পরি – সদানন্দ সিংহ

পরি          (অনুগল্প)

সদানন্দ সিংহ

দশ মাসে বছর হয় না। কিন্তু ছোট্টুবাবুর হয়ে যায়। ছোট্টুবাবুর অনেক কিছুই হয়ে যায়। দিনটাকে কখনো রাত কিংবা রাতকে কখনো দিন।
চালচুলোহীন মানুষ সে, একা এক কুটিরে বসবাস করে। কোনো এক কালে ওর পূর্বপুরুষরা নাকি জমিদার ছিল। এখন সে কোনোদিন খায়, কোনোদিন খায় না।
গভীর রাতের জ্যোৎস্না রাতে সে নাকি পরিও দেখে। শনিতলার বিশাল বট গাছের ঝুরি বেয়ে নাকি পরিরা নামে গভীর রাতে।
ছোট্টুবাবু তক্কে তক্কে থাকে এক অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে, সুযোগমতো এবার যদি কোনো পরিকে পায় তাহলে সে পরিকে বুকে চেপে ধরবে আর পরির ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে গভীর চুম্বন করে অতৃপ্ত বাসনা মেটাবে।
তাই জ্যোৎস্না রাতের দ্বি প্রহরে সে প্রায়ই বট গাছের দিকে যায়। আগে সে পরিদের দূর থেকে দেখতো। তখন গা ছমছম করতো। এখন করে না। উলটে সে এখন পরিদের খুঁজে বেড়ায়। পরিদের দেখা পাওয়াও নাকি ভাগ্যের ব্যাপার। আকাশ থেকে নাকি এক লম্বা মইয়ের সাহায্যে এরা পৃথিবীতে নামে। খেলা করে।
অমাবস্যায় চাঁদ যখন অদৃশ্য হয়ে যায় তখন জ্যোৎস্নাও থাকে না। ছোট্টুবাবু সে সময় গভীর ভাবে ঘুমোয়। তারপর পূর্ণিমার চাঁদ উঁকি দিতে শুরু করলেই গভীর রাতে তার পরি খোঁজার কাজ শুরু হয়ে যায়।

অবশেষে একদিন এক গভীর রাতের জ্যোৎস্নায় সে সত্যিই দেখল বটগাছের ঝুরি ধরে এক পরি দাঁড়িয়ে আছে। কাছে যাবার পর বটগাছের আবছা অন্ধকারে সেই শাড়ি পরা পরিকে অপ্সরার মতো মনে হল তার। পরি তাকে দেখে যেন একটু আওয়াজ করে মৃদু হাসল। সে এগিয়ে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে পরির হাত ধরল। কোনো পরিকে চাক্ষুস দেখা এবং স্পর্শ করার এক উত্তেজনায় সে কাঁপছিল।
হঠাৎ সে এক ঝটকায় পরিকে বুকে টেনে পরির ঠোঁটে তার ঠোঁট বসিয়ে উন্মাদের মতো চুম্বন করতে লাগল। পরি প্রথমে কিছু না বললেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। তারপর পরি বলল, দু’শো টাকা দাও।