গাধার জন্য – ডঃ সুরেশ কুমার মিশ্র

গাধার জন্য

ডঃ সুরেশ কুমার মিশ্র

স্বাধীনতার আগে এখানে রাজা-রাজ্যের শাসন ছিল। স্বাধীনতা লাভের পর একে একে একে একে মিশে যায়। রাজারা এটা পছন্দ করেননি। কিন্তু তারা বাধ্য হয়েছে। ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এমনকি রাজাদেরও মনে হয়েছিল যে যা হয়েছে তা ভালোই হয়েছে। আমাদের শাসন যথেষ্ট। এখন দেখা যাক জনগণের শাসন কেমন হয়।
কয়েকদিন কেটে গেল। এক রাজা তার ঘোড়ায় চড়ে শহরের দিকে রওনা হলেন। সে এদিক-ওদিক তাকাল। তিনি দেখলেন, শহরে বড় বড় ভবন তৈরি হয়েছে। চকচকে রাস্তার কারণে উজ্জ্বলতা বেড়েছে। হরেক রকমের দোকানে বিক্রি হচ্ছিল নানা রকমের জিনিস। তাই রাজার চোখ পড়ল এমন এক ব্যক্তির উপর, যে খদ্দেরের খোঁজে মাটিতে কাগজের টুকরো বিছিয়ে রাস্তার পাশে বসে আছে।
রাজা তার কাছে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন — এই কাগজের টুকরোগুলো কী? কেন তাদের এভাবে সাজানো হয়? তুমি কেন এর চেয়ে ভালো ব্যবসা করছো না?
তখন লোকটি বললো — আপনাকে দেখতে ঘোড়া ও মুকুটওয়ালা রাজার মতো লাগছে। আপনার যুগে শিক্ষা ছিল না। সেজন্য আপনি নিরক্ষর থেকে গেলেন। আপনি এই কাগজপত্রের গুরুত্ব কি করে বিবেচনা করবেন?
রাজা বললেন — একদম ঠিক বলেছ। কিন্তু আমরা কি করতে পারি? আমার ভাগ্যে যা লেখা ছিল তাই পেয়েছি। ভাগ্যের লিপি কে বদলাতে পারে?
লোকটি বলল — কে বলে বদলানো যাবে না? এই কাগজের টুকরো দিয়ে ভাগ্য বদলাতে পারে।
রাজা বললেন — এই কাগজের টুকরোগুলো দিয়ে? ওটা কেমন?
লোকটি বলল — এগুলো কাগজের টুকরো নয়। এইগুলি ডিগ্রি, যে এটা অর্জন করে, সমাজ তাকে অনেক সম্মান করে। তাকে শিক্ষিত মনে করে তার যত্ন নেয়।
রাজা বললেন — বাহ। এটি একটি চমৎকার জিনিস। আমার প্রাপ্য কোন ডিগ্রি থাকলে দর কষাকষির পর দিয়ে দাও।
লোকটি বলল — কেন নয় স্যার। এমএ ডিগ্রি আপনার জন্য সেরা হবে। আপনার মুখ, শরীরের আকৃতি এই ডিগ্রিতে পুরোপুরি ফিট করবে। এখন থেকে কারো সাথে দেখা হলে নিজেকে M.A. পাস বলুন তারপর দেখুন মানুষ কিভাবে আপনার প্রশংসা করতে শুরু করবে।
রাজা তার গলা থেকে একটি সোনার মালা বের করে লোকটিকে দিলেন। বিনিময়ে ডিগ্রি নিয়ে সে খুশি মনে ঘোড়ায় চড়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। রাজা কি ভাবলেন পথে হঠাৎ থেমে গেলেন। তিনি ভাবলেন আমি আমার ডিগ্রি পাস করেছি কিন্তু আমার ঘোড়া নিরক্ষর থেকে গেছে। আমার ঘোড়ার জন্যও ডিগ্রি পাব না কেন? শিক্ষিত ঘোড়া থাকলে আমার সম্মান আরও বাড়বে। এই ভেবে তিনি তড়িঘড়ি করে পৌঁছে গেলেন ডিগ্রি বিক্রেতার কাছে।
সেখানে গিয়ে রাজা তার দুঃখের কথা জানালেন। কথাটা শুনে প্রথমে লোকটা খুব হাসল। তারপর বলল — স্যার, এই ডিগ্রিটা গাধার জন্য, ঘোড়ার জন্য নয়।

(Feed Source: prabhasakshi.com)