বিশ্বজিতের স্বপ্ন (অনুগল্প)
সদানন্দ সিংহ
আর মাত্র কিছু পোঁচ। বড় জোর আধ ঘন্টার কাজ। কাজ শেষ হলেই সে মানে বিশ্বজিৎ বাড়ি চলে যাবে সন্ধ্যের আগেই। ইচ্ছে আছে বাড়ি গিয়ে ছেলে-মেয়ে-বৌকে নিয়ে ওরা চারজনে হেরিটেজ পার্কে একটু সময় কাটাবে। তাই তাড়াতাড়ি হাত চালায় সে। এবং অনুমান মতো আধা ঘন্টার আগেই হাতের কাজ শেষ হয়ে যায়।
বিশ্বজিৎ রংমিস্ত্রি। সাতদিন ধরে সে এখানে এই ফ্ল্যাটবাড়ির এক ঘরের দেয়াল রং করছে। আজ কাজ শেষ করে সে সব কিছু গুছিয়ে রেখে ঘরের মালিকের কাছে গিয়ে বলে, “বাবু, কাজ শেষ করে আমি সমস্ত ধুয়ে গুছিয়ে রেখে দিয়েছি। আবার আমাকে বিদেয় করে দিন।” ঘরের মালিক বিশ্বজিতের কাজ খুঁটিয়ে দেখার পর খুশি হন। বিশ্বজিতের সমস্ত পাওনা-গণ্ডা হিসেব নিকেশ করে মিটিয়ে দেন।
তবু বিশ্বজিৎ দাঁড়িয়েই থাকে। মালিক একটু অবাক হয়, “কিছু বলবে?”
— হ্যাঁ।
— বল।
— বলছিলাম কি, এইটুকু রং রয়ে গেছে, তা দু’শ-আড়াই’শ গ্রামের মতো হবে। ওটা তো এমনিই শুকিয়ে যাবে। ওটা কি আমি নিয়ে যাব?
ঘরের মালিক একটু আশ্চর্য হয়, ওটা দিয়ে কী আর করবে! নাও, নিয়ে যাও।
— আমার এক কাজে লাগবে বাবু। বলে বিশ্বজিৎ একটা খালি রঙের কৌটোতে ওইটকু রংটা নিয়ে বাড়ির পথ ধরে।
কেউ জানে না, বিশ্বজিৎ বাড়িতে একটু একটু করে বিভিন্ন রং জমিয়ে যাচ্ছে এক বড় রঙের বালতিতে। রংগুলি যাতে জমে না যায়, সেজন্যে সে প্রতিদিন বালতিটা নাড়াচাড়া করে, প্রয়োজনে কিছু জলও মেশায়। তার আশা, একদিন বালতিটা বিভিন্ন রঙের এক ককটেল হয়ে ভরে যাবে। সেদিন এই বালতির রঙের চেহেরাটা কী হয়ে দাঁড়াবে সেও এখন জানে না। তবে সেই রং দিয়ে সে তার ঘরের দেয়ালের আকাশটা রঙিন করে তুলবে । আর সেই রঙিন আকাশে সে ছেলে-মেয়ে-বৌকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। বিশ্বজিতের এখন এটাই স্বপ্ন। খুবই ছোট্ট, কিন্তু বিশাল।