লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণ – সদানন্দ সিংহ

লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণ

সদানন্দ সিংহ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ২০২৪ সালের প্রথম দিন লাক্ষাদ্বীপ সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সোসিয়্যাল মিডিয়ায় পোস্টিং দেওয়ার পর মালদ্বীপ সরকারের তিন মন্ত্রী এবং কিছু নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অশালীন মন্তব্য করেছিল। তাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতের বিক্ষুব্ধ জনতা মালদ্বীপকে বয়কটের একটি প্রচারণা চালায় এবং লাক্ষাদ্বীপকেও মালদ্বীপের সাথে তুলনা করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে বিতর্ক হয়েছিল, সেখানে এমন কথাও বলা হয়েছিল যে লাক্ষাদ্বীপ পর্যটনকে ভারতীয় নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তারপর থেকে, দেশে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক মানুষ লাক্ষাদ্বীপ সম্পর্কে জানতে বা লাক্ষাদ্বীপে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
তারপর এমন খবরও প্রকাশিত হচ্ছে যে লাক্ষাদ্বীপের সমস্ত হোটেল-রিসোর্ট-কটেজে নাকি এখন রিজার্ভেশান পাওয়া যাচ্ছে না, বুকড দেখাচ্ছে। এটা সত্যি যে এই দ্বীপের সৌন্দর্য মালদ্বীপের চেয়ে কিছুমাত্র কম নয় এবং অনেকেই লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণে এখন খুব আগ্রহী। তবে লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণ করতে গেলে প্রথমত আপনার যে ব্যাপারগুলি জানা দরকার এবং যা আপনাকে করতে হবে তা নিচে একে একে উল্লেখ করা হচ্ছেঃ-
লাক্ষাদ্বীপের অবস্থান
লাক্ষাদ্বীপ ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এবং ভারতের একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। লাক্ষাদ্বীপ হল ৩৬টি দ্বীপের এক সমষ্টি। সংস্কৃত লক্ষ শব্দ থেকে লাক্ষা কথাটি এসেছে, অর্থাৎ এক লক্ষ দ্বীপের সমষ্টি বলে ধারণা হওয়ার জন্যই নাকি লাক্ষাদ্বীপের নাম এসেছে। এখানকার সৌন্দর্য অপরিসীম । মলদ্বীপের পরিবর্তে লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণ আপনাকে সত্যিই এক অপূর্ব অনুভূতির দিকে নিয়ে যাবে এবং ভ্রমণের খরচও মলদ্বীপের চারভাগের একভাগ।
পারমিট
লাক্ষাদ্বীপে ঢুকতে গেলে লাক্ষাদ্বীপের অধিবাসী, সরকারি কর্মচারিবৃন্দ, সেনাবাহিনির লোক এবং তাদের পরিবার ছাড়া সবার জন্য পারমিট লাগে। এই পারমিট অনলাইন এবং অফলাইনে সংগ্রহ করা যায়। অনলাইনে পারমিট করার জন্যে এই https://epermit.utl.gov.in/ সাইটে গিয়ে ইমেইল, মোবাইল নাম্বার, ঠিকানা দিয়ে রেজিস্ট্রি করতে হয়। ভারতে আসার একমাত্র ট্যুরিস্ট পাসপোর্ট থাকলে বিদেশীরাও এখানে যেতে পারে। অফলাইনে পারমিট নিতে গেলে কেরালার কোচি বিমানবন্দরে পারমিট নেওয়ার সুবিধা আছে। এছাড়া কোচিতে অবস্থিত লাক্ষাদ্বীপ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিস থেকেও পারমিট নেওয়া যায়। সেজন্যে আইডি প্রমাণপত্র এবং এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ফটো লাগে। পারমিট ফি ৩০০টাকা, তবে অফলাইনে নিলে অতিরিক্ত আরও ৩০০টাকা গ্রিন ট্যাক্স হিসেবে দিতে হয়। তবে কোনো প্যাকেজের মাধ্যমে লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণে গেলে যারা ট্যুর কন্ডাক্ট করে তারাই পারমিটের ব্যবস্থা করে দেয়।
কীভাবে যাবেন 
আপনি যেখানেই থাকুন না কেন প্রথমে আপনাকে কোচি পৌঁছাতে হবে। যার জন্য আপনি ট্রেন, বাস বা প্লেনের সাহায্য নিতে পারেন এবং কোচির পরেই আপনি লাক্ষাদ্বীপে যাত্রা শুরু করতে পারেন। ভারতের কোনো অংশ থেকে লাক্ষাদ্বীপে যাওয়ার কোনো সরাসরি পথ নেই। লাক্ষাদ্বীপ কেরালার কোচি থেকে প্রায় ৪৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কোচি থেকে লাক্ষাদ্বীপে পৌঁছানোর জন্য অনেকগুলি পরিবহনের মাধ্যম রয়েছে। তবে আপনাকে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি লাক্ষাদ্বীপে কোন জায়গায় যেতে চান। কোচি থেকে লাক্ষাদ্বীপ যেতে পারেন বিমান এবং জল উভয় পথে। কোচি বিমানবন্দর থেকে লাক্ষাদ্বীপের আগত্তি এবং বাঙ্গারাম যাবার জন্য ফ্লাইট আছে। এই ফ্লাইটে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। জলপথে যাত্রা বেশ দীর্ঘ এবং টিকিটও আগে থেকে বুক করতে হয়। এই যাত্রায় প্রায় ১০ থেকে ১৪ ঘন্টা সময় লাগে। কিছু জাহাজ রাতে ভ্রমণ করে পরদিন সকালে লাক্ষাদ্বীপে পৌঁছায়। লাক্ষাদ্বীপে পৌঁছে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যেতে জলপথে যেতে হয়। ভ্রমণের সবচেয়ে ভাল সময় হল অক্টোবর থেকে মে মাস। এই সময়ের মধ্যে এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে যাবার জন্যে স্পীড বোট পাওয়া যায়। সেইসময় আগত্তি থেকে কাভারত্তি যাবার হেলিকপ্টার সাভির্স পাওয়া যায়। মনে রাখা দরকার যে সিজন ছাড়া লাক্ষাদ্বীপে এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে যাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধে হতে পারে। কেরালার কোচিন বন্দর থেকে লাক্ষাদ্বীপের বিভিন্ন দ্বীপে জলপথে যাবার জন্যে সাতটি জাহাজ (MV Kavaratti, MV Arabian Sea, MV Lakshadweep Sea, MV Lagoon, MV Corals, MV Amindivi and MV Minicoy) আছে এবং জাহাজের টিকিট কাটার জন্যে অনলাইনে এই https://lakport.utl.gov.in/Home.aspx সাইটের মাধ্যমে বুক করতে পারেন। অবশ্য মুম্বাই থেকেও জাহাজে লাক্ষাদ্বীপ যাওয়া যায়, তবে দূরত্ব অনেক বেশি এবং সময়ও নেয়, ফলে সাধারণত সেপথে পর্যটকেরা যেতে পছন্দ করেন না।
কোথায় যাবেন
লাক্ষাদ্বীপে ট্যুরিস্ট ভারতীয় নাগরিক শুধুমাত্র অগাত্তি, বাঙ্গারাম, কাভারত্তি, কদমত, কালপেনি এবং মিনিকয় — এই ছ’টি দ্বীপে যেতে পারে। বিদেশী নাগরিকেরা আগত্তি, বাঙ্গারাম এবং কদমত — এই তিনটি দ্বীপে যাবার পারমিট পায়। এছাড়া উপরোক্ত দ্বীপগুলির কাছাকাছি যে জনহীন ছোট্ট দ্বীপগুলি আছে তার কিছু দ্বীপেও ঘোরার ব্যবস্থা আছে।

বাঙ্গারাম
বাঙ্গারাম হল একটি ছোট টিয়ারড্রপ আকৃতির দ্বীপ, যা আগত্তি এবং কাভারত্তির খুব কাছাকাছি অবস্থিত। এই দ্বীপের ভ্রমণ আধুনিক জীবনের চাপ এবং উত্তেজনা থেকে মুক্তির এক আশ্চর্যজনক সুযোগ প্রদান করে। একই উপহ্রদ দ্বারা ঘেরা থিন্নাকারা এবং পারালীর দুটি ছোট দ্বীপও বাঙ্গারামের কাছে অবস্থিত। রাতের বেলায়, প্রবাল বালিতে উপকূলে ধোয়া ফসফরেসেন্ট প্ল্যাঙ্কটন সমুদ্র সৈকতে একটি নীল আভা দেয়, যা সম্পূর্ণরূপে মনোমুগ্ধকর। এখান থেকে অগাত্তি স্পীডবোটে বা হেলিকপ্টারে যাবার সুবিধা আছে। লাক্ষাদ্বীপের একমাত্র জনবসতিহীন দ্বীপ হওয়ায় এটি তার নিজস্ব সৌন্দর্যে বিভূষিত। বিচক্ষণ পর্যটকদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য। বাঙ্গারাম আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে তার উপস্থিতি খোদাই করে নিয়েছে।

অগাত্তি
লাক্ষাদ্বীপের অন্যতম সুন্দর উপহ্রদ রয়েছে অগাত্তিতে। বিমানবন্দরটি এই দ্বীপে নির্মিত। বিমান থেকে অবতরণের জন্য এই দ্বীপের কাছে আসার সাথে সাথে দ্বীপের এয়ারস্ট্রিপের একটি শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য পাওয়া যায়। অগাত্তি হল লাক্ষাদ্বীপের ভার্চুয়াল গেটওয়ে। এখানে সকল আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত পর্যটন কমপ্লেক্স আছে। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস অগাট্টিতে ফ্লাইট পরিচালনা করে, তাই এটিকে লাক্ষাদ্বীপের সবচেয়ে অ্যাক্সেসযোগ্য দ্বীপগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে।

কদমত
কদমত ৮ কিমি দীর্ঘ এবং এর বিস্তৃত বিন্দুতে মাত্র ৫৫০ মিটার চওড়া। পশ্চিমে সুন্দর অগভীর উপহ্রদ আছে, যা জলক্রীড়ার জন্য আদর্শ জায়গা। পূর্ব দিকে একটি সরু লেগুন রয়েছে। প্রধান আকর্ষণ হল দীর্ঘ বালুকাময় সৈকত এবং দক্ষিণ প্রান্তে বালির তীর। লেগুনের মুখোমুখি পাম গ্রোভের মধ্যে নির্মিত পর্যটক কুঁড়েঘরগুলি বাস্তুতন্ত্রের এক সৌন্দর্যে মুগ্ধ করে দেয়। কায়াক, পালতোলা নৌকা, প্যাডেল বোট, স্কিইং বোট এবং কাচের তলার নৌকা ভাড়ায় পাওয়া যায়। দ্বীপে একটি ওয়াটার স্পোর্টস ইনস্টিটিউট কাজ করে। সামুদ্রিক সম্পদ সচেতনতা প্যাকেজে পরিপূর্ণ প্রকৃতির সমৃদ্ধ অনুগ্রহ উপভোগ করে দ্বীপে কয়েকদিন কাটানো কোনো ব্যাপারই না। কদমত ভারতের অন্যতম সুন্দর ডাইভ সেন্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। জলের ২০-৫০ মিটার নিচে  হাঙ্গর এবং স্বচ্ছ জলের মতো বিভিন্ন ধরণের মাছ দৃশ্য হয় বলে এটিকে স্কুবা ডাইভারদের জন্য একটি অতুলনীয় ডাইভ গন্তব্য করে তুলেছে। মুম্বাইয়ের মেসার্স ল্যাকাডিভস কদমতে একটি পূর্ণাঙ্গ স্কুবা ডাইভিং সেন্টার পরিচালনা করে। বিদেশীদের এই দ্বীপে যাওয়ার অনুমতি নেই।

মিনিকয়
মিনিকয়, এক অর্থে, দ্বীপগুলির প্রধান গ্রুপ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং উত্তর গ্রুপ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এটি ১০.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। মিনিকয়ের দক্ষিণ দিকে একটি ছোট জনবসতিহীন দ্বীপ Viringili সহ বৃহত্তম উপহ্রদ এখানে রয়েছে। মিনিকয় তার সংস্কৃতি, ভাষা, পোশাক ইত্যাদিতে উত্তরের দ্বীপের গোষ্ঠী থেকে আলাদা। এটির ১১টি গ্রামের একটি ক্লাস্টার রয়েছে, যেগুলিকে “আভা’ বলা হয়, প্রতিটির সভাপতিত্ব করেন বোদুকাকা নামে একজন নির্বাচিত গ্রামের প্রবীণ। ঐতিহ্যগতভাবে গ্রামের বিষয়গুলি পরিচালনার সমস্ত ক্ষমতা তাঁর হাতে ন্যস্ত। প্রতিটি গ্রামে একটি গ্রামের বাড়ি রয়েছে যা সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং সজ্জিত। মিনিকয় তার ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের জন্য বিখ্যাত লাভা নাচ উৎসব অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়। “জাহাধনি” নামক রঙিন রেসের নৌকা যে কোনো পর্যটকের চোখে পড়ে। এই দ্বীপের বিপুল সংখ্যক পুরুষ সারা বিশ্বে জাহাজে নাবিক হিসাবে নিযুক্ত হন। মাহি হল এখানকার ভাষা। মিনিকয় টুনা মাছ ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং দ্বীপে একটি টুনা-ক্যানিং কারখানা মাছ ধরার প্রক্রিয়াজাত করে। ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশদের দ্বারা নির্মিত একটি ৩০০ ফুট লম্বা বাতিঘর হল এক মহিমান্বিত ল্যান্ডমার্ক। সমুদ্র সৈকতে স্নানের কুঁড়েঘর রয়েছে যেখানে চেঞ্জ রুম রয়েছে এবং জলক্রীড়ার সুবিধা রয়েছে। পর্যটকদের থাকার জন্য ৩টি পর্যটন কটেজ এবং একটি ২০ শয্যা বিশিষ্ট ট্যুরিস্ট হোম নির্মাণ করা হয়েছে।

কাভারত্তি
কাভারত্তি হল প্রশাসনের সদর দপ্তর এবং সবচেয়ে উন্নত দ্বীপ। দ্বীপ জুড়ে বাহান্নটি মসজিদ আছে। সবচেয়ে সুন্দর হল উজরা মসজিদ। মসজিদের কাছাকাছি একটি কূপের জলে নিরাময় ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়। সুন্দর এবং শান্ত উপহ্রদটি জলক্রীড়া, সাঁতার এবং স্নোরকেলিংয়ের জন্য একটি আদর্শ স্থান। সূর্যস্নান বা সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়ানো একটি মনোরম অভিজ্ঞতা হতে পারে। সামুদ্রিক জীব নিয়ে উৎসাহীরা সামুদ্রিক অ্যাকোয়ারিয়ামে যেতে পারেন, যেখানে সামুদ্রিক প্রজাতির একটি চমৎকার সংগ্রহ রয়েছে। উপহ্রদগুলিতে বহু রঙের জলের নীচের জীবন কাঁচের নীচের নৌকাগুলির মাধ্যমে দেখা যায়। কায়াক, উইন্ড সার্ফার এবং পালতোলা নৌকা ভাড়ায় পাওয়া যায়। যারা স্কুবা ডাইভ পছন্দ করেন তাদের জন্য ডলফিন ডাইভ সেন্টার একটি আকর্ষণ। ‘কোরাল রিফ’ এবং ‘তারাতাশি’ ট্যুরিস্ট প্যাকেজগুলির মাধ্যমে প্রবাল স্বর্গ দেখে নেওয়া যেতে পারে।

ট্যুর প্যাকেজ

লাক্ষাদ্বীপ সমুদ্রম ট্যুর প্যাকেজটি একটা ভাল প্যাকেজ। এম.ভি কাভারত্তি জাহাজের মাধ্যমে এটা একটি পাঁচ দিনের ক্রুজ যা জাহাজে করে কাভারত্তি, কালপেনি এবং মিনিকয় দ্বীপপুঞ্জ পরিদর্শন করানো হয়। দ্বীপভ্রমণ দিনের বেলায়, সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ এবং উপকূলে জলখাবার দিয়ে আয়োজন করা হয়। জাহাজে চড়ে রাত কাটানোর ব্যবস্থা হয়। এমভি কাভারত্তিতে ১৫০টি ডায়মন্ড ক্লাসের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। দিনের সফরে সাঁতার, স্নোরকেলিং এবং অন্যান্য জলক্রীড়ার  ব্যবস্থা করা হয়। ১ বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত শিশুদের শিশু হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রথম দিন বিকেল তিনটা থেকে সফর শুরু হয় কেরালার কোচি থেকে। দ্বিতীয় দিন মিনিকয়। তৃতীয় দিন কাভারত্তি। চতুর্থ দিন কালপেনি। পঞ্চম দিন সকাল এগারোটায় কোচি। খরচ পড়ে ডাইমন্ড ক্লাসে জন প্রতি ৩৭৫০০ টাকা, শিশুদের ৩৩০০০ টাকা। আর গোল্ড ক্লাসে জন প্রতি ২৮৫০০ টাকা, শিশুদের ২৫৫০০ টাকা। এছাড়াও কিছু প্রাইভেট কোম্পানি রয়েছে যারা ট্যুর প্যাকেজ প্রদান করে এবং তাদের প্যাকেজের মূল্য জনপ্রতি ১৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে।
সোয়িং পাম প্যাকেজ হচ্ছে মিনিকয় দ্বীপে ছয়/সাত দিনের সফর। সমুদ্র সৈকতে নির্মিত A/c কটেজ এবং অন্যান্য স্বতন্ত্র কটেজগুলিতে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। যাত্রা হয় M.V Arabian sea, M.V Lakshadweep sea, M.V. Minicoy, M.V. Amindivi এবং M.V Kavaratti জাহাজের মাধ্যমে।
তারাতাশি প্যাকেজ ট্যুরে লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসনিক রাজধানী কভারত্তি দ্বীপে চার/পাঁচ দিনের থাকার ব্যবস্থা আছে। সাঁতার কাটা, স্নরকেলিং, কাঁচের তলায় স্কুবা ডাইভ লেগুন ক্রুজ এবং অন্যান্য জল খেলার অফার রয়েছে এবং এটি আপনার ছুটিকে স্মরণীয় করে তুলতে পারে। দ্বীপে থাকার জায়গাটি সৈকতের সামনে পর্যটকদের কুঁড়েঘরে রয়েছে।
সামুদ্রিক সম্পদ সচেতনতা প্রোগ্রাম-এর দ্বারা অগাত্তি দ্বীপ হয়ে ফ্লাইটে কদমত দ্বীপ এসে ৪-৭ দিনের প্যাকেজে সামুদ্রিক সম্পদ সচেতনতা কর্মসূচী প্রোগ্রামে সামুদ্রিক জীবনের সমৃদ্ধি এবং সৌন্দর্য অনুভব করা যেতে পারে। এই দ্বীপে ২-৫টি মজায় ভরা দিন কাটিয়ে, বাকি দিনে অন্যখানে ভ্রমণ করা যায়। সাঁতার কাটা, স্নোরকেলিং এবং কায়াকিং ওয়াটার স্পোর্টসের অন্তর্ভুক্ত। কদমতে একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়াটার স্পোর্টস ইনস্টিটিউট চালু আছে। এখানে আরও দুঃসাহসী স্কুবা ডাইভিং, উইন্ড সার্ফিং এবং প্যারা সেলিং ইত্যাদিতে লিপ্ত হতে পারেন।

থাকার জায়গা 

এখানে থাকার জন্যে কটেজ, রিসোর্ট, তাঁবু আছে। কিছু হোটেলও আছে। আগে থেকে বুক করে গেলে অসুবিধেয় পড়তে হবে না। কটেজগুলির বা রিসোর্টের ভাড়া সিজন টাইমে ১০% বেড়ে যায়। এখানে এক জায়গায় থেকে সব জায়গায় ঘোরা একটু কষ্টকর। এখানে এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে যেমন মিনিকয় থেকে কালপেনি বা কালপেনি থেকে কদমত জলপথে ভাড়া জনপ্রতি ৩০০০/৪০০০ টাকা লাগে। বাঙ্গারামের কটেজ ভাড়া ডাবল/সিঙ্গেল রুম ১৮০০০ টাকা, অতিরিক্ত লোক ৮৫০০ টাকা। থিন্নাকারায় তাঁবুতে থাকার খরচ ডাবল ১০০০০ টাকা, সিঙ্গেল ৮০০০ এবং অতিরিক্ত লোক ৪০০০ টাকা। কভারত্তি রিসোর্টে থাকার খরচ স্যুইট রুম ১১০০০ টাকা, অতিরিক্ত লোক ৪০০০ টাকা। কদমতে রিসোর্টে থাকার খরচ নিম্নরূপঃ-
এসি সুপার ডিলাক্স রুম ডাবল ১১০০০ টাকা, সিঙ্গেল ৮০০০ টাকা, অতিরিক্ত লোক ৫০০০ টাকা। এসি ডিলাক্স রুম ডাবল ৯০০০ টাকা, সিঙ্গেল ৬০০০ টাকা, অতিরিক্ত লোক ৪০০০ টাকা। এসি স্ট্যান্ডার্ড রুম ডাবল ৭০০০ টাকা, সিঙ্গেল ৫০০০ টাকা, অতিরিক্ত লোক ৩৫০০ টাকা। নন এসি রুম ডাবল ৫০০০ টাকা, সিঙ্গেল ৩০০০ টাকা, অতিরিক্ত লোক ২৫০০ টাকা।
ট্যুর প্যাকেজ, রিসোর্ট, কটেজ, তাঁবু ইত্যাদি বুক করার জন্যে এই সাইট দেখতে পারেনঃ- https://samudram.utl.gov.in/sprt_Packages.aspx
এছাড়াও আছে আগাত্তি আইল্যান্ড বীচ রিসোর্ট, সীগেট হলিডে হোম, কাশিমস হোম স্টে, মিস্টিক মিডোজ সুইস কটেজ, কালাপেনি ট্যুরিস্ট হাট, সী শেল বীচ রিসোর্ট ইত্যাদি। এসব জায়গায় ৮০০০ টাকা থেকে ১০০০০ টাকার মধ্যে ঘর পাওয়া যায়।

সংযোজন 

লাক্ষাদ্বীপের তিনটি দ্বীপ ঘোরার জন্য কমপক্ষে ৪/৫ দিন দরকার এবং সেই মতো প্ল্যান করা দরকার। সুতরাং পাঁচটি দ্বীপ দেখতে গেলে আরো বেশি সময়ের প্রয়োজন। এখানে খাবার খরচ জন প্রতি কমপক্ষে একদিনে ১০০০ টাকা লাগে। খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে আমিষভোজীদের একটু অসুবিধে হতে পারে। তবে সী ফুড সবখানে পাওয়া যায়। আর ইন্টারনেট সব জায়গায় উপলব্ধ নয়। সেজন্যে নেট সার্ফিং এবং অনলাইন পেমেন্ট-এর সুবিধা সব জায়গায় পাওয়ার সম্ভবনা নেই। তাই পকেটে ক্যাশ নিয়ে চলা উচিত।