দুটি ফালতু কথা – ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য্য

দুটি ফালতু কথা    (ছোটোগল্প)

ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য্য

গল্প ১

এমন একটা যে কিছু হবে তার আগাম কোনো আভাস ছিলো না। বিকেল বেলায় গ্রামে ফিরে আকাশ থেকে পড়ে বিপিন। বিপিন হাঁসদা। শোনে বানেশ্বরী মাঠে নাচ গান হচ্ছে। আজ নাকি বিশেষ দিন। খুশির দিন। কিসের খুশি, ভেবে পায় না বিপিন।
হাঁটা দেয় বানেশ্বরী মাঠের দিকে। মাঠে পৌঁছায় বিপিন । দেখে এলাহি ব্যপার। আনন্দ আর আনন্দ। ছেলে বুড়ো সবাই নাচে। মাদল আর ধামাসের বাজনা ঝড় তুলেছে সবার মনে। অবাক হয়ে দেখে বিপিন। আশেপাশের গ্রামের আদিবাসীরা এসেছে। আসছে দলে দলে।

ভিড়ের মধ্যে থেকে দিকু কিসকু ডাকে বিপিনকে।
— লাচবি নাই! আই।
দিকুর কাছে গিয়ে দাঁড়ায় বিপিন। জিজ্ঞাসা করে, লাচিস কেনে দিকু?
— তু শুলিস নাই? নাচতে নাচতে প্রশ্ন করে দিকু।
— না।
— ওই যে ছবি হেমরম শহরের রাননী হইচে।
— ই ছবি হেমরম টো কে?
— সে টো জানি লাই। তবে শহরের রাননী হইচে ইটা জানি।
— কুন শহরের রাননী?
— সে জানি লাই। ই দিশের কুনো শহর। নাম জানি লাই। তবে শহরের রাননী হইচে ইটা জানি।
দিকুর কথা শুনে বিরক্ত হয় বিপিন। বলে, ভাগ। তাতে কি?
— কি বুলচিস তু! তাতে কি! রতিন বাবু বুলেচে…।
কোন রকমে রথীনবাবুর বলা কথাগুলি শেষ করে আবার নাচতে শুরু করে দিকু। অনাবিল আনন্দে মেতে ওঠে আবার।

রথীনবাবুকে চেনে বিপিন। শহরের নামকরা মানুষ। বাঘে গরুতে জল খায় রথীনবাবুর ইশারায়। দিন দুপুরে আদিবাসী পাড়ায় আসে রথীনবাবু। যাকে সামনে পায় দাঁড় করিয়ে মনের কথা শোনায়। বিপিনকেও শুনিয়েছে বেশ কয় বার। দেশকে ভালোবাসে ভীষণ। দেশ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই রথীনবাবুর। দেশ গোল্লায় চলে যাবে বিপিন। কথা শোন। আর তোরা যেভাবে চলিস তাতে মরণ হতে দেরি নেই।
— কি করলে বাঁচবো রতিন বাবু? জিজ্ঞাসা করেছিল বিপিন।
— হোপন সরেন মন্ত্রী হলে পাতে ভাত পাবি। পেটে শান্তি।
সে বছর পাঁচেক আগের কথা। বিপিন বলে,
— হোপন সরেন কে রতিন বাবু?
— আরে, তোদের মতন…।
— কুতায় বাড়ি?
— অত জেনে তোর কি লাভ। যা বলছি শোন। বিপিনের কথা শুনে রেগে উঠেছিল রথীনবাবু।
তারপর হোপন সরেন মন্ত্রী হল। বানেশ্বরী মাঠে নাচ গান হল সারা রাত। মাদল বাজল। ধামাস বাজল। আবির উড়লো বাতাসে। জীবন একই রইলো বিপিনদের।

একদিন রথীনবাবুকে জিজ্ঞাসা করেছিল বিপিন। রতিন বাবু, হোপন সর্দার মনতিরি হল আমাদের…।
বিপিনের কাঁধে হাত রেখে বলেছিল রথীনবাবু, শালা বেইমান হোপন। দল বদলেছে।
কথার মানে বোঝেনি বিপিন। চেয়েছিল রথীন বাবুর মুখের দিকে। চিন্তা করিস না বিপিন। এইবার আর মন্ত্রী নয়, রাজা করতে হবে আদিবাসীদের কাউকে। দেখবি তোদের দুঃখ কষ্ট ফুড়ুৎ। মাথা ঝাঁকিয়ে বলেছিল রথীনবাবু। ঘাড় নেড়েছিল বিপিন। আজ শোনে রানি হয়েছে ছবি হেমরম। এইবার তবে…।

ভিড় ঠেলে মাঠের একপাশে আসে বিপিন। বটতলায় দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুঁকছিল সুকুল। এক দফা নাচ শেষ করে দম নিচ্ছে। বিপিনকে দেখে বিড়ির প্যাকেটটা বাড়িয়ে দেয় সুকুল। বিড়ি জ্বালায় বিপিন। সুকুলু বলে, আজ রেতে লাচবি তু?
— কেনে?
— কেনে! ছবি হেমরম রাননী হলো। আমাদের অভাব ফুড়ুৎ। আমাদের দুখের দিন শ্যাষ।
— সুকুল, ছবি হেমরম টো কে?
— তু জালিস লাই?
— না।
— আমিও জানি লাই। উউউ দেক।
মাঠের ওই পাশে বিরাট একটা ছবি দেখিয়ে ভিড়ে মিশে যায় সুকুল। ‘উউউ দিক’ এ তাকায় বিপিন। আকাশ ঢাকা পড়েছে, এতো বড় ছবি। ছবি হেমরম। গলায় মালা। মুখে হাসি। দুই হাতে পরিচিত প্রণাম, অকৃত্রিম।
ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে বিপিন। বিড়িতে টান দেয়। ভাবতে থাকে। এই মুহূর্তে তার করণীয় কি বুঝে পায়না। মেয়েটা পোয়াতি। নিজের ঘরে এনেছে। এদিকে সংসারের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরায়। অভাবের সংসারে বিপিন মরে। অভাব বাঁচে। ভাবনায় মেরুদণ্ড দুমড়ে যায় বিপিনের। ভিড় ফুঁড়ে হাজির হয় রথীনবাবু। বলে, বিপিন যা যা নেচে নে। সুখের দিন এলো বলে। তোদের দুখের দিন এইবার ফুরুৎ।
রথীনবাবুর কথা যেনো বাগালে কালির মন্ত্রপূত জল। বিপিনদের গায়ে ছিটিয়ে দিলেই হল। সব রোগের নিরাময়।
যা, যা বিপিন নাচ। বলে রথীন বাবু।
বিপিনের ভাবনা ছাপিয়ে দমকা আনন্দ আসে। মাদল আর ধামাসের তালে গা মাথা দোলায় বিপিন। ধীরে ধীরে মেতে ওঠে আনন্দে। মুখে বলে, ছবি হেমরম রাননী হইচে।
“ছবি হেমরম টো কে?”, প্রশ্নটা বিপিনের গায়ের ঘামের সঙ্গে মিশে যায় বানেশ্বরী মাঠে।

গল্প ২

বস্তির মাঝের ছোটো মাঠটার সামনে এসেই দুই হাঁটু অসাড় হয়ে আসে রেশমীর। হাঁটতে পারে না আর। তলপেটে যন্ত্রণা অনুভব করে ভীষণ। ঠিক তলপেটে নয়, আরো কিছুটা নিচে। বুকের মধ্যে ধুকধুকুনি শুরু হয়। হৃৎপিণ্ড যেন ছিঁড়ে বাইরে বের হয়ে আসবে। ভীষণ ভয়ে মৃত মনে হয় নিজেকে। ফিকে হয়ে আসা ছবি গুলো ভীষণ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে হঠাৎ করেই।
দাঁড়িয়ে পড়লি যে? চল। রেশমীর পিঠে হাত দিয়ে বলে পুজা।
রেশমীর দুই পা কে যেনো পুঁতে দিয়েছে মাটিতে। ভয়ার্ত দৃষ্টি আটকা পড়েছে মঞ্চের উপর বসে থাকা মানুষটার উপর।
চল চল, ফাংশন শুরু হয়ে যাবে। বলে সামনে পা বাড়ায় পুজা।
দাঁড়িয়েই থাকে রেশমী।
সামান্য দূরেই একটা ছোটখাটো একটা মঞ্চ তৈরি হয়েছে। ফুল মালায় সাজানো। চারপাশে ঝকঝকে আলো। বস্তির পরিচিত আঁধার ধুয়ে গেছে আজ। গান বাজনা শুরু হবে। তার আগে অতিথির গলায় মাল্যদান। অতিথি সেই অজিতবাবু। ঘোষণা হচ্ছে, এইবার এলাকার বিশিষ্ঠ সমাজসেবী শ্রী অজিত চক্রবর্তী মহাশয়কে বরণ করে…।
গলা শুকিয়ে আসে রেশমীর। মাথা ঘুরতে থাকে। এইবার বুঝি মাটিতেই পড়েই যাবে।
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে সমাজসেবী অজিত চক্রবর্তী। ঘোষক বলে চলেছে, আপনারা সবাই চেনেন। এই শহরের পরিচিত নাম। সমাজের বিভিন্ন গঠনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত অজিতবাবু মহাশয়। অজিতবাবু গত দুই বছর জেলে ছিলেন। দুর্ভাগ্য। মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। তবে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। আজ সত্য সামনে এসেছে। অজিতবাবু জেলার বাইরে পা রেখেছে আজ। তাই…।
তলপেটে হাত দিয়ে বসে পড়ে রেশমী। আঠারো বছরের রুগ্ন শরীরটা দুই বছর আগের যন্ত্রণার অনুভূতি টের পায় নতুন করে।
এইবার অজিত বাবুকে কিছু বলবার জন্য অনুরোধ করছি।
মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে সমাজসেবী অজিত চক্রবর্তী। বলা শুরু করেছে, আমার প্রিয় মা, ভাই ও বোনেরা। আপনারা জানেন সমাজের মহিলা কল্যাণে আমাদের আদর্শ …।
রেশমী এই মুহূর্তে দুই বছর পিছিয়ে রয়েছে। বাবার নাইট ডিউটি। খাবার দিয়ে ফিরছে। লাইন টপকে এই পাড়ে আসতেই বাঘের খপ্পরে পড়ে। আর…।
… সমাজের সকল শ্রেণীর মহিলাদের মর্যাদা দিয়ে সামনে আনতে হবে। এই কাজে আমরা সবার চেয়ে এগিয়ে। আপনারা দেখেছেন এই শহরের পৌরসভার চেয়ারম্যান …। বলে চলেছে অজিত চক্রবর্তী।
গরম রক্ত স্রোত দুই পা বেয়ে নামতে থাকে নিচের দিকে। শরীরের নিম্নদেশে হাত দেয় ছোঁয়ায় রেশমী। না, এই মুহূর্তে শুকনো পোষাক। পুরানো অনুভূতিটা ভীষণ ভাবে সতেজ হয়ে উঠেছে। দাঁতে দাঁত চেপে যন্ত্রণা সহ্য করে রেশমী।
…তাই এলাকার যুবকদের বলতে চাই, মেয়েদের সম্মান দিয়ে…।
বক্তব্য শেষ। তুমুল হাততালি। সাদা গাড়ি চেপে চলে গেছে অজিতবাবু। মঞ্চে শুরু হয়েছে গান। আকাশ বাতাস মুখরিত। বস্তিটা আজ অন্য রকম লাগছে।

উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে রেশমী। রুগ্ন শরীরটা যেনো রক্তশূন্য হয়ে পড়েছে। জোর নেই দুই পায়ে। ভীষণ ভয় জাপটে ধরেছে। ক্ষীণ কণ্ঠে রেশমী ডাকে, পুজা…।

গল্প ৩

— ওহ, হোয়াট এ শট! বিউটিফুল। এক্সেলেন্ট। আই হ্যাভ নেবার সিন বিফোর!
চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠেছে নীলুদা। উত্তেজিত ভীষণ। অসীম আনন্দে দপ দপ করছে মুখ। দুই হাত উপরে তুলে বলছে, ওমেন মুভ ফরওয়ার্ড। বীরাঙ্গনা এগিয়ে চলো।
— নীলুদা কি হলো? থাকতে না পেরে জিজ্ঞাসা করি আমি।
— আমার দেশের মেয়েদের কথা ভেবে গর্ব হচ্ছে আমার। আই অ্যাম প্রাউড অফ…। অনেকটা যাত্রাপালার সংলাপ বলার মত করে বলে চলেছে নীলুদা। শ্রোতা আমি।

আজ রবিবার। বাড়িতেই ছিলাম। দুপুরে নীলুদার ফোন। বলে, সন্ধ্যা বেলায় বাড়িতে আয়। একসঙ্গে খেলা দেখবো। নীলুদার কথা শুনে জিজ্ঞাসা করি, কি খেলা নীলুদা?
— সত্যি কোথায় পড়ে রয়েছিস তোরা! আজ একটা ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে চলেছে, আর তুই বলছিস কি খেলা! তোদের জন্যই দেশটার কিছু হবে না। একা রামচন্দ্র কতো করবে! আমার মত আকাট মূর্খদের কথা ভেবে নীলুদার গলায় হতাশা ধেয়ে আসে। ফোনের এই প্রান্তে আমি। নীলুদার কথার অর্থ তখনও অধরা আমার কাছে। তবে এইটুকু বুঝেছি বিষয়টা যাই হোক না কেনো, নীলুদার আমদানি করা দেশপ্রেম এই মুহূর্তে জ্বলে উঠেছে দাউ দাউ করে। সৌজন্যে শ্রীরামচন্দ্র।

রামচন্দ্র একজন মহান দেশনায়ক। স্বপ্নের দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখায়। সুখ সন্ধানের বাণী শোনায়। নীলুদা স্বপ্ন দেখে। আরো অনেকেই দেখে। নীলুদা রামচন্দ্রের ভক্ত। আমি নীলুদার ফ্যান। রামচন্দ্রে বিশ্বাস নেই আমার।

শোন, শুরু করেছে নীলুদা, আজ থেকে মহিলা ক্রিকেট লীগ শুরু হচ্ছে। বিশ্বে এই প্রথম কোনো বিশ্বমানের ওমেন ক্রিকেট খেলা। পৃথিবীকে পথ দেখলাম আমরা, মেয়েরাও পারে। আর এই কাজে রামচন্দ্র…।
বিষয়টা বুঝেছি। নীলুদা, এই ব্যাপারে রামচন্দ্র এলো কি ভাবে? প্রশ্নটা গলার কাছে এসে থমকে দাঁড়ায়। জিজ্ঞাসা করিনি আর। আপদ আপ্যায়নে কাজ কি। এই নিয়ে অনেক কথা আগেই শুনিয়েছে। অলিম্পিকে মেয়েরা পদক পেয়েছে। দেশের গৌরব। রামচন্দ্রের অনুপ্রেরণা ছাড়া অসম্ভব। তাছাড়া বঞ্চিত, নিপীড়িত সমাজের মেয়েরাও আজ উঠে এসেছে সামনের সারিতে। পৃথিবীর কাছে আমার দেশের প্রতিনিধি আজ তারাই। এই কাহিনি আবারও শুনতে হবে। তাই ইচ্ছে করেই দাঁড়ি টানলাম আমার প্রশ্নে।
নীলুদার বিশ্বাস দেশের মেয়েদের সামনে এগিয়ে দিয়েছে রামচন্দ্র। এমন যুগাবতারের উদার ভাবনার জন্যই দেশের মেয়েরা গলি থেকে রাজপথে স্বমহিমায় বিরাজমান।

সন্ধ্যা বেলায় নীলুদার সঙ্গে বসে মহিলা ক্রিকেট খেলা দেখছি। ছোটো ফরম্যাটের খেলা। উবু কুড়ি কুড়ি। এই সময়ের ভীষণ জনপ্রিয় ফরম্যাট। মার আর মার। চার আর ছয়। ছয় আর আউট। গ্যালারিতে নাচ, আলোক প্লাবন, বাহারি পোষাক…। বিনোদন। বিনোদন অফুরন্ত।

হতো না হতো না। এসব কিছুই হত না। আজও আমার দেশ আদিম গুহায় অন্ধকারে হামাগুড়ি দিত, যদি না রামচন্দ্রের আবির্ভাব হত। বলছে নীলুদা। শুনছি আমি। শোনা ছাড়া আর কিই বা করতে পারি। তবুও সামলাতে পারিনা নিজেকে। মুখ ফসকে দু এক কথা বেরিয়ে যায় মাঝে মধ্যে। এইমাত্র যেমন বলে ফেললাম, নীলুদা আমাদের দেশের মেয়েরা আগেও বিশ্বের দরবারে নজির সৃষ্টি করেছে। এটা নতুন কিছু নয়। তোমার হয়তো…। স্টপ ইউর ‘নজির’। বলে থামিয়ে দিল আমায়। মুখে কুলুপ দিলাম আমি।
ওদিকে টিভি কমেন্ট্রিতে ভীষণ উত্তেজনা। থমকে দাঁড়ায় নীলুদা। ছক্কা হাঁকিয়েছে। লাইভ দেখতে পায়নি নীলুদা। আমাকে থামাতে ব্যস্ত ছিল। দাঁড়া, শটটা দেখে নিই। রিপ্লে দেখে অভিভূত। বলে, আনবিলিভেবেল! অবিশ্বাস্য। বার কতক হাততালি দিয়ে আমার দিকে মুখ ঘোরালো। আচ্ছা এত কথা বলছিস, তোর শহরের পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান কে? প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়ে পাথর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে। জল কোনদিকে গড়াচ্ছে বুঝেছি আমি। বলি, মাননীয়া ছবি হেমরম।
— তিনি কে? নীলুদার প্রশ্ন।
— মানে! একজন মহিলা।
— শুধু কি তাই? একজন পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর শ্রেণীর মহিলা। তিনি গুরুত্তপূর্ণ পদে বসেছেন। আগে এমন হয়েছে কখনো?
— না, এই শহরে হয়নি ঠিকই, তবে…।
— ব্যস। স্টপ মাই ব্রাদার। এইবার বোঝ সমাজের প্রতিটি কোনায় রামচন্দ্রের দৃষ্টি রয়েছে। দেশের প্রত্যেক মহিলাকে যোগ্য সম্মান দাও। মর্যাদা দাও। ওরে, রামচন্দ্র হলো অবতার, অবতার। বুঝবি পরে।
কি বলা উচিত ভাবছি। সমাজ বদলেছে সত্যি। সে তো বদলায়। সময়ের সঙ্গেই বিবর্তিত হয় সমাজ। যুগে যুগে সেটাই হয়ে এসেছে। তবে ব্যক্তি বিশেষের প্রভাব তো থাকেই। তাদের দূরদৃষ্টি ত্বরান্বিত করে সমাজ বিবর্তন। সে কথা অস্বীকার করবে কে। নীলুদার রামচন্দ্র তেমন ব্যক্তি কিনা সে কথা সময় বলবে। সে মূল্যায়ন হবে পরে।

আসলে, আবার নীলুদা। বিবেকানন্দ বলেছিলেন, মহিলাদের এগিয়ে না আনলে দেশের উন্নতি অসম্ভব। এতকাল তোরা স্বামীজির জন্মদিনে গলায় মালাটাই ঝুলিয়ে দিলি, তাঁর কথার মূল্য আর দিলি কই! নীলুদার গলায় আপশোশ। লাভ নেই। লাভ নেই। তোদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এখনও সময় আছে। রামচন্দ্রের…।
পরপর চার বলে চার ছক্কা হাঁকিয়ে আকাশে ব্যাট তুলেছে ব্যাটসম্যান। নীলুদা চেয়ে আছে টিভির পর্দায়।
হাততালি দিচ্ছে। রিয়ালি, আই অ্যাম প্রাউড ফর…।
নীলুদা, তুমি বলছো এগিয়ে চল বীরাঙ্গনা। ঠিকই আছে তবে, আমার দুটো কথা শোনো…।
আরে রাখ তোর গল্প। ওসব ফালতু কথা লোকে মানবে না। আমাকে থামিয়ে দেয় নীলুদা। ওদিকে ছয় মেরেছে ব্যাটসম্যান। কমেন্ট্রিতে হাই এক্সাইটমেন্ট। হাততালি দিচ্ছে নীলুদা। আর একটা ছয় হলেই ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হবে। আমার দেশের মুকুটে নতুন পালক সংযোজন। আমার দেশের মেয়ের অনন্য কীর্তি।
আমি অপেক্ষায় রয়েছি কখন দুটো “ফালতু” কথা শোনাতে পারবো নীলুদাকে।