লাইন (অনুগল্প)
সদানন্দ সিংহ
যেতে যেতে হরপ্রসাদের সাইকেলটা ব্রাস্ট মেরে দিল। সামনে-পিছে দু’কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সাইকেল-রিক্সা সারাইয়ের দোকান নেই। অতএব কী আর করে সে। সাইকেল ঠেলে এগিয়ে যেতে থাকে। এমনিতেই তার অনেক দেরী হয়ে গেছে। ঘন্টা খানেক পর সে এক সাইকেল-রিক্সা সারাইয়ের দোকান দেখল। সেখানে একজন লোক এক রিক্সার ব্রেক ঠিক করছে। সামনে আরো কয়েকটা রিক্সা দাঁড়ানো।
সাইকেলটাকে দাঁড় করিয়ে সে লোকটিকে বলল, ভাই আমার সাইকেলের পেছনের টিউবটা সারাই করে দেবে?
লোকটা হরপ্রসাদকে একনজর দেখে বলল, কী সমস্যা ?
হরপ্রসাদ বলল, হঠাৎ ফেটে গেল।
লোকটা সাইকেলটা নিরীক্ষণ করতে করতে বলল, সারাই করা যাবে কিনা বলতে পারছি না, দেখতে হবে। হয়তো নতুন টিউব লাগতেও পারে।
হরপ্রসাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল, পকেটে তার টিউব কেনার মত টাকা এখন নেই। এদিকে আরও তাড়াতাড়ি ছ’ কিলোমিটার পথ তাকে অতিক্রম করতে হবে। সবাই তার জন্যে অপেক্ষা করছে। তাই সে বলল, ভাই এখন টিউব কেনার মত টাকা পকেটে নেই। তুমি যে করেই হোক, জোড়াতালি মেরে ঠিক করে দাও।
— জোড়াতালি মেরে হবে কিনা বলতে পারছি না, দেখতে হবে। তবে অপেক্ষা করতে হবে। আপনার আগে লাইনে আরো তিনটে রিক্সা আছে।
জবাব শুনে হরপ্রসাদ একটা ঢোক গিলে বলল, ভাই আমার খুব তাড়া। পিসিমা মারা গেছেন। মুখে জল দিতে যাচ্ছি, সবাই আমার জন্যে অপেক্ষা করে আছে।
লোকটা হরপ্রসাদের কথা শুনে একটু হাসল। তারপর বলল, যিনি গেছেন তিনি তো উদ্ধার হয়েছেন। যারা যায়নি তাদের নিয়েই তো যত সমস্যা, চাল আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায় তাদের। এই যে দেখুন, রিক্সা নিয়ে যারা দাঁড়িয়ে আছে তারা রিক্সা ঠিক করেই বেরিয়ে পড়বে যাত্রীর সন্ধানে। যাত্রী না পেলেও মালিককে কিন্তু রিক্সার ভাড়াটা দিতে হবে। আর লাইনে তো শ্মশানে গেলেও দাঁড়াতে হয়। এবার দাদা আপনিই বলুন, আমি কী করব ?
হরপ্রসাদ এর সঠিক জবাব জানে না। তবে লাইনে দাঁড়ানোটাই শ্রেয় মনে করল।