জন্মচিহ্ন – ব্রতীন বসু

জন্মচিহ্ন    (অনুগল্প)

ব্রতীন বসু

লোকটা হঠাৎ করেই ভুলে গেল তার ধর্ম।

তিন কুলে কেউ নেই, বাবা মা অনেক আগেই গত হয়েছেন, এক পিসতুত সদ্য বিধবা বোন ছিল, সেও গতকাল বাচ্ছা প্রসব করতে গিয়ে মারা গেছে।
বোন থাকতো ভাড়া এক ফ্ল্যাটে। ওর স্বামী রেলে কাজ করত, কি এক ইউনিয়নের মারপিটের মধ্যে জড়িয়ে খুন হয়।

লোকটা যখনই ওর বোনের কাছে যেত একটাই প্রশ্ন করত ওর বোন, তুই বল আমার বাচ্ছাটাকে কি ভাবে মানুষ করব?
চিন্তা করিস না। আমি তো আছি। লোকটা অভয় দিত ওর বোনকে। অল্প রোজগার, তবুও যেহেতু একা মানুষ, যা পারত সাহায্য করত বোনকে।

গণ্ডগোলটা ধরা পরল কুড়ি সপ্তাহর মাথায়। বোন মাঝে মাঝেই অজ্ঞান হয়ে যেতে শুরু করল। টেস্ট করতে পেচ্ছাপে অত্যধিক প্রোটিন ধরা পড়ল। হঠাৎ হঠাৎ কাঁপুনি।
আমার কিছু হলে তুই দেখিস ওকে।

যেদিন খবর পেল বাচ্ছাটা জন্ম দিতে গিয়ে বোন মারা গেছে সেদিন কোন ডাক্তার আসেনি। সেদিন হিন্দু মুসলমান খৃষ্টান সব ধর্মের ঈশ্বর নাকি এক সাথে আসছেন কোথায়। সব মন্ত্রী ডাক্তার বিখ্যাত মানুষ সেখানে নিমন্ত্রিত।
লোকটা গিয়ে দেখল বোনের নিথর দেহ। পাশে বাচ্ছাটা নগ্ন, রক্তমাখা। কেউ পরিষ্কার করেনি ওকে। চোখ দুটো কি সুন্দর জ্বলজ্বল করছে। অল্প আলোয় হাসছে না কাঁদছে বোঝা যাচ্ছে না। বুকের ওপর তিনটে জন্মচিহ্ন।
একটা ত্রিশূল একটা তারা একটা ক্রশ আঁকা।
কি নাম দেব তোর?

লোকটা হঠাৎ করেই ভুলে গেল তার ধর্ম।