টাইগার শিকার
সুদীপ ঘোষাল
সুমন্তদা তোতনকে বললেন, এবার টাইগার হিল যাব, বুঝলি তোতন।
তোতন বলে, যাবে না উঠবে। যাইহোক তার আগে টাইগার হিল সম্বন্ধে একটু বলো সুমনদা।
সুমন্তদা ওরফে সুমনদা বলতে শুরু করলেন, সূর্যোদয়ের সময়, কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখরগুলি কম উচ্চতায় সূর্যকে দেখার আগে আলোকিত করা হয়। টাইগার হিল থেকে মাউন্ট এভারেস্ট, 8848 মি উঁচু, সবেমাত্র দৃশ্যমান। কাঞ্চনজঙ্ঘা 8598 মিটার,মাউন্টের চেয়ে উঁচু দেখায় এভারেস্টের চেয়ে কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত হওয়ায় এভারেস্ট পৃথিবীর বক্রতার কারণে। টাইগার হিল থেকে এভারেস্টের সরলরেখার দূরত্ব 107 মাইল মানে 172 কিমি। একটি সুস্পষ্ট দিনে, কুরসিয়ং দক্ষিণে এবং দূরত্বে তিস্তা নদী, মহানন্দা নদী, বালাসন নদী এবং মেচি নদী দক্ষিণে মিশ্রিত হয়ে দৃশ্যমান। ছোলা রেঞ্জের উপরে ৮৪ মাইল দূরের তিব্বতের চুমাল রি পাহাড় দৃশ্যমান টাইম হিলের নিকটে সেনচেল বন্যজীবন অভয়ারণ্য।
তোতন বলল, যাবার রুট, একবার জানতে চাই।
সুমনদা বললেন, প্রথমে সহজেই দার্জিলিং যাব। দার্জিলিং শহর থেকে 13 কিমি দূরে টাইগার হিল। টাইগার হিলের দিকে যাওয়ার বিভিন্ন রাস্তা রয়েছে। এছাড়াও, টাইগার হিল থেকে প্রায় 33 কিমি দূরে, শিলিগুড়ি জং ট্রেন স্টেশনটিও অবস্থিত। এছাড়াও, আপনি আপনার যাত্রা শুরু করতে বাগডোগরা বা এনজেপিতেও পৌঁছাতে পারেন। তাই, পাহাড়ে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন পছন্দের পথ রয়েছে।
যথারীতি বাঁধাছ্যাদা, ব্যাগপত্তর গোছানো,প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে নেওয়া এসব কাজ তোতন নিজেই করে।
সকালে উঠে সুমনদা ও তোতন মর্নিং ওয়াক সেরে, ব্যায়াম করে খেয়ে এবার কাজে বসেছে। সুমনদার সামনে কয়েকটি বই।তিনি বইগুলি ব্যাগে ভরছেন।
তোতন কাজ করতে করতে জিজ্ঞেস করে, সুমনদা, এবার কি নতুন রিভলবারটা সঙ্গে নেবে। এর বিশেষত্ব কী?
সুমনদা বলেন, অত্যাধুনিক রিভলবার ‘প্রবাল’ লম্বায় প্রায় ১৭৭.৬ মিলিমিটার। ‘প্রবাল’ হল প্রথম রিভলভার যা সাইড সুইং সিলিন্ডার দিয়ে সহজে ট্রিগার টানা যায়। বাজারে অন্যান্য রিভলবারে এই সুবিধা নেই। ওই সমস্ত রিভলবারে কার্তুজগুলি ঢোকানোর সময় ভাঁজ করতে হয়।
তোতন বলে, হ্যাঁ পড়েছিলাম কাগজে, উত্তরপ্রদেশে কানপুরের সরকারি মালিকানাধীন ‘অ্যাডভান্সড ওয়েপন অ্যান্ড ইকুইপমেন্টস ইন্ডিয়া লিমিটেড’ রিভলবার ‘প্রবাল’ তৈরি করেছে। এদের মোট আটটি কারখানা রয়েছে। ওই সব কারখানায় ছোট অস্ত্র এবং আর্টিলারি বন্দুক তৈরি হয়ে থাকে। অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড পুনর্গঠন এবং সাতটি ভিন্ন পাবলিক সেক্টর ইউনিটকে কর্পোরেটাইজ করার পরে কারখানাটি ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল।
সুমনদা বলেন,ঠিকই বলেছিস।তবে প্রবালটা আমার ব্যাগেই থাক। এবার তো বেড়াতে যাচ্ছি, নিশ্চয় প্রবালের প্রয়োজন হবে না।
তোতন বলে, সুমনদা, ঢেঁকি স্বর্গেও ধান ভানে। কখন কী যে হয়।
সুমনদা বলেন, বেশ পরিণত কথাবার্তা বলছিস। শুনে ভাল লাগল। চল দেখাই যাক।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ধরে নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে দার্জিলিং শহর। সুমনদা শহরে পা দিয়েই দেখলেন, কোনো এক ভদ্রমহিলার ব্যাগ নিয়ে চম্পট দিল একজন দুস্কৃতি। সকলে দেখেও চুপ করে থাকল। তোতন আশেপাশের লোককে জিজ্ঞেস করে জানল, চোরটা, টাইগার নামে এক কুখ্যাত গ্যাং লিডারের দলের লোক। টাইগার মাস্তানের নাম শুনে এখানে সকলে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে।
সুমনদা বললেন, এবার টাইগার, শিকার করতে হবে নাকি?
তোতন বলল, তোমার ছুটি নেই দাদা।
তারপর দুজনে লজে ঢুকে খাওয়াদাওয়া করে টানা ঘুম দিয়ে রাত বারোটায় উঠল। সুমনদা ও তোতন বাইরে এসে রাতের শোভা উপভোগ করছে।
হঠাৎ একটা লোককে ছুটতে দেখে সুমনদা বলল,কোথায় যাবে,ছুটছেন কেন?
লোকটি একটা ভোজালি বের করে সুমনদাকে বলল, আমার সঙ্গে চল, দেখতে পাবি অনেককিছু।
সুমনদা বললেন, চলুন, দেখি।
তোতন সুমনদাকে অনুসরণ করে তেরো কিমি দূরে টাইগার হিলে চলে এলো গাড়িতে চেপে।
ভোজালি হাতে লোকটা সুমনদাকে ধরে চলে এল গাড়ি থেকে নেমে।
সুমনদা ভোজালি হাতে লোকটাকে অনুসরণ ক’রে আসলে ওদের পান্ডা টাইগারকে ধরতে চায়।
সুমনদা টাইগার হিলের পাদদেশে একটা কাঠের ঘরে ঢুকে দেখলেন, ওঘরে নানারকম নেশাদ্রব্যে ভরতি। চরস, কোকেন, গাঁজা, মদের বেআইনি কারবারে ওরা সিদ্ধহস্ত।তারপাশের ঘরে অনেকগুলি মহিলা ও পুরুষ কথোপকথনে ব্যস্ত।
সুমনদা শুনলেন এক মহিলা বলছেন, আমি এই নোংরা প্রস্তাবে রাজী নই।
পুরুষটি বলে, এখানে চেঁচিয়ে৷ কোনো লাভ নেই। এটা টাইগারদের এলাকা।কেউ আসতে সাহস পাবে না।
আর একজন মহিলা অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছেন সুমনদার মুখের দিকে।
সুমনদা সবকিছু বুঝে নিলেন এক লহমায়। তিনি বুঝলেন, অসহায় মেয়েদের ধরে এনে এখানে জোর করে দেহ ব্যবসা করতে বাধ্য করা হয়।
তারপর সুমনদা ও তোতন একে একে ওদের দলের লোকদের ধরাশায়ী করে ফেলল।
এবার একজন এসে বলল, আমি টাইগার। এখনি তোদের গুলি করে মারব।
সুমনদা তড়িৎ গতিতে টাইগারের মাথায় রিভলবর ধরে দাঁড়িয়ে থাকলেন।
তোতন থানায় ফোন করেছে আগেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এলো ও একটা মস্ত ডাকাতদল ধরা পড়ল।
রাত শেষ হয়ে, সকাল হতে আর দেরি নেই। টাইগার হিলে সূর্য ঊদয় দেখে ওরা সকলে লজে ফিরলেন।