অবতার অবতরণ – ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য্য

অবতার অবতরণ      (ছোটোগল্প)

ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য্য

…অবশেষে মানুষ শুয়োর হলো।
লম্বা শ্বাস নিয়ে নীলুদা থামলো। গল্পের খাতা থেকে চোখ তুলেছে। চাউনিতে তৃপ্তির আভাস। নীলুদা খুব খুশি হয়েছে। বল, কেমন লাগলো? হাসিভেজা দৃষ্টি আমার দিকে। আমি ব্যস্ত সামলাতে নিজেকে।
তখনো নিজেকে সামলে উঠতে পারিনি। মানে এমন কথা তো আগে শুনিনি। ‘মানুষ শুয়োর হয়ে গেলো!’ আর আমার কেমন যেনো সব ঘেঁটে গেলো।
গল্পে কিন্তু তেমনই লিখেছে নীলুদা। এইমাত্র শুনলাম সেই কথা। শেষ লাইনটা শুনে আমার বিচার বুদ্ধি ধাঁ। বুকে যেন লাগলো জোরে হাতুড়ির ঘা।
নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করি, নীলুদা মানুষ শুয়োর হলো কি করে? মানুষটা তো মানুষই রইল। তুমি শুধু মানুষের হার্ট রিপ্লেস করলে। মানে মানুষের শরীরে শুয়োরের হার্ট বসিয়ে মৃতপ্রায় মানুষটাকে বাঁচালে। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। গল্পের খাতিরে নিলাম মেনে। তারপর যা বললে, যে কেউ আঁতকে উঠবে সে কথা শুনলে। মানুষ শুয়োর হল!

দিস ইস দা প্রবলেম, এই হল সমস্যা। ঝাঁ ঝাঁ করে ওঠে নীলুদা। উত্তেজনার গুঁতোয় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। বলে, আই অবজেক্ট ইউর ‘গল্পের খাতিরে মেনে নিলাম’ , হোয়াই? দিস ইজ ফ্যাক্ট। মানুষের শরীরে বসানো হয়েছে শুয়োরের হার্ট। এই খবরে তোলপাড় হচ্ছে গোটা বিশ্ব। সবাই জানে, ইউ আলসো। ফলে, গল্পের খাতিরে নয়। একথা এমনিই মানতে হয়। ট্রু ফ্যাক্ট।
নীলুদা দাঁড়িয়ে আমার সামনে। সওয়াল করছে শুয়োরের হয়ে।

বসো তুমি নীলুদা, সরি, সরি। মেনে নিলাম, এটা সত্যি। আমরা সবাই জানি।
মেরিল্যান্ডের কয়েক জন ডাক্তার এই দুঃসাধ্য কাজ করেছে। এইবার বল, তার জন্য মানুষ কি করে শুয়োর হলো? জিজ্ঞাসা করি আমি।
কিছুটা শান্ত হয়েছে নীলুদা। শুরুতেই আমাকে নিয়ে একপ্রস্থ লোফালুফি খেলতে পেরে বেশ আনন্দিত। বোঝা যাচ্ছে মুখের হাসি দেখে। বলে কেনো মানুষ শুয়োর হলো? দেব, সেই প্রশ্নের উত্তর আমি আমার কথার শেষে। এসকেপিস্ট আমি নই। আপাতত যা বলি তাই শোন।

খবরটা পেপারে ছিল। মানুষের দেহে শুয়োরের হৃৎপিণ্ড বসানো হয়েছে। আজ বেশ কয়দিন হল সে মানুষ বেঁচে আছে। দিব্যি কাজ করছে শুয়োরের হৃদয়। আলোড়ন তুলেছে সেই খবর বিশ্বময়। এ এক অবিশ্বাস্য বিষয়। মানুষ করছে সে কঠিন কাজের প্রতিকূলতা জয়।
ঘটনাটা নীলুদাকেও দিয়েছে নাড়া। তবে অন্য ভাবে।

সেই অন্য ভাবনা ভেবেই তার কলম ধরা। তারপর এই গল্প প্রসব হল। মৃতপ্রায় মানুষকে বাঁচাতে শেষমেশ শুয়োর এর প্রয়োজন পড়লো। সেই নিয়েই নীলুদা গল্প ফাঁদলো। এই ঘটনা আসলে অবতারের অবতরণ, নীলুদার চোখে। এসবে বিজ্ঞান আসে কোথা থেকে? কোটি কোটি মানুষ ভুগছে যখন হৃদরোগে, আবির্ভূত হলো বরাহ অবতার, হৃদযন্ত্রণা থেকে দিতে নিস্তার।
বারেবারে বিপদ নেমেছে ধরাধামে যখন। বিষ্ণু অবতার হয়ে এসেছে, রক্ষা করেছে পৃথিবীকে তখন। ওই সবে বিজ্ঞান কিছু নেই। ছেলে খেলার বিষয়ও নয়, এ হলো ঈশ্বরের অভিপ্রায়। বোঝে সে সাধ্য কার।
অথচ বরাহ নিয়ে আমরা কতো খেউড় ফেলেছি বানিয়ে। তার প্রাপ্য সম্মানটুকু আমরা দিইনি, উল্টে কতো অসম্মান করেছি জমিয়ে। তা নিয়ে ভীষণ আপশোশ নীলুদার। শুয়োর তো শুধু শুয়োর নয়, সে বরাহ, বিষ্ণুর অবতার। ধর্মের কথা। কাজেই বিষয়টি অতি ভারী। হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। কাহিনি এই বিষয়ের উপর ভর করেই পল্লবিত হয়। নীলুদার গল্প পাঠ শেষ। এইবার আমার ছোটছোট প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। বলা ভালো নীলুদার নিজের যুক্তি কতটা ধারালো সেটাই প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
আসলে কি জানিস, আমরা ভুলে গেছি আমাদের ধর্ম। পুরাণ, বেদ এ সবের গুরুত্ব নেই, তাই করছি যত মন্দ কর্ম। ভাবিও না সে সব নিয়ে। নয়ত আমরা শুয়োরের প্রতি সুবিচার করতাম, ভেবে দেখিস কথাটা যুক্তি দিয়ে। তবে নিশ্চিন্ত থাক আমার কলম শুয়োরের পক্ষেই কালি খরচ করবে। আর আমাদের রামচন্দ্র অলরেডি এই নিয়ে কথা বলা শুরুও করেছে, ‘শুয়োরকে দাও অবতারের সম্মান, ফিরিয়ে নাও যতো খেউড় আর অসম্মান’। সঙ্গে নীলুদা আরো যোগ করেছে, রাখ বিজ্ঞানের বুজরুকি। ওই সব বলে চলবে না সত্যের ফাঁকি। আসলে এ কাণ্ড অবতারের অবতরণ। রামচন্দ্র নাকি বলেছে। তবে আর কি, মেনে নাও, যেমন নীলুদা মেনে নিয়েছে।
রামচন্দ্র হচ্ছে নীলুদার ভীষণ পছন্দের এক দেশনেতা। মহান দেশপ্রেমী, কোটি কোটি মানুষের বিধাতা। স্বপ্নের মত দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে দেশবাসীকে। রামচন্দ্রের দেশপ্রেম ধর্মের নামাবলী দিয়ে মোড়া। ধর্ম অন্ত প্রাণ। নীলুদা সেই সব কথা অনেক গল্পেই লিখেছে, রেখেছে রামচন্দ্রের মান। এক কথায় রামচন্দ্রের ভাবনাই নীলুদার ভাবনা। যাক সে কথা। সেদিকে এখন যাব না।

আচ্ছা, খানিক থেমে শুরু করেছে নীলুদা, কেউ দারুণ সাহসের সঙ্গে কোনো কাজ করলে আমরা বলি সাবাস বাঘের বাচ্ছা। বলি কি না?
হ্যাঁ, বলি কিন্তু…
কোন কিন্তু নয়। কাম টু দ্য পয়েন্ট, আমরা তাকে বাঘের বাচ্ছা বলি কি না? দিস ইস মাই কোয়েশ্চন। ডান হাতের তর্জনী আমার দিকে তুলে নীলুদা আবার চেয়ার ছেড়েছে।
আমি বলি, হ্যাঁ। বলি। এই তো কিছুদিন আগেই আমাদের দেশের সীমান্তে বোম ফুটলো। এই দেশ ও সেদেশ দু দেশেরই খানিক লোক মরল। আর তুমিই বলেছিলে বাঘ বাচ্ছা রামচন্দ্র। এতদিনে আসল দেশপ্রেম ফেটে বের হলো।
হ্যাঁ, নিশ্চয় বলেছিলাম। আজও বলি সে কথা। সে কথা থাক, আলাদা প্রসঙ্গ সেটা। কাম টু দি স্টোরি। তবে শোন, শুরু করি।
আবার দেখ কাউকে কাউকে বলি সিংহ। মানে তেমন রাজকীয় চলন, মেজাজ হলে লোকে তাকে পশুরাজই বলে। যেমন ধর ওই যে সেই ক্রিকেটার, বিশাল চেহারা। বোলারদের বলে বলে থাপ্পড় মারত, কি যেনো নাম? নীলুদা মনে করার চেষ্টা করছে। ডান হাতের মধ্যমা মৃদু টোকা দিয়ে চলেছে দুই ভ্রূর মাঝে। দুচোখ বন্ধ। থুতনি স্পর্শ করেছে বুক। স্মৃতি হাতড়ে উত্তর পেতে উন্মুখ।
কোন ক্রিকেটার বোলার দের থাপ্পড় মারত, ভাবছি আমিও। ক্লু দেবার চেষ্টা করে নীলুদা যদিও। আরে সে দারুণ ব্যাটসম্যান…
নীলুদা তেমন ব্যাটসম্যান অনেক আছে। আর এক্সট্রা কোনো ক্লু আছে?
না না, অত সাহসী খুব কম জনই ছিলো। মুখে চুয়িংগাম। হেলমেট ছাড়াই মাঠে নেমে বোলারদের খুন করতো…
বুঝেছি। রিচার্ডস, স্যার ভিভ রিচার্ডস। বলি আমি। ঠিকই বলেছে নীলুদা। রিচার্ডসকে সিংহ বলতো সকলে একদা।
হ্যাঁ, হ্যাঁ। রেডিওতে যখন বাংলায় কমেন্ট্রি শুনতাম বলতো যেনো মাঠের রাজা, সিংহের মতো করছে বিচরণ।
বলতো কি না? নীলুদা তাকিয়ে, মাপতে চাইছে আমি সহমত কি না।
হ্যাঁ ভিভের হাঁটা চলা বলা এমনকি তাকানো তেমনই। বোলারদের বুক শুকিয়ে যেতো ভিভের চোখে চোখ পড়তো যখনই। বললাম আমি।
এক্সাক্টলি। তাহলে যখন কেউ অমন ভয়ডরহীন হয় আমরা তাকে বাঘ বাচ্ছা বা সিংহ বলি। কিন্তু আদতে বাঘ, সিংহ তো পশু। আমরা কি বলি তাকে পশু বা পশুর বাচ্ছা?
ছি ছি, তাই কি বলা যায়, বলি আমি।
কেনো বলি না? কারণ আমরা বিশেষ পশুর কোনো বিশেষ স্বভাব বা গুণকে মাথায় রাখি। সেই দিয়েই তুলনা টানি। এতে পশু বা মানুষ কারোর হয় না সম্মানহানি। কিন্তু শুয়োরের বেলায়? জোরালো প্রশ্ন এইবার নীলুদার গলায়।

আরো আছে। বাংলার বাঘ, সর্বজন শ্রদ্ধেয় আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। তার ব্যক্তিত্ব, সাহস এইসব চারিত্রিক গুণাবলী ওই ‘ বাঘ ‘ শব্দেই ধরা আছে। তাতে অতি সহজেই বোঝানো যায় সিংহহৃদয় সেই মানুষটিকে। মানে কোনো ভূমিকা ছাড়াই একটা বজ্রকঠিন চরিত্র ভেসে ওঠে। চোখের সামনে। আবার ধর কেউ ভীষণ ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ফিল্ডিং করলো। আর সঙ্গে সঙ্গে বাজপাখি বলে দর্শক চিৎকার করে উঠলো। দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলে শুকুন দৃষ্টি বলে। আমরা কোনো না কোনো পশু বা পাখির গুণ খুঁজে নিই। এবং এই তুলনায় আমরা মানুষের গুণের সমাদর করি। দু ঠোঁটের হালকা হাসি ফুটে উঠেছে নীলুদার। মাথা দুলছে সামনে পিছনে।
আমি চুপ। কারণ নীলুদার এ কথায় ফাঁক নেই কোথাও।
অথচ দেখ। এটুকু বলে লম্বা একটা দম নিলো। কি বলবে সাজিয়ে নিচ্ছে ভিতর ভিতর। আবার সঠিক সময়ে সঠিক কথা মনে পড়ার উত্তেজনা সামলে নিচ্ছে, সেটাও হতে পারে। অথচ দেখ, প্রচণ্ড রেগে গিয়ে আমরা হামেশাই বলি ‘শুয়োরের বাচ্ছা’। মানে রাস্তা ঘাটে প্রতিদিন শুনি একজন আর একজনকে বলছে শুয়োরের বাচ্ছা। এমন খেউড় পথে নামলেই শোনা যায়। মানে শুনতে না চাইলেও আমাদের শুনতেই হয়। যেমন ধর, অফিস টাইম। যাত্রী বোঝাই বাস ছুটে চলেছে। হঠাৎ করেই সিগন্যাল লাল। বাস দাঁড়িয়ে পড়লো। অবধারিত ভাবে কেউ না কেউ তীব্র রাগে শুয়োরের বাচ্চা বললো। কে বললো? তাকিয়ে আমার দিকে। আমি বলি যাত্রীরাই হবে।
ঠিক। মাথা নাড়ে নীলুদা। কিন্তু বললো কাকে? আবার প্রশ্ন।
তাইতো, কাকে বললো। ভাবছি।
মানে যে কোনো রকম রাগ, দ্বেষ, বিরক্তি, ক্ষোভ সব কিছুর বহিঃপ্রকাশ হলো ওই শুয়োরের বাচ্ছা। বললো নীলুদা।
আচ্ছা। সহমত, ঠিক বলেছ। বললাম আমি।
কিন্তু কেনো? হোয়াই? হোয়াই শুয়োর? আমাকে থামিয়ে দিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় নীলুদা। বলে, অর্থাৎ আমরা বাঘ, সিংহের সঙ্গে তুলনায় আনবো বিখ্যাত মানুষদের। আর রাস্তা, ঘাটে, হাসপাতালে, ব্যাংকে বা অফিসেও হতে পারে অপছন্দের লোককে গালি দেবো শুয়োরের বাচ্চা বলে। মানে আমাদের মেন্টালিটিটা ভাব! শুয়োর কোন দোষ করেছে যে তার নাম আজ খেউরের সমার্থক।
সত্যিই ভাবার মতোই একটা কথা বলেছে নীলুদা। লোকজনের মানসিকতা এমনই। কেউ মিহিসুরে বলে কেউ বা কর্কশ স্বরে, অপছন্দের লোককে শুয়োরের বাচ্ছাই বলে।
তুই ভাব, আবার শুরু করেছে নীলুদা। অথচ পিতা বরাহ!
মানে? আবার খেলাম ঝটকা। শুয়োর পিতা! সে কি কথা, নীলুদা?
ওয়েট ব্রাদার। ওয়েট। তুই যদি পুরাণে চোখ রাখিস দেখবি বরাহ আসলে বিষ্ণুর তৃতীয় অবতার। এই পৃথিবী রক্ষা করার জন্য তার ভূমিকার কথা অস্বীকার করে এমন ক্ষমতা কার!
সেদিক দিয়ে ভাবলে, বরাহ মোদের আদি পিতা। আমাদের শুয়োরের পুজো করা উচিত। তাছাড়া, শুয়োরের জেদ কি কম! না, মোটেই তা নয়। হাজার বছর ধরে হিরণ্যাক্ষ নামে অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করে। বিরামহীন। অক্লান্ত। ভাব, কি অসীম জেদ! প্রতিদান মিললো? নো। কোনো জেদি মানুষকে বলা যায়, যে শুয়োরের মতো জেদ আপনার। বা যেমন ভাবে বলিস বাঘ বাচ্ছা, তেমনই বলতে পারবি শুয়োর বাচ্ছা? পারবি না। পিটিয়ে চামড়া গুটিয়ে ডুগডুগি দেবে বাজিয়ে। আপশোশ। আমাদের ধর্ম, আমাদের অবতারদের আমরাই যদি সম্মান না দিই তাহলে অন্যরা কি সম্মান দেবে? ছাই। আমরা তো আমাদের ধর্ম কর্ম কবেই বিসর্জন দিয়েছি। বরাহ অবতারের পুজো না করে রেস্তোরাঁয় অর্ডার দিচ্ছি…
থেমেছে নীলুদা। দুহাতে সামনের টেবিলে বাজিয়ে চলেছে। মনে হচ্ছে যেনো আরো লিখবো, আরো লিখবো বোল বাজাচ্ছে। মুখ গম্ভীর।
আমি বলি, নীলুদা এর পিছনে বিজ্ঞান আছে যথেষ্ট। মহিলা শিম্পাঞ্জি আর কোনো ‘ না – বানর ‘ প্রাণীর সংকরায়ণ হলেই মানুষের মতো প্রাণীর উদ্ভব সম্ভব। অন্য কিছু ভেবে সময় করো না নষ্ট। গবেষণায় তাই দেখা গেছে স্পষ্ট। সেই ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের ইঙ্গিত শুয়োরের দিকেই। হয়তো সে কথা থেকেই, অবিচার বরাহের প্রতি।
শোন তোর ওই কথা সাতগাছিয়ার হাটে বলিস। রাখ তোর গবেষণা। যেখানে সেখানে বিজ্ঞান দেখাস না। কেনো, পুরাণ ভুল কোথায়? রামচন্দ্র সেদিন বলেছে এ তো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে শুয়োরের সঙ্গে মানুষের নাড়ির টান। তাই আর নয় এ অন্যায়। শুয়োরকে আমাদের পুজো করা উচিত, সেটাই হবে ন্যায়।
শোন, চুপি চুপি একটা কথা বলি। গরুর অবস্থাও তেমনই হতো, যদি না…।
রামচন্দ্র না থাকতো, নীলুদার মুখের কথা ছিনিয়ে নিয়ে বলি আমি।
একদম ঠিক, নীলুদা বলে। তুই বা তোরা না মানলেও এটা খাঁটি সত্যি। গরু আজ গোমাতা হয়েছে। নয়তো পাচার হচ্ছিলো গরু রাশি রাশি। আজ আর সে দিন নেই। কারণ রামচন্দ্র। যদিও গরুর সম্মান সেই প্রাচীন কাল থেকেই। তবে ইদানীং গোমাতার সম্মান বেড়েছে তার পিছনে রামচন্দ্রের ভূমিকা অস্বীকার করবার উপায় নেই। দুগ্ধ তো প্রাণদায়ী বটেই, গরুর দুধে স্বর্ণ পাওয়া যেতে পারে, সে নিয়েও আলোচনা চলেছে বিদগ্ধ মহলে। এছাড়া গোমূত্রও আছে। অন্তত বর্তমান পরিস্থিতে গোমূত্র প্রাণদায়ী ওষুধের মর্যাদা পেতে পারতো। পারেনি তোদের মতো কিছু আঁতেলদের জন্য। নয়তো পেপারে, টিভিতে আমরা সবাই পড়েছি। হাজার হাজার মানুষের গোমূত্র পান এমন ছবি সকলেই দেখেছি । জানি তুই বলবি এইসব অবৈজ্ঞানিক অপ্রাসঙ্গিকও বটে। তাতে আমার বিশ্বাসের নড়চড় হবে না কোনো মতে। কারণ এ বিষয়ে রিসার্চ চলছে, সত্য একদিন সামনে আসবে।
নীলুদা তোমাদের রামচন্দ্র বলেছে গোমাতা, মেনে নিয়েছো তোমরা। আবার যদি রামচন্দ্র বলে বরাহ পিতা, সেটাও নেবে মেনে কি এমন অসুবিধা। আফটার অল রামচন্দ্রের কথা।
সে তুই যাই বল। যুগে যুগে অবতার অবতীর্ণ হয়েছে এ পৃথিবীকে বিপদ মুক্ত করতে। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে এই হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট ব্যাপারটা তুই বলতেই পারিস অবতার জাগরণ। নয়তো অতো প্রাণী থাকতে হঠাৎ শুয়োর কেনো!
সেটা আজ বলে নয়, এর আগেও মানুষের হৃদয় ঘটিত সমস্যায় শুয়োরের অঙ্গই ব্যবহার করা হয়েছে। তেমন নজির অজস্র রয়েছে। আরো দেখো, মানুষের হার্টের এনাটমি বোঝাতে শুয়োরের হার্ট সামনে রাখা হয়। কারণ, গঠনগত আর কার্যগত ভাবে এই দুই হৃদয় এতটাই কাছাকাছি। এছাড়াও আছে, শুয়োরের কর্নিয়া, চামড়া এ সবই ব্যবহার করা হচ্ছে মানব দেহে। এটা বিজ্ঞানের সাফল্য। আর এটাও তো সত্যি, বহু কিছু আছে যার কার্যকারণ আজও বোঝা যায়নি, তার মানে এই নয় সে সব ঈশ্বরের খেলা। বলি আমি।
হোয়াট ননসেন্স। আরে রাখ তোর বিজ্ঞানের সাকসেস। হোয়াই শুয়োর? হোয়াই নট অন্য প্রাণী? নীলুদার প্রশ্ন।
বিষয়টা তুমি যেভাবে ভাবছো নীলুদা তেমন নয়। এর পিছনে নানান ভাবনা, বহু গবেষণা তাছাড়া জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এর দূরহ ব্যাপার স্যাপার আছে। মানে অ্যানিমাল টু হিউম্যান একটা বিগ চ্যালেঞ্জ আর…
চুপ থেকে মাথা নাড়াচ্ছে নীলুদা। মনে হয়না আমার কথা বোঝার চেষ্টা করবে। আর বুঝিয়ে লাভ নেই। বলি আচ্ছা অনেক হলো। এইবার আসল কথা বলো। মানুষ কি করে শুয়োর হলো?
আচ্ছা, শুরু করেছে নীলুদা। হার্ট, সেতো পাম্প। রক্ত পাঠায় দেহের প্রতিটি কলা কোষে। সে জন্যই মানুষ সতেজ ও সুস্থ থাকে। মোট কথা শারীরবৃত্তিয় কাজ হার্ট ছাড়া অচল। হার্টই যদি না চলে তখন মানুষ বাঁচে আর কি করে। তার মানে বাঁচা, না-বাঁচা সবটাই ওই হার্ট বা হৃদয়। সেই হৃদয় যদি শুয়োরের হয় তাহলে মানুষ কি আর মানুষ রয়। শুয়োর হলো বইকি।
নীলুদা কলমটা নাচিয়ে বলে, ভাবনা কেমন তরতরিয়ে এগিয়ে চলছে দেখছিস!
নীলুদা ভাবনা তো চলছে, কোন দিকে? বলি আমি।
মানে? রামচন্দ্রের সঙ্গে অবশ্যই সামনের দিকে।
হ্যাঁ, একদম ঠিক। এই ভাবেই এগিয়ে চলো শুনে রামচন্দ্রের কথা। আজ নয়তো কাল মিলবেই মিলবে বরাহ অবতারের দেখা।