প্রতিদান – সদানন্দ সিংহ

প্রতিদান    (অনুগল্প)

সদানন্দ সিংহ

পাশ থেকে শ্রাবণী চেঁচাচ্ছে ক্রমাগত, আস্তে যাও, আস্তে। কী হচ্ছে এসব! মরতে চাও তুমি? আমি চাই না।
কিন্তু রাজ গাড়িটা কিছুতেই থামাচ্ছে না। স্পিডোমিটারটা শুধু উঠছে তো উঠছেই, মনে হচ্ছে যেন তাদের কারটা হাওয়ার ওপর ভেসে যাচ্ছে। চল্লিশ থেকে ষাট, ষাট থেকে সত্তর, সত্তর থেকে আশি। তারপর আশি ওপরও ওঠে যাচ্ছে।

নতুন গাড়ির একটা শখ রাজের ছিল অনেকদিন ধরে। মাস ছয়েক আগে গাড়িটা নিয়েছে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে। এই ছ মাস ধরে একটা লার্নার লাইসেন্স নিয়ে গাড়ির সামনে একটা L লেখা ঝুলিয়ে গাড়িটা আস্তে আস্তে চালিয়ে ভালোভাবে শিখে নিচ্ছিল। অনেকটা আয়ত্তে আসার পর আজ দুজন শহর পেরিয়ে হাইওয়ে রাস্তা ধরে ড্রাইভিং-এর আনন্দ উপভোগ করছিল।
কিন্তু তারপর কী যে হল সেটা রাজও বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে তার হাত যেন আর তার আয়ত্তের মধ্যেই নেই। স্পীড উঠছে তো উঠছেই। এই স্পীড উঠার মধ্যে সে যেন একটা থ্রিলিং ফীল করছিল। শ্রাবণীর কথাগুলিও একদম কানে যাচ্ছিল না।
শ্রাবণী এবার অনুনয় করল, প্লিজ প্লিজ গাড়িটা একটু থামাও। আমার মাথা চক্কর দিচ্ছে। বমি আসছে। বলতে না বলতেই শ্রাবণী গাড়ির ড্যাশবোর্ডের ওপর গড়গড় করে বমি করে দিল। আর এতেই যেন রাজের সম্বিৎ ফিরে এল। এ্যাক্সিলেটার ছেড়ে দিয়ে ব্রেক চেপে চেপে স্পীড কমিয়ে শেষে গাড়িটাকে রাস্তার একপাশে দাঁড় করাল।
সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির দরজা খুলে নেমে শ্রাবণী রাস্তার পাশে আরো কিছু বমি করল। রাজ গাড়ির ভেতরে থেকে জলের বোতল এনে শ্রাবণীকে দিল। শ্রাবণী বোতলটা নিয়ে চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিয়ে মুখে জল নিয়ে গার্গল করে মুখ থেকে কয়েকবার জল ফেলে দিয়ে কিছু জল খেয়ে নিল।
রাজ বেশ বুঝতে পারল এসব তার জন্যেই হয়েছে। তাই সে বলল, স্যরি, এভাবে আর চালাবো না। আমি এবার খালি রাস্তায় ত্রিশ-চল্লিশের বেশি উঠাবো না। এবার ফিরে যাবো। তার আগে গাড়িটা পরিষ্কার করে নিচ্ছি। বলে রাজ তার পকেট থেকে রুমাল বের করে বমি পরিষ্কার করতে থাকে। তারপর জল দিয়ে রুমাল ধুয়ে গাড়ির ড্যাশবোর্ড ভেজা রুমাল দিয়ে সাফসুতরো করে। শ্রাবণী শুধু বলে, দোষ করেছ, এবার বেশ শাস্তি হয়েছে।
অতঃপর বাড়ির দিকে ফিরতে ফিরতে রাজ শ্রাবণীকে বলতে থাকে, জানো, আমি ঠিক আমার মধ্যে ছিলাম না। স্পীডের এক থ্রিলিং আমাকে কোথায় যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। এখন বুঝতে পারছি, আমাদের সব কিছুই নিজেদের কন্ট্রোলেই রাখা উচিত। কন্ট্রোল হারিয়ে যাওয়া মানে মস্তিষ্কের ভালমন্দ চিন্তাশক্তি হারানো। সেই সময় বাস্তবে ফিরিয়ে আনার জন্যে হয়তো একটু বমিরও দরকার। সেজন্যে থ্যাংকস। মানে প্রতিদানের জন্য ধন্যবাদ।