অভিজিৎ চক্রবর্তীর কবিতা

অভিজিৎ চক্রবর্তী

চাঁদ বিষয়ক


জীবনে চাঁদের আভা নিয়ে দুঘণ্টা লেকচার দিয়ে গেল দুধওলা
চাঁদের শরীরে সোনা না লোহা এ নিয়ে উত্তেজিত পাড়ার ক্রিকেট
ল্যান্ডার বিক্রম নিয়ে কথা বলতে বলতে আবর্জনা নিয়ে ফিরে গেল যে মহিলাটি
তারও চোখে মুখে টুকরো টুকরো চাঁদের কণা

আমি নামতে পারছি না কোথাও
ক্রমশ ওজন কমে যাচ্ছে
হাল্কা বায়বীয় হয়ে উপরে উঠে যাচ্ছি
তুমুল চিৎকার ওঠে মাঝে মাঝে
কোথা থেকে ঠিক বুঝতে পারছি না
মাথার উপর কালো আকাশ নিচে এবড়ো খেবড়ো জমি
পৃথিবীকে চাঁদ বলে মনে হচ্ছে এখন


যেদিকে তাকাই ঠিকরে পড়ছে আলো
চিনতে পারছি না কাউকে
যার দিকে তাকাই কেবল সাদা সাদা কালা কালা
হাসছে সবাই
আলো আঁধারিতে মনে হচ্ছে কোনো এক জেব্রা শহরে অনাবশ্যক ঢুকে পড়েছি আমি
রাস্তা পার হচ্ছি

সারাটা জীবন ধরে রাস্তা পার হচ্ছি


ফর্সা হয়ে যাচ্ছে সব
তোমার কোমর, উরুসন্ধি পার হয়ে রকেট গেছে মহাশূন্যে

এত অন্ধকার, কিছুই দেখতে পারছি না
দূরে দূরে স্টেশন
মুছে যাওয়া আলো

একটু আগে যে ফরসা হচ্ছে বলে মনে হল
সে কি বিভ্রম
কে জানে

সুন্দরী, ভ্রম তো তোমার মুখের কালো দাগ
যাতে পারফেক্ট ল্যান্ডিং করব বলে চির কাল অপেক্ষা করে আছি


ফিজিক্স জানে পাড়ার কাকিমাও
সবকিছু অন্ধকার হলে
রকেটে হাত রেখে চলে যান উপরে
মহাবোধি লাভ এভাবেই হয়

তবু সবদিন সমান নয়,
নারিকেল গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগতেই
উড়ে যায় বক–
পতনের দৃশ্যও কত সুন্দর 

পৃথিবীর এই সব অত্যাশ্চর্য ঘটনা রোজ ঘটে
মাঝরাতে কখনো গ্র্যাভিটি কাজ করে না
শূন্যে ভাসতে ভাসতে আমি কবি, শহরের উপর থেকে ঘরে ঘরে একই দৃশ্য দেখি

ভোরবেলা খিক খিক হাসতে হাসতে এসব দু পায়ে মাড়িয়ে বাজারদর নিয়ে কথা বলে হোটেল ফেরত গৃহিণীরা


আমাদের আলো দেয় মামা
আমাদের আলো নেয় মামা

আমাদের মামাদের কথা
বাবাও জানে না, জানে মামা

আমাদের মামাদের নাম
ক্ষণে ক্ষণে বেড়ে যায় দাম

তবু যদি করো বদনাম
সুয্যি নয়, চাঁদমামা নয়

আজ থেকে বদলে দিলাম
রাকেশ রোশন রাখলাম


বিশ্বযুদ্ধের পর বোঝা গেল চাঁদ খুব দরকারি বিষয়
ক্ষমতা বা বিনিয়োগ চাইলে এর বিকল্প নেই

ফল : চাঁদের গায়ে একটা একটা করে লেগে যায় আরো আরো চাঁদ

সেসব চেঁছে তুলতে গিয়ে বহুযুগ পরে
আমাদের তাত্ত্বিকেরা দেখেন ওপিঠে যেমন, তেমনই অন্ধকার 

এ নিয়ে তবু আমাদের তৃতীয় বিশ্বে তেমন মাথাব্যথা ছিল না কারো

কিন্তু যুদ্ধহীন সময়ে মাঝে মাঝেই গভীর রাতে শহরবাসীরা দেখে
দিন দিন চাঁদের তলায় ক্ষুধার্ত অথবা প্রেমে আঘাত পাওয়া
বেকার অথবা নির্বোধ
যুবকের সংখ্যা বেড়ে যায়

আমাদের বুদ্ধিজীবীরা যদিও একে চন্দ্রদোষ আখ্যা দেন
আমরা একে আদর করে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো বলি 

বলাবাহুল্য, যুদ্ধ একটি দরকারি শিল্প
এতে বেকার যেমন কমে
কবিতার সংখ্যা বেড়ে যায়

যুদ্ধফেরত হাতভাঙা পা কাটা সৈনিকদেরই আমরা সুররিয়াল নামে ডাকি