জগাম্মা এবং তার ভূতপ্রেত – সদানন্দ সিংহ

জগাম্মা এবং তার ভূতপ্রেত – সদানন্দ সিংহ

জগাম্মা এবং তার ভূতপ্রেত     (অনুগল্প)

সদানন্দ সিংহ

জগার আম্মা অর্থাৎ জগাম্মার জগত জুড়ে ভূত-প্রেতের রাজত্ব। তিনকুলে তার কেউ নেই বললেই চলে। বিধবা জগাম্মার একমাত্র পুত্র কুড়ি বছরের জগা কুড়ি বছর আগে গ্রামের এক বামুন মেয়েকে নিয়ে সেই যে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছিল, তারপর থেকে তার আর কোনো খবর এখনো নেই।
জগাম্মার নিজের একটুকু জমির মধ্যেই সে পানচাষ করে। নিজের জমি থেকে পানপাতা তুলে সে গ্রামের বাজারে বাজারে বিক্রি করে। এতে তার দিন মোটামুটি চলে যায়। ঘরের কাছেই তার পান বরজ।
রাত হলেই সেই পান বরজের মাঝে ভূত-প্রেত নাচে। রাতে জগাম্মা ভয়ে সমস্ত দরজা-জানালা ভালো করে লাগিয়ে রামনাম আওড়ায়। রামনাম জপলে নাকি ভূত-পেত্নিরা কাছে আসতে পারে না। অনেকবার সে দরজা-জানালার ফাঁকফোকর দিয়ে ভূত-প্রেতের ছায়াকে দেখেছে। সে তাই সন্ধ্যে নামলেই খেয়েদেয়ে বিছানায় ঘুমোতে চলে যায়। কিন্তু ঘুম কি আর সহজে আসে ? ভূত-পেত্নিদের ফিসফাস কথাবার্তা, চলার ছমছম আওয়াজ — এসব যতক্ষণ থাকে সে ভয়ে সিটিয়ে থাকে। রাত বাড়লে এসব থেমে যায়। তারপর কখন সেও যে ঘুমিয়ে যায় সে জানে না। তবে একটা কথা সে ছাড়া কেউ জানে না যে এই ভূত-প্রেতরা প্রতিদিন তার এক উপকার করে যায়। প্রতিদিন পান বরজ থেকে পান তুলে এঁরা রেখে দেয়। সেই পানই সে বাজারে বিক্রি করে যায়। 

একদিন এক অমাবস্যার রাতে জগাম্মা তার পান বরজের মাঝে ভূত-প্রেতের ধূপধাপ দৌড়ের তীব্র আওয়াজ প্রথমে শুনতে পায়, তারপর যেন পেত্নির কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। সে ভয়ে কাঁপে। এর কিছুক্ষণ পরেই তার দরজায় ঠক ঠক করে কারা যেন আঘাত করতে থাকে। ভয়ে সে রামনাম জপতে থাকে। এইসময় বাইরে থেকে আওয়াজ আসে, দরজা খোলো, আমরা পুলিশ।
জগাম্মা প্রথমে ভাবে পুলিশের রূপ ধারণ করেই হয়তো ভূত-প্রেতরাই দরজা খুলতে বলছে। কিন্তু দরজায় এবার দমাদম লাথি পড়তেই সে ভয়ে ভয়ে দরজা খোলে। খুলেই সে দেখে দু’জন পুলিশ গ্রামেরই এক ছেলে এবং এক মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
একজন পুলিশ তাকে বলে, তুমি নাকি এই দুজনকে পান তোলার কাজে রেখেছ। এরা তোমার পান বরজে ফস্টিনস্টি করছিল বলে এদেরকে ধরেছি।
জগাম্মা এই প্রথমবার দুই জলজ্যান্ত কাঁচুমাচু ভূত-পেত্নিকে দেখে অবাক হয়। ভাবে, তাহলে এই ভুত-পেত্নিরই লীলাক্ষেত্র তার এই পান বরজ। মুখে বলে, হ্যাঁ, এদেরকে আমি পান তোলার কাজেই রেখেছি।