন হইতে সাত ক্রোশ রাস্তা হাঁটিয়া অথবা গরুর গাড়ীতে গেলে গ্রামে পৌঁছানো যায়। ভগ্নিপতিদের মেটে বাড়ী, তাহাদেরই স্থান সঙ্কুলান হয় না। তবে বিপদের দিনে, আপাতত বোমায় মরিতে বসিয়াছি দেখিয়া তাহারা নিজেদের অসুবিধা করিয়াও বাহিরের ঘরখানি আমাদের জন্য ছাড়িয়া দিল।’
পরিবারের কর্তা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন বহুদিন কলকাতায় থেকেও বাড়ি করার সঙ্গতি হয়নি বলে। কারণ ‘জাপানী বোমার ঘায়ে সে বাড়ী কতদিন টিকিত? আমার যেসব বন্ধুবান্ধবকে কলিকাতায় বাড়ী করিবার জন্য এতদিন হিংসা করিতাম, আজ তাহাদের প্রতি সে হিংসার ভাব করুণা ও সহানুভূতিতে পরিণত হইল। বেচারীদের পয়সাগুলো অনর্থক নষ্ট হইল।’
প্রথম প্রথম তাঁর স্থী গ্রামের প্রকৃতি দেখে পুলকিত, বনের মধ্যে প্রচুর চালতা এমনি পড়ে আছে দেখে তাঁর উচ্ছ্বাস বাঁধ মানে না।
‘আমার স্ত্রী শহরের মেয়ে, পাড়াগাঁয়ের বনে বাগানে পাকা চালতা শীতকালে পড়িয়া থাকা বিশেষ আশ্চর্যের কথা নয়, তাহা না বলিয়া তাঁহার আনন্দটাকে আরো ঘনীভূত হইবার অবকাশ দিবার জন্য দুজনে বনের দিকে ছুটিয়া গেলাম।’
অবশ্য শীতকালের পরে গ্রীষ্ম, অবশেষে ভয়াবহ বর্ষা এল তাঁর মোহভঙ্গ হতে দেরি হল না। ‘গ্রীষ্মকাল কাটিয়া আষাঢ় মাসের প্রথম সেই ভীষণ বর্ষা পড়িল, শ্রাবণ মাস যায় সে বর্ষার বিরাম নাই, চারিধার জলে ডুবুডুবু, রাস্তাঘাট কাদায় হাবড়, বন জঙ্গলে উঠান ঢাকিয়া গেল। আমার স্ত্রী বলিলেন – ওগো। কলকাতায় সবাই ফিরছে, চল আমরাও যাই – এখানে থাকা যায় না। মরি, সেখানে বোমা খেয়ে মরব। ভিজে কাঠে উনুন ধরিয়ে আর ফুঁ পেড়ে চোখ কানা হয়ে যাবার যোগার হয়েছে, এ আর সহ্য হয় না।’
তবু যুদ্ধ মানে শুধু ভিজে কাঠে উনুন জ্বালাবার চেষ্টাই নয়, প্রেমের আগুনেও জ্বলে উঠেছিল কোথাও কোথাও। নরেন্দ্রনাথ মিত্রের গল্পে দেখি আমেরিকান সৈনিকের নীল চোখের যাদুতে জড়িয়ে যাচ্ছে কিশোরী, আরো আরো অনেকের লেখায় দেখা যায় এইসব দীর্ঘদিন বাড়িছাড়া সৈনিকদের যৌন ক্ষুধা মিটিয়ে রোজগারের চিরাচরিত রাস্তাও সুগম করেছিল যুদ্ধ। রমাপদ চৌধুরীর ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে দেখি সৈনিকদের ছোঁড়া খাবারের জন্যে গোটা গ্রাম কিভাবে ভিখিরি হয়ে গেছিল। ‘সপ্তপদী’ চলচ্চিত্রে রিনা ব্রাউনকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিলিটারিতে যোগ দিয়ে মদ্যপান ও পুরুষসঙ্গ সম্পর্কে পুরনো ধ্যানধারণা ঝেড়ে ফেলতে দেখা যায়। তাকে দেখা হয় সমাজচ্যুত খারাপ মেয়ে হিসেবে। অনেক মেয়েই যুদ্ধে মিলিটারি নার্সের কাজ নিয়েছিল। যেমন ‘নোটন নোটন পায়রাগুলি’র পিকসি মিলিটারি নার্স হিসেবে দিল্লীতে পোস্টেড ছিলেন। বহুদিন পর্যন্ত এটাই ভাবা হত যুদ্ধে মেয়েদের বাঁধাধরা জায়গা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিন্তু এই ধারণাটাকেই তছনছ করে দিল।
যে হাত শিশুর দোলনায় দোল দেয়, সে হাত দেশ সামলায়। আর প্রয়োজনে যুদ্ধও কি করে না? ইতিহাস শুধু হেলেন আর দ্রৌপদীদের নিয়েই তৈরি নয়, যাদের জন্যে যুদ্ধ বাধে যুগে যুগে, চিত্রাঙ্গদা, লক্ষ্মীবাই, দুর্গাবতী, লক্ষ্মী স্বামীনাথনরাও আছে, আছে আধুনিক যুগের গ্রেস হপাররা, যারা সরাসরি অংশ নিয়েছিল যুদ্ধে। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের ভূমিকায় নয়, বীরাঙ্গনার বেশে। শুধু রক্ত মোছানো নয়, যারা প্রয়োজনে রক্ত ঝরাতেও পারে। তারা রণক্ষেত্র ছেড়ে পালায়নি শত বিপদেও, পিঠে অস্ত্রলেখার অপবাদ কেউ দিতে পারবে না তাদের।
আসলে যুদ্ধে বাহুবলের জায়গায় যত মেধা, প্রযুক্তি ও রণকৌশলের গুরুত্ব বেড়েছে, ততই সহজ হয়েছে মেয়েদের অংশগ্রহণ। যদিও, এখনও শুধু মেয়ে হওয়ার জন্যেই প্রচুর অসুবিধেয় পড়তে হয়। শৌচাগারের অলভ্যটা, পুরুষ সহকর্মীর যৌন নির্যাতন, পদে পদে অপমান অনেক নারী সেনানীকেই আত্মহননের দিকে ঠেলে দেয়। লেফটেন্যান্ট সুস্মিতাকে মনে আছে তো? কেমিস্ট্রির স্নাতক মেয়েটিকে সেনাবাহিনীতে দেওয়া হয় কিচেন সামলানোর দায়িত্ব, অবসাদের শিকার সুস্মিতা বেছে নেয় আত্মহননের পথ। তবু যুদ্ধে মেয়েরা যাচ্ছেই। মুসলিম দেশগুলিতে আপাদমস্তক বোরখায় ঢাকা নারীর হাতে স্টেনগান-এর দৃশ্য আকছার চোখে পড়ে।
দুটি বিশ্বযুদ্ধ, বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মেয়েদের জগৎটা অনেক বড় করে দিয়েছিল। বেশির ভাগ পুরুষ যুদ্ধে চলে যাওয়ায় কলকারখানায় খালি হয়ে যাওয়া পদে প্রচুর মেয়েরা ঢুকতে পেরেছিল। মার্কিন মুলুকে অনেক মেয়েই সরাসরি যুদ্ধের কাজ করেছিল। যদিও বেশিরভাগ সেক্রেটারি, কেরানি। ট্রাক ড্রাইভার, নার্স ও রাঁধুনি হিসেবে। নতুন প্রযুক্তি তাদের খুব কমই ব্যবহার করতে দেওয়া হত। এর একটি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ওয়াম্প অর্থাৎ উইমেন এয়ারফোর্স সার্ভিস পাইলটস। এখানে মেয়েদের মিলিটারি এয়ার ক্র্যাফট চালাতে দেওয়া হত, ছেলেরা যার ফলে নিশ্চিন্তে যুদ্ধে যেতে পারত।
তবে মার্কিন মেয়েদের তুলনায় সোভিয়েত মেয়েদের ভূমিকা ছিল অনেক বেশি প্রত্যক্ষ। মারিনা রাসকোভার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল নৈশ বোমারু বাহিনী, জার্মানরা এদের ‘রাতের ডাকিনী’ বলে। মেশিন গান চালাতে, নেভিগেশনে, যুদ্ধ জাহাজ এমনকি সরাসরি রণক্ষেত্রে বিচিত্র ভূমিকায় প্রায় দশ লাখ সোভিয়েত নারী অংশ নিয়েছিল।
জাপানের মতো রক্ষণশীল দেশেও যুদ্ধের ধাক্কায় বাইরের জগতে পা রাখার সুযোগ পায়। অস্ত্র কারখানা, ইলেকট্রনিক্স শিল্পে তারা বিপুল সংখ্যায় কাজ করতে থাকে। বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কায় এদেশের মেয়েদেরও কর্মজগতটা প্রসারিত হয়ে যায়, অচলাতনে ঢুকে পড়ে খোলা হাওয়া।
কথায় আছে ‘শয়তানকেও তার প্রাপ্য দিতে হয়’। তাই ধ্বংস, মৃত্যুর প্রান্তর থেকে যে বারুদের গন্ধমাখা বাতাস ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে, জন্ম নিয়েছিল গণ-অবসাদ, আত্ম-বিচ্ছিন্নতা, সেই যুদ্ধের ঝুলিতে হিরোশিমা-নাগাসাকি আর গ্যাস চেম্বার ছাড়াও দুটি সদর্থক জিনিসও ছিল, তা অস্বীকার করা যাবে না। একটি আধুনিক কম্পিউটার (এনিয়াক যার শুরু), অন্যটি নারীর ভূমিকার সম্প্রসারণ। যুদ্ধ আক্ষরিক অর্থেই মেয়েদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। শুধু রণক্ষেত্র নয়, শিল্প, কলকারখানায়, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির গবেষণায় সৃষ্টি করেছে নতুন নতুন সুযোগ, নতুন নতুন কাজের জায়গা, যেখানে বিচিত্র ভূমিকায় মাটি কামড়ে লড়ে যাচ্ছে আজকের নারী।

সূত্রঃ
১. নোটন নোটন পায়রাগুলি, কেতকী কুশারী ডাইসন, আনন্দ পাবলিশার্স।
২. প্রযুক্তি ও নারী বিবর্তনের প্রতি-ইতিহাস, তৃষ্ণা বসাক, গাঙচিল।                                                                                                                                                                                                                       HOME

এই লেখাটা শেয়ার করুন