
চম্পাকলি আর ছোট্টুবুড়ি (অনুগল্প)
সদানন্দ সিংহ
একটু বেশ ফ্যাসাদেই পড়ে গেছে চম্পাকলি। ছোট্টুবুড়ি তাকে বেশ ফ্যাসাদে ফেলেছে। ছোট্টুবুড়ি তাদের গ্রামেরই। ছোট্টুবুড়ি তার আসল নাম নয়। কিন্তু সবাই তাকে ছোট্টুবুড়ি বলেই ডাকে। ছোট্টুবুড়ি হচ্ছে ছোট্টুলালের মা।
ছোট্টুবুড়ি একদিন এক বিকেলে চম্পাকলির কাছে এসেছিল। দশটা একশ টাকার নোট নিয়ে এসে বলেছিল, এই এক হাজার টাকাটা রাখো গো দিকিন। দু মাস পরে আমি ফেরত নে যাব।
চম্পাকলি সরল মনে টাকাটা রেখে দিয়েছিল। ভেবেছিল, ছোট্টুবুড়ির বাড়িতে হয়তো টাকাগুলি রাখতে অসুবিধা হচ্ছে। আর ছোট্টুবুড়ি যখন তাকে বিশ্বাস করে টাকাগুলি রাখতে এসেছে তখন তো ছোট্টুবুড়ির কথার একটা মর্যাদা রাখতেই হয়। টাকাগুলি সে যত্ন করে ট্রাঙ্কের নিচে রেখে তালাচাবি মেরে রেখেছিল। ভেবেছিল ছোট্টুবুড়ি যখনই ফেরত নিতে আসবে তখনই দিয়ে দেবে।
চম্পাকলির ছেলে রতললাল ট্রাক গাড়ি চালায়। রতনলালের সবসময় কিছু একশ টাকা নোটের প্রয়োজন হয়। ট্রাক গাড়ি চালাতে গিয়ে কোথায় কোথায় জানি গেট-পাস হিসেবে হাতে হাতে একশ টাকা গুঁজে দিতে হয়। তাই চম্পাকলি ছেলেকে দুটো পাঁচশ টাকা নোটের বদলে ছোট্টুবুড়ির একশ টাকার নোটগুলি দিয়ে দেয়।
তারপর দু মাস কেটে গেছে। একদিন ছোট্টুবুড়ি চম্পাকলির কাছে আসে তার টাকাগুলি ফেরত নিতে। চম্পাকলি দুটো পাঁচশ টাকার নোট বের করে দিয়ে দেয়। টাকাগুলি নেবার পরও কিন্তু ছোট্টুবুড়ির যাবার নামগন্ধ নেই, বসেই থাকে। শেষে চম্পাকলি জিজ্ঞেস করে, আর কোনো কাজ আছে গো ? ছোট্টুবুড়ি ফোঁকলা দাঁতে একটু হেসে বলে, হ্যাঁ গা চম্পাকলি, হাজার টাকা তো ফেরত দিলে, তা হাজার টাকার দু মাসের সুদ যে দিলে না।
কথাটা শুনে আশ্চর্য হয়ে চম্পাকলি, বলল, কীসের সুদ বললে!
— সে কি গো। হাজার টাকা দু মাস নিয়ে রাখার সুদ গো। বাজার চলতি এক হাজার টাকার এক মাসের সুদ একশ হিসেবে দু মাসে সুদ হলো গিয়ে দুইশ টাকা। সে না হয় তুমি একটু কম করেই দিও দিকিন।
কথাগুলি শুনে চম্পাকলির গা জ্বলে উঠল, কুটিল বুড়ি কোথাকার ! নিজেই তো এসে আমার কাছে টাকাগুলি রাখলে, আমি কি তোমার কাছে টাকা চেয়ে নিয়েছি নাকি? যাও, তোমাকে আমি এক পয়সাও দেব না।
ছোট্টুবুড়িও জ্বলে উঠল, দেবে না ক্যানে ? আমি তোমায় একশ টাকার নোট দিয়েচি। তুমি নোটগুলি খরচ করে এখন পাঁচশ টাকার নোট দিচ্চ। সুদ যে দিতেই হবে গো।
এমন সময় সারাদিন ট্রাক চালিয়ে এক গ্লাস বাংলা গলায় ধেলে ক্লান্ত শরীরে রতনলাল বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে এইসব কাণ্ড-কথাবার্তা শুনে বিরক্ত হয়ে পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট বের করে ছোট্টুবুড়ির দিকে বাড়িয়ে ধরে সাষ্টাঙ্গে ছোট্টুবুড়িকে প্রণাম করে বললে, এটা নিয়ে আজ মুক্তি দাও গো বুড়িমা।
ছোট্টুবুড়ি পঞ্চাশ টাকার নোটটা নিয়ে চম্পাকলিকে বলে, তোমার ছেলে নেহাত ভাল মানুষ বলে গো আমি এখন চলে যাচ্চি।
ছোট্টুবুড়ি চলে যেতে থাকে। চম্পাকলি রাগে বলতে থাকে, কুটিল বুড়ি, জটিল বুড়ি। পঞ্চাশ টাকা সুদ খেয়ে তুই মর … মর।