সমর চক্রবর্তীর কবিতা
পাপ সমর চক্রবর্তী পুণ্য এই তীর্থে এসে দেবীর অঙ্গবস্ত্রে তুমি মোটেই স্পর্শ করো না। ধূপের সুতীব্র গন্ধে ঢাকা আঁধার প্রকোষ্ঠে বুঝে ফেলবে তুমিও পাথরের মূর্তিতে তিনি একজন — নগ্ন পুরুষ !
পাপ সমর চক্রবর্তী পুণ্য এই তীর্থে এসে দেবীর অঙ্গবস্ত্রে তুমি মোটেই স্পর্শ করো না। ধূপের সুতীব্র গন্ধে ঢাকা আঁধার প্রকোষ্ঠে বুঝে ফেলবে তুমিও পাথরের মূর্তিতে তিনি একজন — নগ্ন পুরুষ !
ইলাম বাজার জঙ্গল রহিত ঘোষাল ইলামবাজার জঙ্গল বসন্ত দুই হাজার কুড়ি। তোমার হাত ধরে ঝরে পড়া পাতার উপর পা, পায়ে নুপুর। নীল-সবুজ পোশাকে খোলা চুল ধার ঘেঁষে প্রায় শুয়ে পড়েছে রোদ তোমার ঘাড়ে, খয়রি গাছের ডালে ডালে। কাজল ছাড়াই ছড়িয়ে পড়েছে আবদার, সেই নির্জন অরণ্যে আর কিছু মুহূর্ত শাড়ির আঁচলে, নাকি চেয়ে থাকা অকারণ সব কথা তুলে রাখবো শুকনো পাতায়। ইলামবাজার জঙ্গল বসন্ত দুই হাজার কুড়ি বিকেল বেলায় হাঁটতে বেরোলাম। তোমার হাতে রুপোর মল, আজ আর তোমার কাঁধে কোন…
ভূমিকম্প বিধ্বস্ত তুরস্কের সেই সকাল শুভাশিস চৌধুরী ১. দৃশ্যপট আমি তো আছি ভয় কি রে তোর বড়দি যে তোর! নয়কো দাদা। তুই ছাড়া যে কেউ নেই আর আহা! ভাইটি আমার, ঘুমিয়ে কাদা। ঘন্টা পেরোয় ঘন্টার পর কেটে গেছে সাড়া রাত কেমন করে সরাই পাথর বয়স আমার মাত্র সাত। কেউ এসে পাথরটা সড়িয়ে দাও মানুষের কাছে আমাদের নিয়ে যাও। ঐ শোনা যায় পায়ের শব্দ আসছে ওরা…
কখনও এমন নিঃস্ব মনে হয়নি সঞ্জীব দে কখনো এমন নিঃস্ব মনে হয়নি! জঙ্গলে গরু চড়াতে গিয়ে বাঁশি বাজাতে বাজাতে গরু হারিয়ে কতবার একা বাড়ি চলে এসেছি — তখনও এমন নিঃস্ব মনে হয়নি! এখন সব আছে অথচ কি যেন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে আছি প্রতিদিন। এক নিগূঢ় নিঃস্বতা এক নিগূঢ় স্তব্ধতা এক বেওয়ারিশ শূন্যতা চিতাবাঘের মতো তেড়ে বেড়াচ্ছে জীবন। এই কোন স্কিজোফ্রেনিয়া! পৃথিবীর মানুষগুলো ঢুকে যাচ্ছে খোলসের ভেতর! পৃথিবীকে কুয়ো বানিয়ে ফেলছে! অজ্ঞতা। সুন্দর নীলাকাশ, প্রকৃতি, তারা, সমুদ্রের উচ্ছ্বাস, উদয়াস্ত, ঝিঁঝির…
শ্যাওলা সবুজকথা বিজয়া দেব দেয়ালের গায়ে গায়ে শ্যাওলা সবুজ, শ্যাওলা রঙের শাড়ি মনোরম খুব। শোভিত হয়েছে এক বুটিক বাজারে, চাহিদা দারুণ আছে, মনোলীনা বলে। দেয়াল টিঁকবে না এই ঝড়ের দাপটে, পথ ঘর একাকার হয়ে যাবে রাতে। বুটিকের শাড়িগুলো গোছাতে গোছাতে, পথ ঘর এক হবে আজ বুঝি রাতে? দেয়াল ক্ষয়েছে যত বাহারি হয়েছে তত শ্যাওলার ভার, মনোলীনা, চমকিত বিপণিতে আলোর সম্ভার, শ্যাওলা সবুজ রঙ প্রেরণা শাড়ির, রেখাচিত্রে আলোকিত সৃজনের মীড়। দেয়াল ধসেছে রাতে পথ ঘর এক, মনোলীনা মন কাড়া কথা…
ফিরে দেখা সুজিত বসু কলেজ কেটে দুপুরবেলা উত্তেজনার সেই সিনেমা জীবন যে এক মধুর সফর দেখিয়ে দিত রাজেশ হেমা ক্লান্তি বিষাদ দুঃখ কাঁধে দুপুররাতে চলতে থাকি এখনও ঘুম ভাঙায় ভোরে নাম না জানা অচিন পাখি সূর্য ডোবে বিকেলবেলা সূর্য ডোবে রক্তপাতে সুখের গোলাপ বিষাদচাঁপা অপাপবিদ্ধ ওই দুহাতে হলুদ ভোরে বাতাস আনে শিশিরভেজা পবিত্রতা একটু পরে গনগনে রোদ ডাকছে মনের রুক্ষতাকে মহিষকালো মেঘের ডাকে দিচ্ছে সাড়া জলের ফোঁটা এমন একটা বাদলা দুপুর ভোলায় মনের দুঃখটাকে সন্ধেবেলা শাঁখের আওয়াজ এখন শুধু…
কৈশোর সোহেল রানা মাছরাঙা মন নিয়ে চষে বেড়ানো পুকুর ঘুঘু-ডাকা-দুপুর, কিংবা ফিঙের বহতা পাখায় তার কুচকুচে শরীর ও জ্বলজ্বলে চোখে এক দূরন্ত কিশোর। উড়ে বেড়ায় ফড়িং — কৃষ্ণচূড়া রং, প্রজাপতি-বিকেল, যার মনে ফুটে-থাকে সবুজ সকাল। আলোকলতা সোহেল রানা চোখের নিমেষেই বৃষ্টি নামে রোদ ওঠে আবার মুহূর্তেই অন্ধকারে আকাশ ভরে! আমি অন্ধকার কুড়িয়ে কুড়িয়ে চোখের পাতাভর্তি আলোকটুকু বাতাসের গায়ে মাখি। আলোকলতা, আলোকলতা, ওহে আলোকলতা কোথায় তোমার বাড়ি? কোথায় তোমার তরী? আমার ঘাটে নোঙর করবে, নেবে তোমার বাড়ি? যদিও জানি, তুমি…
শিক্ষা ব্রতীন বসু একবার কাছে আসবে? ও বলল কেন? তোমাকে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হয়। ও বলল, আমার গায়ে অনেক কাঁটা। জানি, তবুও। ও বলল, আমি তো নরম নই, কেন ডাকছ ? আমি তোমার মত হতে চাই। ও বলল, তোমার আমার পার্থক্য কি? গোপন তৃষ্ণা। আমার বালির কাছে কোন চাহিদা নেই, তুমি কিভাবে এখনো চাও, জানবো। নারীটা এলো ক্যাকটাসের কাছে।
আমিও আঙুল চাটি কিশলয় গুপ্ত অনেক কিছু ঘটায় এবং ঘটে খালি চোখে সবই দেখি বটে কেউ হাসে, কেউ বা ভীষণ চটে আমি আঙুল চাটি একমাত্র আমিই মাথামোটা প্রাতঃরাশে দেশটা চিবাই গোটা কম্বলহীন-হাতে শুধুই লোটা নীচে ভিজে মাটি যেমন খুশি, যেখানে খুশি দেবেন স্বর্গ এটা, নম্বরে সে সেভেন বোঝেন নি তো? আরে মশাই “হেভেন” কেন কান্নাকাটি কবি? আপনি অদরকারি – কাটুন ঝাঁপির ভিতর যত খুশি ফাটুন অসহ্য হলে বসে আঙুল চাটুন আমিও আঙুল চাটি
অলীক সেতার দেবারতি দে ১. তার জন্মদিনে কবিতা পাঠ করতো কুয়াশা আর – নৈঃশব্দের ভেতর থেকে উড়ে আসতো পৃষ্ঠা উল্টানোর শব্দ। ২. তাকে নিয়ে লিখতে বসলে জানালায় হাল্কা বাতাস উঠানের দড়িতে দুলতে থাকে হলুদ নরম সুতি কবিতা কিংবা বার-হাত লাল সিল্ক। ৩. অনন্ত নক্ষত্র বাগান পেরিয়ে গীতিকবিতার কোমল নিঃশ্বাসের মতো আজও দাঁড়াই প্রেমিক তোমার দরজায়।