নীলাদ্রি ভট্টাচার্যের কবিতা
হৃদয় নীলাদ্রি ভট্টাচার্য্য আপাতত জলের ভেতর ভ্রমণ আর হাওয়ার ভেতর নির্জন শব্দের গর্ভবতী সাঁতার আমার আবির ধান ফুলের আগুন কবিতার ডিম সাধন সঙ্গী কাঠের কলম জলের ভেতর জীবনবৃন্তে ভ্রমণ করছে ।
হৃদয় নীলাদ্রি ভট্টাচার্য্য আপাতত জলের ভেতর ভ্রমণ আর হাওয়ার ভেতর নির্জন শব্দের গর্ভবতী সাঁতার আমার আবির ধান ফুলের আগুন কবিতার ডিম সাধন সঙ্গী কাঠের কলম জলের ভেতর জীবনবৃন্তে ভ্রমণ করছে ।
ভ্রম বিশ্বজিৎ দেব যেসব বিদায় তুমি ভুলে গেছো এসব তারই প্রতীক, ফুরিয়ে যাওয়া চিমনির মুখ, নিরব টার্মিনাসের ইঞ্জিন কে ফুরালো তবে সকাল হওয়ার আগে ধোঁয়া না উনুন, শ্বাসের জানালা খোলা ঘর বহুকোষী ধাবা, কি ফুরালো তবে কাঠের মন্দিরা, থেমে থেমে ত্রিতালের ধুম যে সব পরিত্যক্ত খোলসের কথা তুমি ভুলে গেছো এসব তারই সর্পভ্রম, শীতের হালকা হাওয়া চমকে ওঠা করোটির ফুল! অবিকল বিশ্বজিৎ দেব আমিও তোমার মত এক ফুঁয়ে ঠিক উড়ে যাই আমাকে নাচিয়ে যায় হাওয়ার ফিরিঙ্গি দূর থেকে দেখা…
কাঠবিড়ালী দেবাশিস মুখোপাধ্যায় ভোরবেলা অমলতাসের সঙ্গে দেখা তার দেহ জুড়ে কাঠ বিড়ালীর প্রাণচাঞ্চল্য আমি যেন আমিতে নেই হাসপাতালের টেবিলে সুঁই ফোটানোর সময় এ দেহকে অমলতাস আর কাঠবিড়ালি ডেকে নিয়েছিল ডাক্তারের রেটিনায় কে তখন অবাক আঁকছিল মেঘ দেবাশিস মুখোপাধ্যায় ঘুমের ভিতর সিনেমা দেখছি । নায়কের মুখ খুব চেনা সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। নিজেকে দেখেই যাচ্ছে একদল মেঘ এসে ঢেকে দিল সবকিছু । শো ভেঙে গেলে চোখ মেলে দেখলাম বউয়ের চুলে হারিয়ে গেছে আমার মুখ একটা জাল থেকে আরেকটা জালে আটকে…
ভার্জিন শুভেশ চৌধুরী ফলটি ভার্জিন। ফল-এ একটি কামড় দিয়ে দিলেই ফলের ভার্জিনটি চলিয়া যাইবে। মানুষ খাবার খায়। কত ফল-ফসারীর ভার্জিনটি লোপ করে তার পরিমাণ করা যাবে না । আমি কৌমার্য রাখি নাই। আমি বাবা। আমার বিশ্বাস আমি স্নেহশীল। কৌমার্য রক্ষা না করায় আমার কোন পাপ হইবে না, কারা জানি বলছে রাত জাগা পাখি শুভেশ চৌধুরী না। পাখি রাত জাগে না। ঘুমের মধ্যে শুধু আড়মোড়া ভাঙে আর আবার ঘুমিয়ে পড়ে যারা আজ না ঘুমালো তাদের জন্য কাল কোন বাজারহাট অফিস…
এইটুকুই বেঁচে থাকা ব্রতীন বসু সুযোগ দেখলে আমি সন্ধানী হয়ে যাই বিপদ দেখলে ঢুকে পরি গর্তে, মন্দির দেখলে আমি স্বর্গে চলে যাই হুইস্কি পেলে ফিরে আসি মর্ত্যে। সবজির আগুন দাম তাই সবুজে অরুচি হয়েছে ভাতের বদলে মিলেট সেদ্ধ খাব ভাবি আনন্দ করি ভারত জিতেছে বলে অথবা লোন শোধ হলে আজ এইটুকুই বেঁচে থাকা থাক কাল হয়ত অন্য কোন দাবি। জমা আছে ব্রতীন বসু জমা জলাশয় মশা জন্মায় জমা কথা জন্ম দেয় কবিতা কেউ ভাল থাকে, কেউ প্রতীক্ষায়।
এক বগ্গা সমর চক্রবর্তী যে কোন কবিতার আসরেই হাতে মাইক নিয়ে সে ঘোষণা দেয় আমার মতো প্রিয় অন্য কোন কবি-বন্ধু নাকি নাই তার। হলভরা কবিতার আসরে উপস্থিত সমস্ত কবিরা অথবা সে নিজে কিন্তু আমারো যে কিছু বলার আছে তা নিয়ে কোন প্রশ্নই করে না। হাততালির শব্দে ফেটে পড়ে ঘর। রাজ্যের সমস্ত মিডিয়ায় প্রকাশিত হয় — সর্বকালের শ্রেষ্ঠ এই কবিতার আসর। সমস্তই আমি শুনি। শুধু আসরে আমারো ডাক পড়ে না পবিত্র থাপ্পড় সমর চক্রবর্তী আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে মানতের বিষ্ণুপূজা করে…
বন্ধন হামিদুল ইসলাম মানুষগুলো এভাবেই চলে যাচ্ছে চলে যাচ্ছে নিঃস্ব হাতে দুচোখ ধরে আসছে বারবার কারো চোখে অতলান্ত অশ্রু কারো চোখে আগুন যারা আগুন নিয়ে খেলেছিলো সেদিন তারা হেরে গেছে আজ এখানে জয় পরাজয় নেই আছে দোলায় শুয়ে থাকা ক’টা নিথর লাশ এখানে মানুষ সব ধীরে ধীরে লাশ হয়ে যাচ্ছে লাশ হচ্ছে পৃথিবী মানুষের ভ্রাতৃত্ব ভালোবাসা প্রেম স্বামী স্ত্রী লাশ হচ্ছে লাশ হচ্ছে তাদের ক্ষণিকের অস্থায়ী বন্ধন কথা হামিদুল ইসলাম কথা দিই কথা রাখে না কেউ মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে…
আহাম্মক মানুষের গল্প সনজিৎ বণিক গতকাল বিকেলে এই আগরতলা বইমেলায় যে দুটি শিশু গলাগলি করে শীতবস্ত্রহীন ছেঁড়া জামা গায়ে বইয়ের স্টল-এ ঢুকতে যাচ্ছিল সেখানে দোকানের ম্যানেজার ওদের দিল না ঢুকতে স্টল-এ, ওদের স্পর্শ করতেও দিল না বই, ওরা বারবারই বলছে, আমরা পড়তে পারি তো, সত্যি সত্যি পড়তে পারি বই। আমরা সাঁতারও কাটতে পারি। আমরা গাছেও উঠতে পারি। আমরা দৌড়তেও পারি পি টি ঊষার মত। একবার অন্তত একবার বইটা ছুঁতে দিন, পাতা উল্টানো শেষ হইলেই দিয়া দিমু আর এখান থাইকা…
স্কুল ও কয়েকটি এলোমেলো ছবি অভিজিৎ চক্রবর্তী ১ রৌদ্রভরা স্কুল, ধানখেতের মাঝখানে, দূরে বট, একচিলতে মাঠ, আর একটি টিপ কল– সাদা ফিতেবাঁধা যে মেয়েটি এলোমেলো দৌড়ে আসছে তার সঙ্গে প্রজাপতিও পারছে না সে আমার মা তখনও জন্ম হয়নি আমার ২ টিলা থেকে নেমে খাল খালের পাশে মরা গরু জলহীন শূন্য ধু ধু শকুন বসে আছে– পাশ দিয়ে ছেলেরা যায়, বগলে বই মেয়েরা কাচা আমড়া আর নুন মাখানো দুপুর– দূরে শ্লেট-কালো আকাশ শকুনের গলার মত লোমহীন পথ বিদ্যালয় বহুদূর ৩…
মন সদানন্দ সিংহ রুবি রায় বলে আমার কেউ ছিল না তবু মনে পড়ে রুবি রায়কে বারবার আমার হিমালয় বলে কিছু ছিল না তবু মনে হয় গোটা হিমালয়টাই আমার আমার কোনো গঙ্গাও ছিল না তবু গঙ্গাতেই হয় আমার অতিবাহিত জীবন এইভাবেই গোটা ভারতবর্ষ আমার স্বপ্ন হয়ে যায় রহস্য সদানন্দ সিংহ ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে এখন এক স্পন্দন চিত্রপটে আঁকা ছবি ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে। সুপার্ব প্রোজেক্ট, তাই স্বপ্নও একসময় বিকিয়ে যায় দীনদয়ালের ঘরে ঢোকে আজব আতরদান রাজ-রাজড়ার গল্প শানায় তামাশায়…