অদ্ভুত আঁধার – সুজাতা ভৌমিক

অদ্ভুত আঁধার         (অনুগল্প)

সুজাতা ভৌমিক

জলের মধ্যে বাস ছিল আমার। যেখানে ছিল শ্যাওলা, জলজ আগাছা, কিছু জলের পোকা, আর ছিল ছোট-বড় নানান মাছ। আমি যে ঠিক কোন দলের অন্তর্গত ছিলাম তা বলে বোঝাতে পারবো না। অপ্রয়োজনীয় জিনিসের সঙ্গে মিলে মিশে আমার জীবন কাটছিল বেশ মন্দ নয়। ভালো থাকার একটা উপায় খুঁজে পেয়েছিলাম। সেইমত জড়িয়েও পড়েছিলাম অনেক অকাজ ও কুকর্মের মধ্যে। ওটাই ছিল তখন আমার জীবন। বেঁচে থাকার নতুন ঠিকানা।
কোনো এক ঘটনা চক্রে আলাপ হলো একজনের সঙ্গে। আবেগের তাড়নায় সব বলে ফেললাম তাকে। সেও দেবতার মত তার দু’হাত বাড়িয়ে দিল। তার আদর্শ, তার বাণী, ন্যায়-অন্যায় ও চিন্তা ভাবনার বর্ষণ হলো আমার ওপর। মুগ্ধ হয়ে মাথা পেতে সব শুষে নিলাম।
স্বপ্ন দেখালো। স্বপ্ন দেখলাম। এভাবে তো কেউ কোনোদিন আমার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। তাই আমার সব আকর্ষণ দিয়ে তাকে বাঁধার চেষ্টা করলাম। কিন্তু শঙ্কা ছিল মনে। এত ভালো কপালে সইবে তো! অনেকবার ভেবেছিলাম আবিলতাপূর্ণ জলের ওই জীবনটাই আমার জন্য ভালো। কিন্তু ভালো থাকা, ভালো হওয়া আর ভালো পাওয়ার লোভ আজ আমাকে জল থেকে ডাঙায় হাঁটতে শিখিয়েছে।
অদ্ভুত এক আঁধার নেমে এলো আমার জীবনে। আগলে রাখা হাত দু’খানি যেন ক্রমশ ক্ষয়ে গেলো দিন্তানের অস্তগামী সূর্যের মতো। অন্ধাকারে যেন হারিয়ে গেল আমার সেই স্বপ্নের দেবতা। তাই ঠিক আগের মতো শ্বাস নিতে পারছি না আর। ভালো হয়ে যে খারাপের সঙ্গে মিশতেও পারছি না। আর যাকে অবলম্বন করে বাঁচতে চেয়েছি সেও আমার ভরসার মাস্ক খুলে নিয়েছে। আজ আর এখন সে আমাকে আপন করতে চায় না। আমাকে মানতে চায় না তার সমাজ। পরিবার।
ঘটনাটা ঠিক এরকম ঘটল- প্রথমে ট্রেনিং দিয়ে জিওল মাছ করা হল। তারপর অনুপ্রাণিত করা হল জল থেকে ডাঙায় উঠে আসার জন্য। এরপর সেই জল থেকে তুলে ছেড়ে দেওয়া হল নিঃসঙ্গ এক আলোকবর্ষ দূরে। সেখানে আর এক কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। প্রমাণ করতে হবে আমি জিওল মাছে পরিণত হয়েছি কি না!
অদ্ভুত আঁধারে জলের আলপনা আঁকে আমার মন একা একা মনের গভীরে…ঘুরে ঘুরে। হয়ত সেখানে তল পাবে না আআমার মতো জিওল মাছেদের তোমার নতুন কোন আলোর দিশা।