ভিক্ষা – দেবাশ্রিতা চৌধুরী

ভিক্ষা – দেবাশ্রিতা চৌধুরী

ভিক্ষা    (অনুগল্প)

দেবাশ্রিতা চৌধুরী

ছনের চাল বাঁশের মাচা ঘরের দাওয়ায় বসে আছে বুড়ি। শণের মত চুল মাঝে মাঝেই চুলকোচ্ছে। তেল নেই সাবান নেই, পেটে একটি দানা পড়েনি কতদিন। ভিক্ষে করে মুড়ি, অথবা গাছের ফলমূল কচুসেদ্ধ করে খেয়ে বেঁচে আছে। কেন আছে তাও জানেনা। চোখের জলও শুকিয়ে গেছে।
মেয়েমানুষের আবার জাতই বা কি ধর্মই বা কি? এই কথা পেটের শত্রুকে বোঝাতে পারেনি বুড়ি। কমলা মাসি এখন কমলা ঠাকুমা। কিন্তু একদিন ছিল যেদিন কমলা সুন্দরী নামে এক ডাকে যৌবনকালের পুরুষের বুক ঢিপঢিপ করতো। শহরের রূপবান টেরিকাটা সিল্কের জামা গায়ে ছেলেটি যখন আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে তখন যুবতি মেয়েদের কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেল। কে কত কাছে যেতে পারে। কমলা কিছুই করেনি কিন্তু মানিকের যেন কমলার দিকেই টান।
অথচ সেদিন কমলার পরিণতির কথা মনে আসেনি কেন! সেই ছেলে চলে যাবার পর টের পেল পেটের শত্তুরের চিহ্ন। বাবা বের করে দিয়েছিল বাড়ি থেকে সমাজের ভয়ে। এখানে ওখানে চেয়েচিন্তে ছেলের জন্মের পর শরীর ভরসা করে তাকে বড় করেছে। গায়ে গতরে শক্তপোক্ত হয়ে ছেলে যখন বারোভাতারি বলে গাল পেড়ে ফেলে চলে গেল, তখনও কিছু বলেনি। আবার চেয়েচিন্তে জীবন কেটে যাচ্ছে কমলা ঠাকুমার। মনের গভীরে একটি আশা হয়ত একদিন শহুরেবাবু কিংবা তার ছেলের কমলার কথা মনে পড়বে। ভরদুপুরে দাওয়ায় বসে সামনের পথের দিকে তাকিয়ে থাকে কার আশায়!

আজ পঁচিশ বছর পর দাওয়ার সামনে এসে বিরাট এক গাড়ি দাঁড়াল। সাদা চুলের টানটান এক পুরুষ, সুসজ্জিত এক নারী এবং পেছনে ওটা কে? অকালবৃদ্ধ কমলা চোখ কচলে দেখে পটলা একমুখ হাসি নিয়ে।
কমলা আজ খুব খুশি, ভিক্ষে দেওয়ার আনন্দ জীবনে প্রথম অনুভব করল। সন্তানহীন মানিক ও তার স্ত্রী বহু পথ ঘুরে পটলাকে ভিক্ষে নিয়ে গেছে কমলার কাছ থেকে।