সস্তা (অনুগল্প)
সুদীপ ঘোষাল
সরল দে একজন সরল মানুষ। সে সস্তায় জীবন ধারণ করার জন্য ফুটপাতের সস্তা পোশাক ব্যবহার করে। বাড়িতে এসে জামা পরতে গিয়ে দেখে সাইজে অনেক বড় হয়ে গেছে। আবার সস্তায় দর্জির দোকানে সেলাই করে ঠিক করে জামা। আবার জামা কাচাকাচি করার পরে ছোটো হয়ে যায়।
সরল সস্তায় খাবার খোঁজে। মুরগীর রোগ হলে সস্তায় কিনে খায়। সস্তার শরীর সরলের, জোর কিন্তু বাড়ে। জমিতে ফসল ফলায়। খোলা আকাশের নিচে আনন্দে থাকে।
সস্তায় তার জীবন চলে বলে সকলে তাকে সস্তা সরল বলেই ডাকে। সরল এতে রাগ করে না। কারণ লোকে ঠিকই বলে।
সস্তায় কোনো কিছু পেলে সে বাড়ি নিয়ে যায়। তারপর বকুনি খায়। সস্তায় একবার একটা প্যান্ট কিনে সে বাড়ি গিয়ে কাচার পরে দেখে সেটা আর পরার উপযুক্ত নয়। তবু সে পরে। সে বলে, যতই হোক টাকা দিয়ে কেনা।
একবার সরল রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ একটা দুর্ঘটনায় একটি ছেলে রাস্তায় পড়ে রইলো সস্তা মুরগীর মত রক্তাক্ত অবস্থায়। দামি লোক কেউ নেই, এগিয়ে আসার মত। তারা তাদের দামি জীবন নিয়েই ব্যস্ত। সস্তা জীবনের জন্য তাদের সময় নেই।
কিন্তু সস্তা সরল রাস্তায় পড়ে থাকা সস্তা রক্তাক্ত ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।
ডাক্তারবাবু বললেন, রক্ত লাগবে। কিন্তু আমাদের স্টকে রক্ত নেই। সঙ্গে সঙ্গে গ্রুপ পরীক্ষায় সরলের সস্তা রক্তের সাথে ছেলেটির সস্তা রক্ত মিলে গেলো। সরল তার সস্তা রক্ত দিলো। ছেলেটি প্রাণ ফিরে পেলো।
সরল রাস্তায় নেমে আবার একটা সস্তা মূল্যে পাউরুটি কিনে খেতে শুরু করলো। দুপাশের মূল্যবান জীবন প্রবাহ সরলকে দেখে হাসতে থাকলো, পোকা লাগা দেঁতো হাসির মত নিয়মিত সুরে। সরল ওসব তোয়াক্কা করে না।