সমর চক্রবর্তীর কবিতা
যাপন সমর চক্রবর্তী হে করমের গাছ! দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে রোজ রোজ, যতবার আমি তোর কাছে আসি; মুখ ফুটে বলা প্রতিটি কথা আশ্চর্য গান হয়ে উঠে! আর পা বাড়ালেই শুরু হয় আমাদের সমবেত নাচ। আমি আর কখনো যাবো না শহরে।
যাপন সমর চক্রবর্তী হে করমের গাছ! দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে রোজ রোজ, যতবার আমি তোর কাছে আসি; মুখ ফুটে বলা প্রতিটি কথা আশ্চর্য গান হয়ে উঠে! আর পা বাড়ালেই শুরু হয় আমাদের সমবেত নাচ। আমি আর কখনো যাবো না শহরে।
টেলিপ্যাথি সদানন্দ সিংহ এই তোর সুসময়, বিস্তারিত অবগাহন আর ধান ভানতে শিবের গান আর আমি এই চরাচরেই আটকে আছি। চিনচিন বেদনার সংকটময় সময় এক হাত দান কবে মেরে বসে আছি সুশীতল স্থান — কোথায় কেন কবে আর ভাবি না ভাবি না আর কোনো গুপ্ত অসম্পৃক্ত কথা কিংবা সাজানো মরূদ্যান জাগতিক চিন্তায় কাটানো জীবন, রক্তমাংসে গড়া পথ চলে গেছে বহুদূর, এক অজানায় বন্ধু, আমার এই টেলিপ্যাথি কি শুনতে পাচ্ছো ?
ব্যাটারি সনজিৎ বণিক ব্যাটারির খয়ে যাওয়া স্পৃহা দ্রুতগতিতে ঘড়ির কাঁটাকে পারে না জাগিয়ে দিতে, এক সময় থেমে যায় ঘড়ি, সময় বাড়ে। ভোরের শিশিরের শব্দেই গতিশীলতা কমে যায়, উবে যায় শিশিরবিন্দু সূর্যতাপে। ঘড়ির ভেতরে মরা ব্যাটারি গলে যায় মরা পোকামাকড়ের মতো, জঙ ধরে মৃতের শরীরের মতোই। ব্যাটারি পাল্টে দিতেই টিক টিক শব্দ মান-অভিমানের মতোই বুকের ভেতর তুলে রাখে রহস্যের বাড়াবাড়ি, জেগে ওঠে সময় ঘুম ভাঙে অ্যালার্মের নরম শব্দাবলীতে, জেগে থাকা ও জাগিয়ে রাখার মন্ত্রগুপ্তি তোমার কানে যেতেই ভালবাসার দুচার কলি…
অসীমে ঝাঁপ দেবে একাকী নদী রহিত ঘোষাল তুমি আমার বাড়ির ছাদে কাপড় মেলে আমার মিথ্যে গায়ে পরে একা একা চলে গেছ মহাসমুদ্রের কাছে ওখানে আমাদের সদ্যোজাতকে ভাসিয়েছ যেই দেখলে সেখানে তখন নদী এসেছে অসীমে ঝাঁপ দিতে সে তোমাকে দেখে আর কিছু বলতে পারেনি তার সমস্ত কথার মতো পলিমাটি সে ডুবিয়ে দিতে ভুলে গেছে তোমার হাতে স্যালাইন ফোটানোর ক্ষত থেকে বহুমূল্য মুক্তো ঝরে পড়ছে এসবের কিছুই তুমি আমাকে বলে যাওনি সব আমি জেনেছি বালিয়াড়ির থেকে শীতের রাতে শেষ বাসে তারপর…
তরঙ্গ প্রভঞ্জন ঘোষ তরঙ্গে মিশিয়েছো ব্রহ্মাণ্ড আমরা অপোগণ্ড সে তরঙ্গে যোগ করি না বন্ধ করি লেনাদেনা ভরিয়ে সকল অসার কণা করছি লণ্ডভণ্ড! ঝিঁঝিঁর ক্ষুদ্র মুখের থেকে এক তরঙ্গ উঠে জলতরঙ্গে নদীর বুকে এক তরঙ্গ ছোটে। এক তরঙ্গ পাখির মুখে এক তরঙ্গ গাছের এক তরঙ্গ শ্বাপদকুলের এক তরঙ্গ মাছের এমনি সকল শব্দকণা নিত্য অবশেষে তোমার অপার ইথার কণায় নিখুঁতভাবে মেশে। আমরা সুবোধ সুর ধরি না সুচারুময় ঠিক মিশি না কণায় কণা যোগ করি না কেবল খণ্ড খণ্ড, আপ্ত সদাই ব্যাপ্ত…
আবাহন বিশ্বজিৎ দেব এসো তুমি, যন্ত্রণার অতৃপ্ত জহর মরে গেলে যেরকম সব কিছু মনে হয় প্রেমের শহর এসো মুগ্ধতা, আমাদের এই সব খুনোখুনি, না লিখতে পারার সারারাত যন্ত্রণা এসো প্রতিরূপ, ফিরে না আসার দিকে চলে যাওয়া প্রতিটি মুহূর্ত আবলুশ ২ বিশ্বজিৎ দেব ওহে দ্রবণিকা, এসো সিরিয়াল দেখি হাত থেকে পড়ে গিয়ে কাচের গেলাস খান খান কান্নাকাটি, বিহ্বলতা দেখি এখন কি ভরা জুলাইয়ের মাস! চলো আকাশপ্রতিভা দেখি, কাপালিকা গুরু গুরু যামিনীর পলাতকা দেখি আমাদের নয়নাভিরাম আবলুশ, এরকমই পচে যাবে আঁশ,…
মানুষ খোঁজা সুদীপ্ত বিশ্বাস মাঝেমাঝে খুব একা লাগলে আমি মানুষ খুঁজি গাছের মতো প্রিয় মানুষ অরণ্যের মতো গভীর মানুষ পাখির মতো প্রাণবন্ত মানুষ নদীর মতো দিলখোলা মানুষ পাহাড়ের মতো উদার মানুষ আকাশের মতো উন্মুক্ত মানুষ প্রকৃত মানুষ খুঁজে পেলে তাকে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে আমার হৃদয়ের চোরা কুঠুরিতে আমার প্রতিটি আলোকিত কক্ষ, প্রতিটি সীমাহীন অন্ধকার তাকে দেখাতে ইচ্ছে করে তাকে পেয়ে খলবল করে কথা বলতে শুরু করে আমার গুমরে ওঠা দুঃখগুলো। দহন সুদীপ্ত বিশ্বাস ধুলোর ঝড় উঠেছে মরু-রাত্রিতে চাপচাপ…
জীবনযাপন খেলি কিশলয় গুপ্ত সুখটাকে সমর্পণ শব্দে রেখেছি হাতে হাতে।এইমত গুজরান টেনে আমিও একদিন অতীতের সঙ্গে মিশে যাব ভেবে হাসি। কার কাছে কত কষ্ট আছে নিয়ে আসা হোক। এই দেখো পেতেছি দুই হাত, হাতের উপর পাঁজর সর্বস্ব বুকে অনন্ত স্বপ্নের ঝড়;ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে ইহকাল পরকাল তারপর যবনিকা হাতে আসুক কেউ। এত যে হাহাকার ভরা “চাই, চাই” গান এত যে বেসুরো বাজা ভাঙা বেহালার প্রেম একমুঠো মাটি কিনতে পারে তেমন রাজা কই! কোটি লোকের ভিড়ে তেমন একটা মানুষ পেয়ে…
স্বপ্নের সিঁড়ি রণজিৎ রায় কবে আসবে তুমি ? তোমার আগমনের প্রত্যাশায় কপাট খোলা রেখে খোলা জানলায় পথ চেয়ে আছি বাতাসে বৃক্ষের পাতা কেঁপে উঠতেই হৃদয় খুলে প্রহর গুনি প্রহরের পর প্রহর অভিমান বরফের মতো জমে পাথরের মতো নিরেট হতে থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছে পৃথিবীর আয়ু ফুরিয়ে আসছে তোমার আমার কী হবে অন্য একটি জগৎ বিজ্ঞান মানে না তুমি কি বিশ্বাস করো আমি বিজ্ঞান পড়েও দিব্যি মেনে নিই প্রত্যাশায় উড়বো ত্রিভুবন অনন্তকাল ধরে। শরীরের সান্নিধ্য কি সব সুখের উৎস মনে দুঃখ…
ভার্জিন শুভেশ চৌধুরী ফলটি ভার্জিন। ফল-এ একটি কামড় দিয়ে দিলেই ফলের ভার্জিনটি চলিয়া যাইবে। মানুষ খাবার খায়। কত ফল-ফসারীর ভার্জিনটি লোপ করে তার পরিমাণ করা যাবে না । আমি কৌমার্য রাখি নাই। আমি বাবা। আমার বিশ্বাস আমি স্নেহশীল। কৌমার্য রক্ষা না করায় আমার কোন পাপ হইবে না, কারা জানি বলছে রাত জাগা পাখি শুভেশ চৌধুরী না। পাখি রাত জাগে না। ঘুমের মধ্যে শুধু আড়মোড়া ভাঙে আর আবার ঘুমিয়ে পড়ে যারা আজ না ঘুমালো তাদের জন্য কাল কোন বাজারহাট অফিস…