পলাশ ফুলে পিরিত শুরু – ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য্য

পলাশ ফুলে পিরিত শুরু – ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য্য

পলাশ ফুলে পিরিত শুরু       (ছোটোগল্প)

ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য্য

(প্রয়াত কবি অরুণ চক্রবর্তী: শ্রদ্ধার্ঘ্য)

“চলে এলাম দিগন্ত।” ডাকটা কানে বাজে।
মনটা ভীষণ খারাপ আমার। প্রত্যেক বছর দোল পূর্ণিমার আগের দিন চলে আসতো এখানে, আমার কাছে। “চলে এলাম দিগন্ত” বলে পা রাখতো আমার হোম স্টেতে।” আসুন আসুন দাদা। শরীর…” বলে পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ নিতাম। জড়িয়ে ধরত বুকে, যেনো কত আপনার জনকে সাদরে কাছে টেনে নিয়েছে। হাতে দিত একটা চকলেট। ধরো। এমন ভাবেই আসা ছিল মানুষটার, প্রতিবার। বছরের পর বছর।
একটা ঘর পরিষ্কার করে রাখাই থাকতো ওনার জন্য। সাদা চাদর পরিপাটি করে বিছানায় পাতা। মাথার বালিশ, সেও সাদা কভারের আড়ালে। ঘরে একটা চেয়ার। একটা টেবিল। খাবার জলের জগ। আর টেবিলে কয়েক মুঠো তাজা লাল পলাশ ফুল, নিজে কুড়িয়ে এনে রেখে দিতাম টেবিলে। দোলের সময় এই সামান্য অভ্যর্থনায় কি যে খুশি হত মানুষটা! মন খুলে হেসে বলত, “বাবা এত আয়োজন!” তারপর ঠাণ্ডা জলে স্নান সেরে দুপুরের আহার পর্ব। সামান্য বিশ্রাম তারপর। সেই ভোর রাতে চুঁচুড়া থেকে রওনা দিয়ে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে পুরুলিয়া, শ্রান্ত তো বটেই। বয়সটাও তো কম হয়নি। বিশ্রামের প্রয়োজন হতো। তারপর বিকেল আসার আগেই এক কাপ লিকার চায়ে চুমুক দিয়ে শুরু হতো গল্প। হাজারো কথা। এরই ফাঁকে ঝোলা থেকে বেশ কয়েকটা কবিতার বই বের করে ধরিয়ে দিত আমার হাতে। “কোলকাতা বই মেলায় কিনেছি জানো। পড়ে দেখো ভালো লাগবে। কবিতা লিখছো তো? কই বহুদিন তোমার লেখা কবিতা পাইনি।” লজ্জায় বিনম্র হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি। “আসলে দাদা হোম স্টের রিনোভেশন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। সিজিন আসছে। সেভাবে কবিতায় সময় দিতে পারিনি”।
“সে বললে কি করে হবে দিগন্ত! জীবনে কাজ তো থাকবেই, তাই বলে …।”
ততক্ষণে ঘরের জানালার গারদ টপকে লালচে আলো এসে দেওয়াল রাঙিয়েছে। ব্যস্ত হয়ে উঠত মানুষটা। লাল পাঞ্জাবিটা গায়ে চড়িয়ে নিয়ে বলত, “যাই ওদের নিমন্ত্রণ দিয়ে আসি।” সামনের রাস্তা টপকে পা রাখত পলাশের বনে। ধীর পায়ে হাঁটা দিত দূরে ওই টিলার পিছনের আদিবাসী পড়ায়। আগামীকাল দোল তাই সকলকে নিয়ে আবির মেখে বিলিয়ে দেবে নিজেকে ওদের মধ্যে। স্বভাব বাউল। নিজেকে বিলিয়ে দিতে জানত, তাই। ঝরে পড়া পলাশের ফুলের শয্যায় গড়াগড়ি দেবে বাচ্চাদের মত। তাই দেখে ওরা বলবে বাউল বাবা তু পাগল বটিস। তখন মানুষটা দুই চোখ সামান্য কুঁচকে বলবে, পাগল ছাড়া কি বাউল হওয়া যায় রে। সকলে হাসবে হো হো করে। সবার হাসির তালে হাসি বিলিয়ে দেবে মানুষটা। সেই হাসির প্লাবনে উতলা হয়ে উঠবে পলাশবন, সে এক আনন্দমুখর ক্ষণ। প্রস্ফুটিত পলাশ বুঝি এই ক্ষণের অপেক্ষায় ছিল। আজই যেনো তার সার্থক জনম। তারপর তারপর লোকটা খোলা গলায় গাইবে , ফাগুন লেগেছে বনে বনে…। দূরের পলাশ জঙ্গলে খুশির হাওয়া উঠবে। মাথা দুলিয়ে একে অপরকে স্পর্শ করবে নিষ্পত্র গাছগুলো। ফুলভারে নুইয়ে আসা বৃক্ষরাজির ফাগুন আলিঙ্গন বুঝি। ওই মানুষটাই ফাগুন এনেছে জঙ্গলে প্রত্যেক বারের মতোই, সবাই বলবে সেই কথা।
ই বার তু সেই কথা গুলো বল, অনুরোধ আসবে ওদের থেকে। মানুষটা বুঝবে এইবার কি করতে হবে। তারই লেখা কবিতা, এক্কেবারে মেঠো ভাষায় লেখা। তার অর্থ ওরাও বইতে পারে তাদের হৃদয়ে, সইতে পারে কানে। তখন মানুষটা আমার দিকে চেয়ে বলবে বুঝলে দিগন্ত সার্থক হে আমার কবি জনম। যদি জন্মান্তর বলে কিছু থাকে পরজনমেও আমি এদের কবি হতে চাই। মুখে পরিচিত কোমল হাসি। চশমার ওপাশে চিকচিক করবে দুই চোখের কোল। নিজেকে সামান্য প্রস্তুত করে নিয়ে শুরু হবে,
“… তুয়ার ঘরকে আসেছে ফাগুন
তুরুতুরু মারংবুরু
পলাশ ফুলে পিরিত শুরু…”
ওরা সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বসে থাকবে। আর সুকুল মুর্মু , দুখু সর্দার মাদলটাতে তাল ঠুকবে। কবিতা না গান তফাৎ বুঝিনা আমি। শুধু চুপ থেকে শুনে যাবো। হঠাৎ করেই উঠে দাঁড়াবে ফুলটুসি। কোমরে দুই হাত দিয়ে বলবে, ই বার সেই লোকটাকে লিয়ে…। মানুষটা বুঝে যায় ফুলটুসির মনের কথা। বলে, ওহে দুখু তৈরি তো? তাল দিও ঠিক করে। তারই লেখা কবিতা কখনও কবিতার ছন্দে কখনো বা গানের সুরে,
“অ রবিঠাকুর হে –
তুকে ই বোশেখে গেরামে লিয়ে যাব-অ
শহর তুকে…”
হাঁপিয়ে গেছে মানুষটা। গরম তেমন না পড়লেও কপালে ফুটে উঠেছে স্বেদ বিন্দু। বয়সতো হলো। বসে পড়ে পলাশের নিচে। মাথায় ফুলের মালা গুঁজে আসা তরুণীর দল বলবে অনেক হলো বাউল বাবা। তু টুকুস থাম ইবার আমরা লাচবোও। আহা, নাচ নাচ নাচ। আমিও নাচবো। আনন্দে আটখানা। গাছে গাছে লাল পলাশ, বাতাসে উড়বে হলুদ আবির, আদিবাসী গান, মাদলের শব্দ, তালি দিয়ে পা মিলিয়ে ঘুরে ঘুরে এগিয়ে পিছিয়ে নাচ নাচ আর নাচ। এরই ফাঁকে মানুষটা বলবে দাঁড়িয়ে কি দেখছ! চলে এসে দিগন্ত। পা মেলাও আমাদের সঙ্গে। আজ বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। এগিয়ে যাবো আমি। এ আহ্বান অগ্রাহ্য করি কেমনে! বসন্ত বান্ধব ডাকছে আমায়। পলাশ প্রান্তরে এই মানব কোলাজ জীবন্ত বসন্ত আজ। মিশে যাবো আমি রং বাহারে, গান বাহারে, আনন্দ সাগরে। সবার মাঝে আলাদা করতে পারবো না আমার আমিকে। আমার অস্তিত্ব ওদের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। বুকের ভিতরে আনন্দের বান আসবে।

“দাদা পার্টি এসেছে।” রমজান আসে আমার কাছে।
ভাবনা ঝাঁকুনি খায়। কোথা থেকে? জিজ্ঞাসা করি।
সেই যে ডানকুনির ভদ্রলোক…।
টেন্ট নাকি কটেজ? বুকিং ছিলো?
হ্যাঁ। টেন্ট কটেজ তো খালি নেই দাদা। উপরের দুটো ঘর নিয়েছে। আর ঘর খালি নেই, ওই ঘরটা ছাড়া। বলে রমজান।
বেশ।
চলে যায় রমজান। ইদানীং পলাশের সময় বহু মানুষের ভিড় হয় আমাদের এলাকায়। হিড়িক। শহুরে হিড়িক। পলাশ ফুলের মালা পরে, পলাশ ফুল খোঁপায় গুঁজে আদিবাসী মেয়ে পুরুষের সঙ্গে ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাসিয়ে দেওয়া, ট্যাগ লাইন” ঘুরে এলাম পলাশ-রাজ্যে, ওদের সঙ্গে কিছুটা…”।
এই সময় ঘর, টেন্ট, কটেজ সব ভর্তি থাকে। নানা রকমের মানুষ। নানা রকম রুচি। কাউকে গ্রহণ করে প্রকৃতি। নিঃশব্দে তিরস্কার করে কাউকে বা। সে সব বুঝি আমি। বলার তো কিছুই থাকে না আমার। হাজারো রকমের গানে গমগম করে আমার “পলাশ বান্ধব” রিসোর্ট এন্ড হোম স্টে।
“পলাশ বান্ধব! গেলে থাকতে দেবে আমাকে?” জিজ্ঞাসা করেছিল মানুষটা। অনেক দিন আগের কথা।
প্রায় বছর পনেরো আগে আদ্রায় কবিতা উৎসব। আমি আমন্ত্রিত কবি। প্রধান অতিথি হয়ে মঞ্চে বসেছিলেন তিনি, অচেনা তখন। সকলের কবিতা শুনছে মগ্ন হয়ে। শেষ হয়েছে কবিতা পাঠ। ডাক পড়ল আমার। কি যেনো নাম তোমার কবিতাটার? পলাশ বান্ধব বলি আমি। বেশ লিখেছো জানো। এক্কেবারে সহজ সরল কথা। সহজ বোধ্য। একেবারে সোজা এসে হৃদয়ে পৌঁছালো। আরো লেখ। প্রণাম করি আমি। নামটা বেশ হয়েছে, পলাশ বান্ধব। আমি বলি আমাদের রিসর্টের…। সেবার-ই প্রথম আসা এখানে, আমার সঙ্গে। তারপর থেকে ছেদ পড়েনি কোনো বছর। আসছি দিগন্ত, কয়টা দিন থাকবো জানো, বলে হাজির হয়েছে এখানে। দিনে দিনে তার অকৃত্রিম ভালবাসায় স্নেহে সিক্ত হয়েছি আমি। পরিণত হয়েছে আমার বোধ, ভাবনা, কবিতা। শিখেছি কৃত্রিমতা বর্জন।
পলাশ ফুল বড্ড ভালোবাসতো। জানো দিগন্ত ফুলটা বড়ো অদ্ভুত। কোনো গন্ধ নেই। নয়নাভিরাম সৌন্দর্য! রঙের বাহারে আগুন লাগায় কবির মনে। একে দুচোখ মেলে দেখতে হয় শুধু। শুধুই দেখা আর অনুভূতিতে অন্তর রাঙিয়ে নেওয়া, নিশ্চুপে। আহা পলাশ গো তোমায় হেরি মুগ্ধ নয়ানে! বলে নীরবতা টেনে আনতো নিজেই। সেটাই যেনো সে পরিবেশে মাননসই হতো।

— আংকেল আমাদের রুমের এসিটা প্রবলেম করছে। চলো না প্লীজ। একটি পাঁচ ছয় বছরের বাচ্চা এসেছে আমার ঘরে।
আজ সকালেও গায়ে পাতলা চাদর নিতে হয়েছে, সেভাবে গরম আসেনি এখনও। তবুও গেস্টের এসির দাবি। গিয়ে দেখি এমসিবি নামানো। তুলে দিতেই ঘরে শীতল হাওয়া শুরু। মস্তিতে সোহাগা। মদিরার মৌতাতে স্বর্গ-সুখ। জড়ানো গলায় থ্যাঙ্ক ইউ পেলাম, পুরুষ না মহিলা কণ্ঠ বুঝিনি। কিচেনের খবর নিয়েছি খানিক আগেই। সব কিছু রেডি। ঘরের পান-পর্ব শেষ করে কিচেনে তারা কখন পৌঁছাবে কে জানে! জানালা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকাই। মাঝে মধ্যেই হই হই শব্দ তুলে পলাশ প্রেমীর দল গাড়ি হাঁকিয়ে চলেছে নিজ নিজ গন্তব্যে। রাস্তার ওপারের জঙ্গলের দিকে দৃষ্টি যায় আমার। ফেলে যাওয়া ভাবনার সুতোর খেই খুঁজে পাই আমি। পলাশ বনের মানব কোলাজ ফুটে ওঠে চোখের সামনে। দুখু সর্দারের মেয়ে রঙ্গনা মুখ খুলবে, তু কে আমি…। শাড়ির আঁচল থেকে মহুয়া ফুলের মালা বের করে পরিয়ে দেবে মানুষটার গলায়। আহা কি খুশি কি খুশি! পাশে বসে আমি ভাবি ঠিকই তো মহুয়া তো এই মানুষটার-ই ফুল। তুরা সবাই চুপ যা…। সবাইকে থামিয়ে গান ধরবে রঙ্গনা। ” …লাল পাহাড়ির দেশে যা…।” রঙ্গনার গলায় নিজের লেখা শব্দগুলো শুনে আনন্দে অশ্রু আসবে মানুষটার চোখে। আহা সার্থক সে লেখা! মাটির মানুষও সে কথায় গেয়ে, নেচে আনন্দ পায়। একজন কবি আর কি চায়! আমি ভাবি কি বিস্ময় প্রতিভা। মাটির কথা বলতে মাটির মানুষ সাজার কষ্টকর প্রয়াস করতে হয়নি লোকটাকে কোনোদিন। মাটির গন্ধ এমনই সাবলীল ভাবে প্রবাহিত রুধির ধারায়।
“দাদা, একটা ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে।” রমজান আসে আবার। ছিন্ন হয় ভাবনা। ঘর তো নেই! সব ভর্তি তো। বলি আমি।
নতুন একটা দল এসেছে। একটা ঘর দিলেই চলবে। যা লাগবে দেবে। উপরের রাস্তার দিকের ঘরটা…।
রমজানকে থামিয়ে দিয়ে বলি, তুমি তো জানো রমজান ওই ঘর অন্য কারোর জন্য নয়। চলে যায় রমজান। দুপুরের খাওয়া সেরে ফিরে আসি আমার ঘরে।
একমনে চেয়ে আছি সামনের আলমারিটার দিকে। পর পর সাজানো অনেকগুলি কবিতার বই প্রায় সবই ওই মানুষটার কাছে থেকে পাওয়া। পাশে রাখা একটা ছবি, আমিই সাজিয়ে রেখেছি। এক মুখ দুধ সাদা দাড়ি। মাথায় রঙিন বাহারি টুপি, সিকিমের লোকজনদের এমন টুপি পড়তে দেখেছি। পড়নে লাল পাঞ্জাবি, টকটকে লাল। কাঁধে লাল হলুদ ঝোলা। চিরাচরিত সাজে আমার প্রিয়তম মানুষটা হাসছে আমার দিকে চেয়ে। ছবিটা দেখে আমাকে একবার বলেছিল ” ওহ্ তুমি আবার আমার ছবি…।” মৃদু আপত্তি। “এটা একান্তই আমার প্রয়োজনে দাদা। আপনার আপত্তি টিকবে না এখানে।” বলেছিলাম আমি। বেশ, তোমার যেমন ইচ্ছে।
সকাল থেকে বসন্ত বান্ধবের অন্য চেহারা। আজ দোল। গেস্ট সব মত্ত বসন্ত উৎসবে। সারাটা দিন গান আর নাচ। নাচ আর গান। রং আর আবির। গ্লাসের টুং টাং। রঙ্গে বরসে ভিগে…, আরো অনেক কিছু। এও বসন্ত উৎসব!
সন্ধ্যা নেমেছে। রাস্তার দিকের সেই ঘরটায় বসে রয়েছি আমি। নিচের আলমারি থেকে ছবিটাকে নিয়ে এসে টেবিলে রেখেছি। মানুষটা না থাক আমার অনুভূতিটা অন্তত জাগরুক হয়ে উঠুক। সকাল বেলায় রঙ্গনা আর ফুলটুসি এসে মহুয়া আর লাল পলাশের মালা দিয়ে গেছে আমার হাতে, ওরা জেনেছিল মন খারাপের খবরটা। মানুষটা আজও মালায় সেজেছে, না না ভুল বললাম। মালা দিয়ে সাজিয়েছি আমি।
আকাশে বাঁধভাঙা জোছনা। চাঁদের আলোয় প্লাবিত চরাচর। ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি আমি মানুষটার কথা ভেবে। কোনো এক পার্টি গান বাজাচ্ছে “বালম পিচকারি …”। বড্ড বেমানান। মানুষটার ছবিতে প্রণাম করে রিসর্টের বাইরে আসি। সামনের রাস্তা টপকে হাঁটা দিই টিলার দিকে। এমন জোৎস্না ভেজা বনানীর আঁকাবাঁকা পথে আগেও হেঁটেছি কবির সঙ্গে। গলা ছেড়ে গান ধরত মানুষটা। আজও শুনতে পাই আমি। বহু দূরে ওই টিলার গায়ে বসে উদাত্ত গলায় গাইছে, “আজ জোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে…”। আহা এমন দিনে আমার প্রিয় মানুষটা নেই। নেই কেনো? এই পলাশ ফুলের থোকায় থোকায়, ওই টিলার গায়ে, ওই আদিবাসী পাড়ায় ছড়িয়ে রয়েছে সে। নিজেকে বিলিয়ে দিতে জানতো যে। কেমন একটা ঘোর পেয়ে বসেছে আমাকে। যেনো দূরের টিলা পার করে আদিবাসী গ্রামে পৌঁছালে দেখা পাবো তার। আমাকে দেখেই বলবে এসো দিগন্ত, এই বছর এখানে দোলের আয়োজন হয়েছে। ভালোই করেছো এসে। সামনে হেঁটে চলি আমি, সম্মোহিত যেনো। বহু দূর থেকে কে যেনো ডাকে আমাকে। স্পষ্ট শুনতে পাই জঙ্গল কাঁপিয়ে মাথা চাড়া দিয়েছে আমার নাম। থমকে দাঁড়াই আমি। রমজান বেরিয়েছে আমাকে খুঁজতে। আমার কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, কোথায় চলেছেন? ফিরে চলুন…।
একরাশ মনোকষ্ট নিয়ে ফিরে আসি আমি। উপরের সেই ঘরটায় বসে আছি। ভাবনায় বাউল কবি। হারিয়ে গেছে কোন অচিন দেশে! জানালার ওপারে অনন্ত বিস্তৃত চন্দ্রালোক সিক্ত নির্জন বনানী। ইচ্ছে যায় আমিও হারিয়ে যাই সেখানে। হয়তো দেখা পাবো তার কোনো প্রান্তরে, মেঠো চাঁদের দুধ সাদা জোছনায় আমাকে দেখে বলে, “এসো দিগন্ত। মেখে নাও জোৎস্নার গন্ধ। তারপর দু’জনে একসাথে…।”