
সংক্রামক ব্যাধি (অনুগল্প)
ব্রতীন বসু
বেচারা রাঘব। আমার ইস্কুলের বন্ধু। ছ মাস হয়ে গেল অসুখ সারছেই না। ইএনটি সাইকিয়াট্রিস্ট সব দেখানো হয়ে গেছে। কিছুতেই সারছে না। ওই দ্যাখো, অসুখটার কথাই এখনো তোমাদের বলিনি। ঘুমোতে শুলেই, যেই একটু চোখ লেগে আসে মনে হয় কানের লতি দিয়ে পিঁপড়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। অদ্ভুত সুড়সুড়ি লাগে। রাঘবের কানগুলো বেশ বড়, ফলে একটা পিঁপড়ে চাইলে অনেকটা জায়গা ধরে ঘুরতে পারে। কিন্তু রাঘবের নতুন বউ, বোন, বাবা, মা, ডাক্তার বদ্যি এলোপ্যাথিস্ট হোমিওপ্যাথিস্ট কেউ একটা পিঁপড়েও খুঁজে পায়নি। তুই বরং ঝুলপিগুলো ছোট করে ফ্যাল। আমি বললাম। রাঘব ফ্রাস্টু খেয়ে ন্যাড়াই হয়ে গেল। কিন্তু সেই ভৌতিক পিঁপড়ের আনাগোনা থামল না। নতুন বউ। সারারাত জেগে জেগে রাঘবের কানের অলিগলি মুখস্ত করে ফেলেছে। শাশুড়ি চুপিচুপি মেয়েকে বলেছেন, তুই জামাই এর কান দেখতে দেখতে একটা পিঁপড়ে ধরে দেখিয়ে দিবি। হয়ত তাতে সেরে যাবে। ভয় ভয় তাও করেছে বউটা। দেওয়াল থেকে পিঁপড়ে ধরে দেখিয়ে দিয়েছে, এই দ্যাখো, আর নেই ধরে নিয়েছি। রাঘব ঘুমন্ত গলায় মুখঝামটা দিয়েছে, দূর, এখনো ঘুরছে, ঠিক করে খোঁজ। আমরা বন্ধুরা রাঘবকে নিয়ে ভাবতাম। ও অতনুর বাড়িতে সাপ্তাহিক চায়ের আডডায় আসা বন্ধ করে দিল প্রায়। ব্যপারটা বেশ থিতিয়ে গিয়েছিল। তারপর একদিন দেখি রাঘব হাজির। সাথে নতুন বৌদি আর খুব সুন্দর অল্পবয়সী এক মেয়ে। বয়স বড়জোর কুড়ি হবে। রাঘবের কি হাসি। ওর কানে পিঁপড়ে আসা বন্ধ হয়ে গেছে। কিছুতেই যখন কোন কাজ হল না, রাঘব এক সাধুবাবার কাছে গিয়েছিল। তিনি বলেছেন, তোমাকে সুন্দর বান্ধবী রাখতে হবে, তার কন্ঠস্বর খুবই মধুর হতে হবে। তুমি যখন ঘুমবে বউ থাকবে এক পাশে, সে থাকবে অন্যদিকে। তোমার কানে সারাক্ষণ কন্ঠের মধু ঢালবে সে। পিঁপড়ে এলে ভেতরে চলে যাবে তারা মধু খেতে। লতি দিয়ে আর হাঁটবে না। আমরা বৌদির দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। বৌদি তুমি রাজি হয়ে গেলে? দু’হাতে প্রণাম ঠুকে বৌদি বললেন, হ্যাঁ গো, বাবার ইচ্ছে, কিন্তু ইদানীং কি হয়েছে পিঁপড়েরা বড় ফিগারকন্সাস হয়ে যাচ্ছে। ওর কানের ভেতরে ঢুকে মধু খেয়ে ব্যাম করতে আমার কানে চলে আসছে হাঁটতে। ডাক্তার দেখাতেই হবে আমাকে। না কমলে অগত্যা… রাঘব অবাক চোখে তাকাল, কই সে কথা তো আমাকে বলনি।
নতুন বৌদি মুখ ব্যাজার করে বলল, দেখছো না আজকাল সব অসুখই কিরকম সংক্রামক।