নামকরণের ফ্যাসাদ
সদানন্দ সিংহ
শনিবার স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বইগুলি টেবিলে রাখতে যাচ্ছিলাম। এমন সময় দেখলাম আমার কবিতা লেখার চার নম্বরি খাতাটা হাট করে খোলা অবস্থায় টেবিলের ওপর পড়ে রয়েছে। খাতার ওপরে গুটিগুটি অক্ষরে লেখা রয়েছে – হাবু, তাড়াতাড়ি হারু ঠাকুরের বাগানে চলে আয়। বিরাট ভোজনের ব্যাপার …
লেখাটা দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আমার গোপন কবিতা লেখার খাতার ওপরে কোন্ রাস্কেলটা এগুলি লিখে গেল! চেঁচিয়ে মাকে ডাকলাম, মা, মা, কে আমার ঘরে ঢুকেছিল?
মা বললেন, কে আবার। জটু এসেছিল।
আমার ভীষণ রাগ হল, জটু! তুমি আমার ঘরে ওকে ঢুকতে দাও কেন? জানো, ও আমার খাতায় …। কথাগুলি বলতে গিয়েই থেমে গেলাম। কবিতার কথা তো মাকে আর বলতে পারি না। কারণ আমি কবিতা লিখি লুকিয়ে লুকিয়ে। সেটা জানে শুধু সুদেব আর মিলি। আর আজ আমার ঘরে বেআইনিভাবে খাতা উল্টিয়ে জটু মানে জটিলেশ্বর শর্মা মানে চিংড়িমামা আমার গোপন খবরটা জেনে গেল! শুধু জানা নয়, কবিতার খাতায় কিছু বাজে কথাও লিখে গেল। কেন? টুকরো কাগজ কি আর টেবিলে ছিল না? ছিল, অনেক টুকরো কাগজ ছিল। কিন্তু চিংড়িটা আমাকে ক্ষেপাবার জন্যেই কবিতার খাতায় কথাগুলি লিখে গেল।
মাকে বললাম, তুমি আজেবাজে লোককে আমার ঘরে হুট করে ঢুকতে দাও কেনো?
মা উত্তর দিলেন, জটু আবার আজেবাজে লোক হল কবে থেকে? তোরাই তো ওর সঙ্গে বসে সময় পেলেই গুজুর গুজুর করে গল্প করিস।
– আমরা করি না মা। বরং ওই-ই এসে আমাদের সঙ্গে গল্প করে।
– ঠিক আছে। কিন্তু ও খারাপ নয়, টুকিটাকি কাজের কথা বললে ও অনেক কাজই করে দেয়। এখন কাপড় ছেড়ে আয়। ভাত খেয়ে যা।
– হ্যাঁ হ্যাঁ তোমার জটু খুব ভালো লোক। যত্তোসব — ।
মায়ের কিছু ফাইফরমাশ ও করে দিলেও, জটু মানে জটিলেশ্বর শর্মা মানে আমাদের চিংড়িমামাকে কোনোদিনই আমি ভালো ছেলে বলে মনে করিনি। সবসময় ও যা তা একটা বাজে কাজ করার জন্য মুখিয়ে থাকে। তর্কেও ওর সঙ্গে কোনোদিনই পেরে ওঠিনি। আমি গলাবাজি করতে পারি না বলে উল্টোপাল্টা কথা বলে গলাবাজি করে ও জিতে যায়। সব কিছুই নাকি ওর পড়া আছে। মায় ডারউইনের থিয়োরি থেকে শেক্সপীয়ার-শেলী নাকি ওর কবেই পড়া হয়ে গেছে। ওদিকে আবার উনি পাচঁ-পাঁচবার হাইয়ার সেকেণ্ডারি পরীক্ষা দিয়েও স্কুলের ডিঙ্গি পেরোতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা হল সবসময় ওর মাথায় কি এক কুবুদ্ধি কিলবিল করে বেড়ায়। ও সবসময় চেষ্টা করে কারুর না কারু পেছনে লেগে থেকে একটা গোল দিতে। এ হেন জটিলেশ্বর শর্মা মানে চিংড়িমামাকে আমি ভালো বলতে যাব বা কোন্ দুঃখে?
ঘরে ঢুকে আমি খাতাটার ওপরে চোখ বোলালাম – হাবু, তাড়াতাড়ি হারু ঠাকুরের বাগানে চলে আয়। বিরাট ভোজনের ব্যাপার …। লেখাগুলো দেখতে দেখতে মনে হলো, শব্দগুলি যেন আমার চোখের সামনে নাচতে শুরু করেছে। আসলে ভোজনের ব্যাপারটাতেই মাথাটা গরম হয়ে গেল। তাও আবার বিরাট ভোজনের ব্যাপার নাকি। ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভাবতেই নাকে একটা মৃদু মৃদু চিকেন কারির গন্ধ পেতে লাগলাম। আর থাকতে পারলাম না। সার্ট-প্যান্ট বদলিয়ে মাকে ‘একটু আসছি’ বলে বেরিয়ে পড়লাম। পিছে দেখলাম মা কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। আমি খেয়াল করলাম না। ছুট লাগালাম।
কিছু কাঁঠাল গাছ আর কিছু আম গাছ মিলিয়ে হারুঠাকুরের বাগান। মাঝে মাঝে দু-একটা সুপারি গাছও আছে। হারুঠাকুর থাকেন অন্য পাড়ায়। বাগানটা আগে নারুদের ছিল। ওরা জায়গাজমি বেঁচে একদিন কোথায় জানি চলে গেছে। ওদের কাছ থেকেই বাগানটা কিনে হারুঠাকুর ভবিষ্যতে বেশি দাম পাবার আশায় ধরে রেখেছেন। হারুঠাকুরের বাগানে পৌঁছে দেখি চিংড়িমামা একটা আমগাছের নিচে বজ্রাসন গেড়ে বসে আছে। কাছেই একটা বড়ো থালার ওপরে প্রচুর মাংস। সুদেব আর পিন্টু শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে পেঁয়াজ-রসুন-তেল-মশলা দিয়ে মাংসের টুকরাগুলি রগড়াচ্ছে। মাংস আনুমানিক পাঁচ-ছ’ কেজির মতোই হবে। আশ্চর্য হয়ে চোখ গোল করে তাকিয়ে রইলাম। এ্যাতো মাংস এলো কোত্থেকে?
আমাকে মাংসগুলির ওপর তাকিয়ে থাকতে দেখে চিংড়িমামা বলল, কী হে কবিমশাই। মাংস দেখে ঘাবড়ে গেছিস? ও আমার নিজের ঘাম দিয়ে সংগ্রহ করা। ভয় নেই, তোদের কাছ থেকে এজন্য এক কানাকড়িও খসবে না। শুধু আলু আর তেলের জন্য চার-পাঁচ-দশ টাকা যা পারিস নিচে ফেল। ইতিমধ্যেই আমি বুড়োর মুদি দোকান থেকে আধ লিটার তেল আর কিছু পেঁয়াজ-রসুন বাকিতে এনেছি।
আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে চিংড়িমামা আমাদের জন্যে নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে মাংস নিয়ে এসেছে। বললাম, এ্যাতো মাংস তুমি আমাদের জন্য নিয়ে এলে!
আমার কথা শুনে চিংড়িমামা রেগে উঠলো, কেন? আমি কি কিনতে পারি না? আমার কি পয়সা থাকতে পারে না? আমাকে কি ফকির মনে করিস? যত্তোসব –। দে এখন, টাকা ফেল। নইলে তুই বাদ।
আমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম, বা রে, তুমি এতো রাগ করছো কেন! আমি কি দেব না বলেছি? সবাই যদি দেয় তাহলে আমিও দেবো বৈকি।
– হ্যাঁ হ্যাঁ সব্বাই দেবে, মানে দিতে হবে। সুদেব আর পিন্টু দিয়ে ফেলেছে। গদা, ফটকে, জগাও দেবে। ওই তো গদা আর জগা আসছে।
– ঠিক আছে। আমি পাঁচ টাকা দিচ্ছি। বলেই আমি টাকা বের করে নিচে রাখলাম।
– আর আছে? দেখি পকেটে।
পকেটে আরো দু টাকা ছিল। পকেট হাতড়িয়ে সেটাও নিয়ে নিল চিংড়িমামা।
আমাদের সবাই এসে গেলে সবার পকেট হাতড়িয়ে চিংড়িমামা যা পেল সব নিয়ে নিল। জগার পকেটে ছিল মাত্র দু টাকা। আর ফটকের পকেটে ছিল খুচরো টাকা-পয়সা মিলিয়ে প্রায় দশ টাকা। ফটকের পকেটে বেশ খুচরো টাকা-পয়সা সবসময়ই থাকে। কারণ ওর দাদুর এক শাকসবজির দোকান আছে। সেখানে গিয়ে ও টাকা-পয়সা হাতড়ায় দরকারে।
চিংড়িমামা বাজারে চলে গেল।
আমরা এদিক সেদিক থেকে কিছু ইট কুড়িয়ে এনে একটা ইটের চুল্লি তৈরি করে ফেললাম। একটা এ্যালুমিলিয়ামের হাড়ি আগে থেকেই ওখানে ছিল। জানি না ওটা চিংড়িমামা কোত্থেকে জোগাড় করে এনেছে। আমরা ওটাকে ইটের চুল্লির ওপর বসিয়ে রাখলাম। তারপর আমরা শুকনো পাতা কুড়িয়ে জড়ো করতে লাগলাম। জ্বালানির কাজটা এই পাতা দিয়েই সারতে হবে।
কিন্তু আমরা কেউই বুঝতে পারছিলাম না, মাংসগুলি চিংড়িমামা কোত্থেকে জোগাড় করে এনেছে। আমি যেরকম চিংড়িমামার চিঠি পেয়ে এখানে চলে এসেছি, ঠিক সেভাবেই সুদেব, পিন্টু, জগা, ফটকে, গদা সবাই ঐ একই চিঠি পেয়ে এখানে এসেছে।
জগা বললো, চিংড়িমামা যে আমাদের জন্য নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করবে তা কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না।
পিন্টু বললো, তাহলে তুই কি বলতে চাস চিংড়িমামা মাংসগুলি চুরি করে এনেছে?
গদা বললো, তোরা চুপ কর তো। চিংড়িমামা যেভাবে এনেছে আনুক, আমরা তা নিয়ে ভাবতে যাব কেন? আমরা চুপচাপ খেয়ে নেবো, তারপর কেটে পড়বো। ঐ দেখ, চিংড়িমামা হ্যাংলার মতো আমাদের কাছেই আসছে।
শেষ পর্যন্ত মাংস রান্না নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হল। রান্নাটা করল ফটকে। ফটকেটা যে রান্নায় এতো ওস্তাদ আমরা আগে জানতাম না।
সুদেব কারুর বাড়ি থেকে চুপিচুপি কলাপাতা কেটে নিয়ে এলো। আমরা কলাপাতায় খেতে বসলাম। যে থালাটা ছিল তা রেখে দিলাম চিংড়িমামার জন্যে।
চিংড়িমামা আজ কেন জানি আমাদের ওপর খুব উদার, বললো, তোরা পেট ভরে খেয়ে নে আগে। তারপর আমি সবার শেষে খাবো। আমার জন্য সামান্য কিছু রাখলেই হবে। তোদেরকে খাওয়াতে পেরে আজ আমার খুব আনন্দ হচ্ছে রে।
আমরা বেশ চেঁচেপুঁছে খেলাম। রান্নাটা বেশ হয়েছে। চিংড়িমামার জন্যে যে অংশটুকু রেখে দেওয়া হয়েছিল শেষে আমরা তা থেকে দুয়েকটা মাংসের টুকরো তুলে খেতে শুরু করলাম। আমাদের খাওয়া দেখতে দেখতে চিংড়িমামা হঠাৎ ‘ওঃ’ আওয়াজ করে পেট চেপে বসে পড়লো। মুহূর্তের মধ্যেই একটু সামলিয়ে বললো, পেটে বেশ ব্যথা হচ্ছে। আমি কিছুই আজ খাবো না। তোরা আমার অংশটুকু খেয়ে নে।
সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাই একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়ে মাংসগুলি শেষ করে দিলাম।
চিংড়িমামা আবার বললো, ইস আজ আমি তোদের সঙ্গে খেতে পারলাম না বলে মনে একটা দুঃখ রয়ে গেল। ঠিক আছে, আরেকদিন এর চেয়েও আরো বড় খাওয়া হবে।
চিংড়িমামার এমন দরদি মনোভাব আমরা আগে দেখিনি। এই মনোভাবের ওপর আমার বেশ সন্দেহ হচ্ছিল। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, চিংড়িমামা, মাংসগুলি কোত্থেকে এনেছ সত্যি বলবে কি?
– নিশ্চয় বলবো। কীভাবে আমি ওটা ম্যানেজ করেছি সব বলবো। তার আগে বলছি, কেন তোদের আজ খাওয়ালুম। আমি ঠিক করেছি, তোদের কাছে আমি আর চিংড়িমামা নামে পরিচিত হবো না। চিংড়ি কী একটা নাম হয় নাকি! তবু তোরা আমায় ভালোবেসে ওনামে ডাকতিস্ বলে আমি এতোদিন কিছুই মনে করিনি। কিন্তু গতকাল এক সাধু আমার হাত দেখে বললো যে আমি যদি চিংড়িমামা নামে পরিচিত হই তাহলে সারাজীবন আমার কোনো উন্নতি হবে না। আর তোরা তো আমায় ভালোবাসিস, আমার উন্নতি তো তোদের কাম্যই। তাই আমার উন্নতির পথ সুগম করার জন্য আমার একটা নতুন নাম ঠিক করা দরকার। তোরা কী বলিস্?
সুদেব উত্তর দিল, হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই। তোমার উন্নতি মানেই আমাদের উন্নতি। আমি সবার সামনে চিংড়িমামার নতুন নাম গাবলুমামা করার প্রস্তাব রাখছি।
চিংড়িমামা একটু দুঃখিতভাবে সুদেবের দিকে চেয়ে রইল। জগা বলে উঠলো, আমি সবার সামনে চিংড়িমামার নাম হাইতিমামা করার প্রস্তাব রাখছি।
চিংড়িমামা এবার জগার দিকে দুঃখিতভাবে চেয়ে রইল। এবার গদা বলে উঠলো, আমি চিংড়িমামার নাম চ্যাংমামা করার প্রস্তাব রাখছি।
সেই আগের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চিংড়িমামা এবার গদার দিকে চাইল। পিন্টু বলে উঠলো, আমি কিন্তু চিংড়িমামার নাম ওঠিচিমামা করার প্রস্তাব রাখলাম।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফটকে বলে উঠে, আর আমি চিংড়িমামার নাম মাংসমামু করার প্রস্তাব রাখছি।
চিংড়িমামা এবার পিন্টু এবং ফটকের দিকে না চেয়ে সরাসরি আমার দিকে চেয়ে থাকলো।
আমি বললাম, ছিঃ ছিঃ। চিংড়িমামার জন্যে তোরা কীসব বিদ্ঘুটে নামের প্রস্তাব রেখেছিস্! গাবলুমামা, হাইতিমামা, চ্যাংমামা, ওঠিচিমামা, মাংসমামু — এসব কি একটা নাম নাকি! চিংড়িমামার জন্যে একটা সুন্দর নাম দরকার, যেহেতু আমরা সবসময় চিংড়িমামার উন্নতিই চাই। নামটা এমন হওয়া দরকার যেখানে জটিলেশ্বর নামের কিছু চিহ্ন থাকবে, তাই মনে হয় জল্লাদমামা নামটাই ঠিক হবে। কী বলিস তোরা?
সুদেব বলে ওঠে, একেবারে খাসা সুন্দর নাম। বলো সবাই, জল্লাদমামা।
চিংড়িমামা বাদে সবাই একসঙ্গে বলে উঠলো, জিন্দাবাদ।
তারপর স্লোগান চলতেই থাকে, জল্লাদমামা। জিন্দাবাদ। জল্লাদমামা। জিন্দাবাদ।
এসব দেখে চিংড়িমামা দুম করে উঠে দাঁড়াল। তারপর চেঁচিয়ে উঠলো, থামো থামো। অকৃতজ্ঞের দল কোথাকার। জানতাম তোরা আমার সঙ্গে বেইমানি করবি। তাই তোদেরকে আমি আগেভাগেই উচিত শিক্ষা দিয়ে রেখেছি, মরা ছাগলের মাংস খাইয়ে।
চিংড়িমামার মুখটা হাসিতে পূর্ণ হয়ে গেল। শুনে জগার মুখটা কালো হয়ে গেল, কী বললে? মরা ছাগলের মাংস? ওটা পাঁঠার মাংস না! ছাগল খেলে নাকি ক্যান্সার হয়।
চিংড়িমামা বলতে থাকে, মরা ছাগলের মাংস নয়তো কি? তোদের মতো পাষণ্ডদের জন্য গাঁটের পয়সা খরচ করতে যাব এমন মূর্খ আমি নই। খুব তো জানতে চাইছিলিস মাংস কোত্থেকে এনেছি। এবার শুনে রাখ। ছাগলটা অমিয় কাকাদের। সকালে একটা ট্রাক ওটাকে চাপা দিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গেই ওটা মারা যায়। চার-পাঁচ ঘন্টা মরা ছাগলটা রাস্তায় পড়ে ছিল। অমিয় কাকা আমাকে কুড়ি টাকা দিয়ে বলেছিল নদীর কিনারে ওটাকে ফেলে দিতে। আর আমি ওটাকে এখানে টেনে এনে চামড়া ছাড়িয়ে মাংসগুলি কেটে তোদের জন্যে বানিয়ে রেখেছিলাম। চামড়া-টামড়াগুলিকে মাটিতে পুঁতে রেখেছি। চাইলে ওটাও দেখতে পারিস। আর ঐ মরা ছাগলের মাংসটাই তোরা খেয়েছিস। তাহলে ভেবে দেখিস, ছাগলটা অপাঘাতে মরা। আর সে অপাঘাতে মরা ছাগলের মাংসটাই তোরা খেয়েছিস। তোরা তো ভূত-পেত্নির বংশধর। তাই মাংসটা তোদের কাছে ভালোই লেগেছে। কী বলিস? অ্যাঁ?
কথাগুলি শুনে জগার মুখ আরো কালো হয়ে গেল, তাই বলে তুমি আমাদের অপাঘাতে মরা ছাগলের পচা-বাসি মাংস খাওয়াবে? উ মাগো, আমার বিষম বমি আসছে। পেটের ভেতরটা কেমন কেমন করছে। ধ্যৎ। বলেই জগা এ্যালুমিনিয়াম হাঁড়িটার ওপর ডান পায়ের একটা লাথি ঝেড়ে দিল। হাঁড়িটা শূন্যে একটু ভেসে আবার ধপ করে মাটিতে আছড়ে পড়ল।
– আরে আরে করছিস কী? ওটা যে আমি তোদের বাড়ি থেকেই চেয়ে এনেছি। আচ্ছা আচ্ছা, আনন্দ কর্। আমি চলি। আর হ্যাঁ হাবু, যাবার সময় তোদের থালাটা নিয়ে যাস মনে করে।
চিংড়িমামা পকেট থেকে চানাচুরের প্যাকেট বের করে চানাচুর খেতে খেতে চলে যেতে থাকে।
আমাদের সবার মুখ থমথমে। একরাশ বমি আমাদের গলা ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। জগাটা এ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িটার দিকে চেয়ে থাকে। ওর লাথির আঘাতে ওটা চ্যাপটা হয়ে গেছে কিনা।