ব্রতীন বসুর কবিতা

শেষ ইচ্ছে

ব্রতীন বসু

 

চম্পার অন্য বাড়িতে কাজ ঠিক মাসখানেক হল।
দু হাজার মাইনে বেশি।
ত্রিশ বছর ধরে মাসিমা মেশোমশাই এর সেবা
করছে। নিঃসন্তান দম্পতি।
ভাইপো সম্পত্তি পাবে। চম্পা দুহাজার মাইনে বেশি।
এই মাস খানেক আগে মারা গেছেন কত্তা
একশো ছুঁতে গিয়ে অল্পের জন্য থেমে গেলেন।
গিন্নির নব্বই চলছে
হপ্তায় দুবার ডায়ালিসিস লাগে
এখন ছেড়ে যাওয়া যায় না।
আর কিছুদিন তারপর মাইনে বাড়বে।
বুড়ি বলে, হ্যাঁ রে চম্পা আমি মরলে কাঁদবি তো
মুখে আগুন দিবি তো?
আর তোমার ভাইপো?
বুড়ি হাসে। আর বলে, থাকিস কিন্তু কাছে।
চম্পা ছিল।
মারা যাবার দিন অবধি।
মুখে আগুন দিয়েছিল চম্পাই।
বুড়ির মারা যেতে দেরি হওয়ায় অন্য কাজটা হাত ছাড়া হয়েছিল।
দু হাজার মাইনে বেশি ছিল। এখন বেকার।
ভাইপো বিদেশে থাকায় এল দু মাস বাদে।
বুড়ির সব সম্পত্তি চম্পার নামে লিখে দিল।
বলল, তুমি দেখলে পিসিকে সারা জীবন
তোমারই তো প্রাপ্য চম্পাদি।
চম্পা কেঁদে ফেলল।
জানেন বাবু, মাসিমা যেদিন মারা গেল, একটা কাজ আগে থেকেই ঠিক ছিল, দু হাজার মাইনে বেশি, ফোন করলাম তাদের।
বলল অন্য লোক রেখে দিয়েছে। এত দেরি।
সেদিন কাঁদতে পারিনি।
মাসিমা বলত, আমি মরলে কাঁদিস কিন্তু।
আর কেউ কাঁদার নেই।
আজ কাঁদলাম।
বলুন দাদাবাবু স্বার্থ ছাড়া কি মেঘও কাঁদে?
গায়ে গতরে ভারি লাগে তবেই না সে জল দেয়।
আমি কি মাসিমার শেষ ইচ্ছে রাখলাম দাদাবাবু?
আমি কি রাখতে পারলান না দাদাবাবু
মাসিমার শেষ ইচ্ছা আমার কাছে?