দুর্জয়ের মানুষরা (অনুগল্প)
সদানন্দ সিংহ
দুর্জয় বসেছিল বাসের প্রায় পেছনের দিকে দরজার কাছাকাছি এক সীটে। দরজার কাছাকাছি বসলে একটা সুবিধা আছে। অফিস টাইমের গাদাগাদি ভিড়ের মাঝেও টুক করে নেমে পড়া যায়। দুর্জয়ের স্টপেজ আসতে আরো প্রায় মিনিট দশেক বাকি। সে তাই জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। এইসময় তার মুখের সামনে বাড়ানো দুশো টাকার এক নোট দেখে সে। এইসঙ্গে সে এও শুনতে পায়, “ধরুন তো এটা।” যে লোকটি নোটটি বাড়িয়ে ধরে কথাগুলি বলেছিল তাকে দেখেই দুর্জয় নোটটি নিয়ে পকেটে রেখে দেয়। লোকটি বলে, “সামনেই আমার স্টপেজ। এগোচ্ছি।” দুর্জয় উত্তর দেয়, “ঠিক আছে।” ব্যস, এইটুকুই। লোকটি নেমে যায়। আর দুর্জয়ের ধারণাটাও সত্যি হয়।
ঘটনার সূত্রপাত পনের-কুড়ি দিন আগে। বাসে প্রতিদিন যেতে যেতে বাসযাত্রীদের প্রত্যেকেরই প্রত্যেকের মুখচেনা হয়ে যায়। যদিও পরিচয়পর্ব হয় না কোনোদিন নেহাত দু-একজন বাদে। সেদিন হঠাৎ ওই লোকটি দুর্জয়ের সামনে ডানহাত বাড়িয়ে বলেছিল, “দুশো টাকা দিন তো।” মানুষের প্রতি দুর্জয়ের একটা বিশ্বাস সবসময় থাকে, তাই কোনো বাক্যব্যয় না করে সে লোকটিকে দুশো টাকা বের করে দিয়েছিল। লোকটিও সেদিন টাকাটা নিয়ে আর কোনো কথা না বলে নেমে গিয়েছিল। সেই টাকাই আজ ফেরত এসেছে। সেই সঙ্গে মানুষের প্রতি যে বিশ্বাস দুর্জয়ের ছিল সেটাও সত্যি হয়ে দেখা দিল।